<p>প্রাণিজগতের অন্যতম একটি অংশ সরীসৃপ। এরা কর্ডাটা পর্বের ভার্টিব্রাটা উপপর্বের অন্তর্ভুক্ত। উভচর ও পক্ষিকূলের মধ্যবর্তী স্থানে এদের অবস্থান। সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণী হচ্ছে—টিকটিকি, কুমির, সাপ, গিরগিটি। এরা বুকে ভর দিয়ে চলে। ত্বক শুষ্ক ও আঁশযুক্ত। এরা ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। সরীসৃপ সাধারণত চার পাবিশিষ্ট; কিন্তু সাপ ও কিছু টিকটিকির পা নেই।</p> <p>সাধারণত সরীসৃপের হৃৎপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠে বিভক্ত; কিন্তু কুমিরের হৃৎপিণ্ড চার প্রকোষ্ঠের। ধারণা করা হয়, ৩০ কোটি বছর আগে সরীসৃপের উদ্ভব। ডাইনোসরও সরীসৃপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ৯০৩টি প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সরীসৃপের সংখ্যা ১২৬। এর মধ্যে ৩ প্রজাতির কুমির, ২৬ প্রজাতির কাছিম, ১৮ প্রজাতির টিকটিকি ও ৭৯ প্রজাতির সাপ রয়েছে।</p> <p>কয়েকটি সরীসৃপ প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যেমন—কুমির একটি মাংসাশী সরীসৃপ। এরা জলাভূমি বা নদীর তীরে বাস করে এবং পানিতে শিকার ধরে। এদের শরীর ও লেজ চ্যাপ্টা, পা খাটো, চোয়াল শক্তিশালী। কুমিরের গড় দৈর্ঘ্য ১.৮-৩ মিটার। সুন্দরবনের নোনা পানির কুমির ৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ওজনে হয় প্রায় ১৫০০ কিলোগ্রাম। ছোট কুমির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী খায়। বড় কুমির মাছ ছাড়াও পানির কাছাকাছি আসা ডাঙ্গার স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখি শিকার করে। কখনো কখনো মানুষকেও আক্রমণ করে।</p> <p>আকারে ছোট সরীসৃপ টিকটিকি। এরা বাড়িঘরে বসবাস করে। গায়ের রং ধূসর এবং দেহে ডোরাকাটা দাগ আছে। সাধারণত তিন থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পায়ের আঙুলে আঠালো পাতা রয়েছে, যা সূক্ষ্ম খাঁজকাটা বিরাট ক্ষেত্রফলযুক্ত। এর সাহায্যে টিকটিকি মসৃণ দেয়ালে ও ছাদে সহজেই চলাচল করতে পারে।</p> <p>লম্বা ও সরু গড়নের সরীসৃপ হলো সাপ। এদের ত্বক শক্ত আঁশে ঢাকা। এরা বছরে কয়েকবার ত্বক বদলায়। বেশির ভাগ মেরুদণ্ডী প্রাণীর কশেরুকার তুলনায় সাপে কশেরুকার সংখ্যা বেশি। এদের ফুসফুস একটি, ব্যতিক্রম অজগর, যাদের দুটি ফুসফুস। সাপ ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ১০ মিটারের বেশি লম্বা হয়। ছোট সাপ পতঙ্গভুক এবং বড় সাপ নিজ দেহের তুলনায় বড় আকারের প্রাণী খেতে পারে। সাপের দাঁত শিকার ধরা ও আটকে রাখার উপযোগী, তবে চর্বণক্ষম নয়।</p> <p>বিভিন্ন স্থানে বনাঞ্চলের ক্রমহ্রাসমান পরিস্থিতির কারণে সরীসৃপ শ্রেণির প্রায় অর্ধেক প্রজাতিই আজ হুমকির সম্মুখীন।            <strong>আব্দুর রাজ্জাক</strong></p>