<p>শঙ্খ হচ্ছে শক্ত খোলসবিশিষ্ট একজাতীয় বড় আকৃতির সামুদ্রিক শামুক। এর বৈজ্ঞানিক নাম <u>Turbinella</u> <u>pzrum</u>। শুভ্রতা আর বিশেষ গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে শঙ্খ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলার লোকশিল্পের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অনন্য সাক্ষ্য শাঁখাশিল্পের মূল কাঁচামাল শঙ্খ। শঙ্খ কেটেই শাখা তৈরি করা হয়। হাতে পরিধেয় শঙ্খবলয় (শাঁখা) যেমন প্রত্যেক বিবাহিত হিন্দু নারীর সতীত্ব আর গৌরবের প্রতীক, শঙ্খধ্বনি তেমনি শুভ কাজের সূচনায় মঙ্গলবার্তা বয়ে আনে বলে হিন্দু মতে বিশ্বাস। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শঙ্খ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের আটটি পবিত্র চিহ্নের একটি হচ্ছে শঙ্খ। শঙ্খ দিয়ে অলংকার, বাদ্যযন্ত্র, ওষুধ ইত্যাদি তৈরি হয়।</p> <p>শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর চিহ্ন। পূজা-অর্চনা, পুত্রসন্তানের জন্ম, অন্নপ্রাশন, শ্মশানযাত্রা ইত্যাদির সময়ে শঙ্খধ্বনি করা হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পঞ্চপাণ্ডব ও শ্রীকৃষ্ণের ঠোঁটে শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়। দেবী দুর্গার হাতেও শঙ্খ শোভা যায়।</p> <p>বিভিন্ন পূজা-পার্বণ ও শুভ কাজের শুরুতে বিশেষভাবে কাটা শঙ্খের বাঁশি বাজানো হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে, নিত্যপূজার পরে যদি নিয়ম করে তিনবার শঙ্খ বাজানো যায়, তাহলে গৃহস্থের অন্দরে অশুভ শক্তির প্রভাব কমতে থাকে এবং শুভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ভাগ্যও ফিরে যায়। হিন্দু ধর্ম মতে, তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজানো উচিত নয়। তিনবার শঙ্খ বাজালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর (মহাদেব)—এই তিন দেবতার সঙ্গে সব দেব-দেবী আমন্ত্রিত হন; কিন্তু তিনবারের বেশি বাজালে দেবতাদের সঙ্গে দানব বা অসুরকে নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। দেবতার পাশাপাশি অসুরকে নিমন্ত্রণের ফলস্বরূপ পরিবারের ওপর নেমে আসতে পারে দেবতাদের অভিশাপ। তাই শাস্ত্রে তিনবারই শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।</p> <p>শঙ্খ বাংলায় শাঁখ ও কম্বু নামেও পরিচিত। এটি মূলত ডানাবর্তী ও বামাবর্তী—এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ডানাবর্তীতে শঙ্খের ঘূর্ণন ডান দিকে এবং বামাবর্তীতে বাঁ দিকে হয়। চীন আয়ুর্বেদে শঙ্খ বা Conch বা সি শেলের ভূমিকা অপরিহার্য।</p> <p>শঙ্খ গুঁড়া করলে যে সাদা পাউডার পাওয়া যায় তাই সাধারণত স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার করা হয়। শঙ্খের সাদা এই গুঁড়ায় থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং অন্য নানা ধরনের খনিজ যেমন—আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। এসব কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অংশে শঙ্খ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।</p> <p>                      ►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>