<p>খরা (Drought) একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দীর্ঘকালীন শুষ্ক আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের পরিমাণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি হলে খরা অবস্থার সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিকরা টানা দুই সপ্তাহ ০.২৫ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হলে একে খরা আর টানা চার সপ্তাহ ০.২৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত না হলে সেটিকে আংশিক খরা বলে। আমেরিকায় টানা ৩০ দিন বা এর বেশি সময়ের মধ্যে যেকোনো ২৪ ঘণ্টায় ৬.২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি না হলে তারা ওই অবস্থাকে খরা হিসেবে ধরে নেয়। বাংলাদেশে ফসল জন্মানোর স্বাভাবিক সময়ে শস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার চেয়ে জমিতে কম আর্দ্রতা থাকলে সে অবস্থাকে খরা বলে।</p> <p>আমাদের এই দেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে মাঝেমধ্যেই খরার প্রকোপ দেখা যায়। অনেক সময় এ খরার রেশ ধরেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কোনো এলাকায় খরা শুরু হওয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষণ হচ্ছে সে এলাকার বাঁশ ও সুপারিগাছের পাতার সবুজ রং হারানো এবং মাটি ও বাতাসে আর্দ্রতার অভাবে নতুন পাতায় পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতাসম্পন্ন এলাকায়ও কখনো কখনো খরা হতে পারে। খরার তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ফসল ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়।</p> <p>খরার সময় খরাপীড়িত অঞ্চল তপ্ত হয়ে ওঠে এবং কুয়া, খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যবহার্য পানির অভাব ঘটে, নদীর প্রবাহ কমে যায়, ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিচে নেমে যায় এবং মাটির আর্দ্রতায় ঘাটতি দেখা দেয়।</p> <p>বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে বরেন্দ্রভূমি অঞ্চল, বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলায় খরার ঘন ঘন প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে খরাকে স্থায়ী, মৌসুমি ও আপৎকালীন—এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত মৌসুমি ও আপৎকালীন খরা বেশি সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে খরা হলেও বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ খরা সংঘটিত হয় ১৯৭৩ সালে, যা ১৯৭৪ সালের স্থানীয় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী।   </p> <p> </p> <p> </p>