<p>কিউনিফর্ম লিপি বিশ্বের প্রাচীন লিপিগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেক ভাষাবিদ মনে করেন, কিউনিফর্ম লিপি মিসরীয় হায়ারোগ্লিফিকের চেয়েও পুরনো। ইংরেজিতে একে বলে Cuneiform script। এর অর্থ গোঁজ আকৃতি। এই লিপির আকৃতি কীলক বা ছোট্ট তীরের মতো হওয়ার কারণে এদের কিউনিফর্ম বা কীলক লিপি বলা হয়। সুমেরীয়রা এর আবিষ্কারক। এটি আনুমানিক ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বে ব্যবহৃত লিপি। কাদামাটির চার কোনা পাতে লেখার পর আগুনে পুড়িয়ে একে স্থায়ী করা হতো। এটি প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতায় ব্যবহার করা হতো। হামুরাবির আইনবিধি এই লিখন পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করা হয়।</p> <p>কিউনিফর্ম বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ও চিত্রের সমন্বয়ে লেখার পদ্ধতি। এটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে গঠিত কোনো বর্ণমালা নয় এবং এতে নির্দিষ্ট বা ধরাবাঁধা কোনো অক্ষরও নেই। নির্দিষ্ট অক্ষরের পরিবর্তে ৬০০ থেকে ১০০০-এর মতো কীলক আকৃতির শব্দ বা তাদের অংশের শেপ ব্যবহার করে লেখা হতো।</p> <p>সুমেরীয়দের পর আক্কাদিয়ানরাও তাদের ভাষা লেখার জন্য এই লিখন পদ্ধতি গ্রহণ করে। প্রাচীন যুগে কিউনিফর্ম খুবই জনপ্রিয় লিখন পদ্ধতি ছিল। সুমেরীয় ও আক্কাদিয়ান বাদে অ্যাসিরিয়ান, ব্যাবিলনিয়ান, এব্লেইট, আমোরাইট, অ্যালামাইট, হাত্তিক, হুররিয়ান, উরার্তিয়ান, হিট্টাইট, লুউইয়ান ভাষা এই লিখন পদ্ধতিতে লেখা হতো। কিউনিফর্ম লিপিকে প্রথম সংস্কার করেন পারস্য সম্রাট দারিয়ুস। প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ কিউনিফর্ম ফলক বা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। এই লিপির পাঠোদ্ধারের সূচনা করেন আইরিশ পাদ্রি এডওয়ার্ড হিংকস। বেশির ভাগ ট্যাবলেট সাংসারিক সাধারণ হিসাব বা শস্য গণনার জন্য ব্যবহৃত হতো। তাদের মধ্যে কিছু শিলালিপিতে প্রাচীন মেসোপটেমীয় জীবনের সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। এর বাইরে জটিল জ্যোতির্বিদ্যার গণনায় ব্যবহৃত হতো কিছু কিউনিফর্ম। ব্যাবিলনীয়দের তিনটি কিউনিফর্ম থেকে সবচেয়ে প্রাচীন রন্ধন প্রণালীর সন্ধান পাওয়া যায়। এই বিশেষ শিলালিপিতে স্টিউ ও সুপের জন্য ২৫টি রেসিপি (মাংস ও নিরামিষ উভয়), কিছু নির্দেশাবলিসহ বর্ণনা রয়েছে। তবে কোনো পরিমাপ বা কত সময় রান্না করতে হবে, তা লেখা নেই। বর্তমানে ব্রিটিশ জাদুঘরসহ বার্লিন, ইরাক, তুরস্ক ইত্যাদি দেশের জাদুঘরেও কিউনিফর্ম ট্যাবলেট সংরক্ষিত আছে।               </p>