<p><strong>[সপ্তম শ্রেণির বাংলা আনন্দপাঠ বইয়ের ‘মানুষের মন’ প্রবন্ধে বনফুলের কথা উল্লেখ আছে]</strong></p> <p>  <p>কথাশিল্পী, নাট্যকার, প্রবন্ধকার বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে লিখতেন। জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার। মাতা মৃণালিনী দেবী। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে। পরে তিনি ভাগলপুরের খলিফাবাগে নিজ উদ্যোগে ঞযব ঝবপত্ড়-ইধপঃত্ড় ঈষরহরপ নামে একটি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতিমান ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৮ সালে কলকাতায় চলে আসেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য।</p> </p> <p>ছোটবেলা থেকেই বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ লক্ষ করা যায়। স্কুলে পড়ার সময় ‘বনফুল’ ছদ্মনামে কবিতা রচনা করেন। সম্পাদনা করেন বিকাশ নামে হাতে-লেখা একটি সাহিত্য পত্রিকা। এ সময় থেকে তাঁর সাহিত্যবিষয়ক রচনা প্রকাশিত হয় ভারতী, প্রবাসী, কল্লোল প্রভৃৃতি বিখ্যাত পত্রিকায়। সাহিত্য সাধনায় বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব কথাশিল্পে। নতুন ধারা ও বিচিত্র ধরনের কাহিনি নির্মাণে তিনি অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি উপন্যাস লিখেছেন ৬১টি, গল্প পাঁচ শতাধিক। তাঁর উপন্যাসগুলোতে লক্ষ করা যায় মানবজীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস—তৃণখণ্ড, জঙ্গম, অগ্নি, ডানা, স্থাবর, অগ্নীশ্বর, হাটেবাজারে, ত্রিবর্ণ, ভুবনসোম, প্রচ্ছন্ন মহিমা, উদয় অস্ত প্রভৃতি। তাঁর কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভুবনসোম।</p> <p>সমাজের অবহেলিত মানুষের সেবা করা ছিল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনের ব্রত। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারি ছিল তাঁর অন্যতম মাধ্যম। তাঁর কাছে এক অসাধারণ মাধ্যম ছিল ছোটগল্প।</p> <p>ছোটগল্পে তিনি দারুণ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর গল্পের বিশেষত্ব হচ্ছে স্বল্প অবয়ব। ছোটগল্প কত ছোট হতে পারে, খণ্ডিত বা আকস্মিকতাজনিত অসমাপ্তির বোধ কিভাবে সৃষ্টি না হয় তার পরীক্ষা তাঁর গল্পগুলোতে পাওয়া যায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ— বনফুলের গল্প, বিন্দুবিসর্গ, অদৃশ্যলোকে, তন্বী, অনুগামিনী, দূরবীণ, মণিহারী, বহুবর্ণ, বনফুলের নতুন গল্প প্রভৃতি। উনিশ শতকের দুই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে  লেখা তাঁর নাটক ‘শ্রীমধুসূদন ও বিদ্যাসাগর’। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শরত্স্মৃতি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে; ভারত সরকারের কাছ থেকে পান পদ্মভূষণ উপাধি। ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।            </p> <p style="text-align: right;"><strong>পিন্টু রঞ্জন অর্ক</strong></p>