<p>পেসমেকার হলো ব্যাটারিচালিত পাতলা হাতঘড়ির মতো একটি জেনারেটর। ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি বুকের ত্বকের নিচে স্থাপন করা হয় এবং এর বিশেষ ধরনের তার শিরার মধ্য দিয়ে হৃদ্যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। মানুষের স্বাভাবিক হৃত্স্পন্দন মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার। হৃত্স্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরলয় বা দ্রুতগতিসম্পন্ন কিংবা অনিয়মিত হলে অর্থাৎ অস্বাভাবিক স্পন্দন হলে কারো কারো ক্ষেত্রে পেসমেকারের প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রে তৈরি বার্তা হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে স্পন্দন স্বাভাবিক ও নিয়মিত রাখে। আধুনিক পেসমেকার এমনভাবে তৈরি যে হৃৎপিণ্ড যখন স্বাভাবিক স্পন্দন তৈরি করে, তখন তা নিষ্ক্রিয় থাকে। আবার প্রয়োজন হলে সচল হয়। এই যন্ত্রের ব্যাটারি ১০ থেকে ১৫ বছর পর পরিবর্তন করতে হয়।</p> <p>১৯৫৮ সালে হৃত্স্পন্দনের শব্দ শোনার জন্য কম্পনযন্ত্র বানাতে গিয়ে পেসমেকার আবিষ্কার করে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন গ্রেটব্যাচ। ১৯৬০ সালে প্রথম মানুষের শরীরে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। পেসমেকার নিয়ে ওই রোগী বেঁচেছিলেন ১৮ মাস।</p> <p>পেসমেকারে অপরিবাহী আবরণযুক্ত এক থেকে তিনটি তার থাকে। পেসমেকারের তারকে লিড বলে। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে তার প্রবেশের ধরন অনুযায়ী পেসমেকার এক-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার, দ্বি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার এবং ত্রি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার—এই তিন রকম। এক-প্রকোষ্ঠ পেসমেকারে একটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে হৃৎপিণ্ডের শুধু ডান আর্টিয়াম বা ডান ভেনট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। দ্বি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকারে দুটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে হৃৎপিণ্ডের দুটি প্রকোষ্ঠে অর্থাৎ ডান আর্টিয়াম ও ডান ভেনট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। ত্রি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকারে তিনটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে ডান আর্টিয়াম, ডান ভেনট্রিকল এবং অন্যটি বাম ভেনট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। ত্রি-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার অত্যন্ত দুর্বল হূেপশির হৃৎপিণ্ডে স্থাপন করা হয়। সার্জারি করে বুকে পেসমেকার বসাতে ডাক্তারদের এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। দু-এক দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। তবে পেসমেকার ব্যবহারকারীদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন চুম্বক ও বিদ্যুত্চুম্বকীয় তরঙ্গ পেসমেকারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। তাই যে পাশে পেসমেকার আছে সেই পাশের বুকপকেটে মুঠোফোন রাখা যাবে না। এমনকি সেই পাশের হাত দিয়ে কোনো ভারী বস্তুও তোলা যাবে না।   </p> <p> </p> <p> </p>