<p>‘ওটা কী? জেলের নৌকা?—তাই তো!</p> <p>জাল টেনে তোলা দায়,</p> <p>রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ—</p> <p>ইশ, চোখে ঝলসায়!</p> <p>কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় এভাবে জেলেদের জালকে উপস্থাপন করেছেন। জাল মূলত একটি মাছ ধরার কৌশল। জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের জাল পাওয়া যায়। আকার-আকৃতি, ফোকরের আয়তন, পানিতে পাতার অবস্থান ও ব্যবহার পদ্ধতির ভিত্তিতে একে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন—ঝাঁকি জাল, ব্যাগ জাল, ভাসা জাল, কারেন্ট জাল, ফলিং জাল, ধর্ম জাল প্রভৃতি।</p> <p>সব ধরনের জালের মধ্যে ঝাঁকি জাল অন্যতম। ঝাঁকি জালের ওপরের প্রান্তে সরু রশি বাঁধা থাকে। জালের নিচের দিকে লোহার ছোট ছোট কাঠি যুক্ত করা হয়, যাতে পানিতে জাল ফেললে তাড়াতাড়ি ডুবে যেতে পারে। এই জাল ছোড়ার পর গোল দেখায়। মাছ ধরার সময় খাল, পুকুর বা নদীর তীর থেকে রশিটি হাতে রেখে জাল পানিতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি ধরে টেনে জাল তোলা হয়। জালের নিচে অনেক ধরনের মাছ আটকা পড়ে।</p> <p>বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ফলিং জাল বলে আরেক ধরনের জাল দেখা যায়, যা ঝাঁকি জালেরই বড় সংস্করণ। মাছের আবাসস্থল ও মাছের আকারের ভিত্তিতে এই জাল বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। এই জালের সুতা বেশ মোটা ও ফোকর বড় হয়। এতে ব্যবহৃত লোহার বলও ওজনে বেশ ভারী। এই জালে নদীর গভীর থেকে মাছ ধরা হয়। পাঁচ থেকে দশজন লোক জালসহ সাঁতার কেটে নদীর নির্দিষ্ট জায়গায় জালটি পাতে। জেলেরা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাছ ধরার জন্য ডুব দিতে শুরু করে। অনেক সময় মাছ ধরে পাড়ে আনে বা জালেই পেঁচিয়ে রাখে এবং জাল না তোলা পর্যন্ত মাছ ওখানেই থাকে। এ ধরনের আরেকটি জালের স্থানীয় নাম ছবি জাল। ছবি জাল অগভীর পানিতে ব্যবহৃত হয়। এই জাল নাইলনের সুতা ও রশি দিয়ে তৈরি। ভারী রশির সাহায্যে জালের মুখ আলগা রাখা হয়। জালটি মোচাকৃতির ও মোচার দড়ি দিয়ে বাঁধা। জাল পানিতে ফেললে মাছ জালের ভেতরে ঢাকা পড়ে যায় এবং তাতে আটকে পড়ে। চাক জালও এ ধরনের জাল, দেখতে ছবি জালের মতো। বাঁশের ফালির বেড়ে জালের মুখ বাঁধা থাকে। শীতকালে নদী ও বিলে চাক জাল পাতা হয়।</p> <p>           ►  ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>