কাঠামো : কম্পিউটারের প্রধান দুটি দিক রয়েছে। যথা—
১। হার্ডওয়্যার
২। সফ্টওয়্যার
তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহূত হয় প্রবেশমুখ, অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার জন্য গাণিতিক অংশ, তথ্য সংরক্ষণের জন্য স্মৃতি তথা মেমোরি নিয়ন্ত্রণ বর্তনী হলো যান্ত্রিক সরঞ্জাম বা হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত। এ অংশ প্রগ্রামের সাহায্যে কার্যকর ও কর্মক্ষম হয়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রগ্রাম আবার দুই প্রকার। ব্যবহারিক প্রগ্রাম আর পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট প্রগ্রাম। ব্যবহারিক প্রগ্রাম গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে ও পদ্ধতি-সংশ্লিষ্ট প্রগ্রাম কম্পিউটারের অন্যান্য অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং ব্যবহারিক প্রগ্রামের কার্যক্ষমতাকে সক্রিয় রাখে।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য : কম্পিউটার সংখ্যার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে হিসাবনিকাশ সমাধা করে। ‘প্রগ্রাম’ ও উপাত্তের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়। প্রথমে প্রগ্রাম ও উপাত্তকে ‘ইনপুট’ অংশে দেওয়া হয়। এখানে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রূপান্তরের পর সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার তা অভ্যন্তরীণ স্মৃতি অংশে পাঠায়। এখান থেকে সিপিইউ বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ কাম্য তথ্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। অতঃপর নির্গমন মুখ অংশের মাধ্যমে ফলাফল পাওয়া যায়।
দ্রুতগতি, ভ্রমশূন্যতা ও স্মৃতি—এই তিনটি হচ্ছে কম্পিউটারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একটি কম্পিউটার সেকেন্ডে দুই কোটি সাধারণ যোগ অংশ করতে পারে।
কম্পিউটারের প্রোগ্রাম : কম্পিউটার বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধানের জন্য এর মেমোরিতে যে কার্যনির্দেশিকা সংরক্ষিত থাকে তাকে কম্পিউটারের প্রোগ্রাম বলে। কম্পিউটারের এ কার্যনির্দেশের প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে দিতে যে ভাষার প্রয়োজন হয় তাকে কম্পিউটারের ভাষা বলে।
কম্পিউটারের গঠন বৈশিষ্ট্য : প্রথম কম্পিউটার যখন আবিষ্কার হয় তখনকার গঠন-প্রণালি ও বর্তমানের কম্পিউটারের মধ্যে অনেক পার্থক্য। কারের প্রবাহে বর্তমান কম্পিউটার অনেক উন্নত, পরিচালনা সহজতর হয়েছে। তা ছাড়া আগে শুধু ইংরেজিতে ছিল, বর্তমানে কম্পিউটারে বাংলার প্রচলন হয়েছে। কম্পিউটারের মূল গঠন-বৈশিষ্ট্য অর্থাত্ প্রত্যেক কম্পিউটারে রয়েছে : ১. ইনপুট, ২. স্টোরেজ, ৩. কন্ট্রোল, ৪. প্রসেসিং এবং ৫. আউটপুট।
কম্পিউটারের প্রকার : আধুনিক কম্পিউটার তিন প্রকার, যথা :
১। এনালগ কম্পিউার
২। ডিজিটাল কম্পিউটার এবং
৩। হাইব্রিড কম্পিউটার।
অভ্যন্তরীণ গঠন, আকৃতি ও কার্যসম্পাদনের গতি ইত্যাদির বিচারে কম্পিউটারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি ও মাইক্রো কম্পিউটার। এ ছাড়া অ্যাপেল ও আইবিএম নামে দুটি কম্পিউটার পাওয়া যায়।
কম্পিউটারের ক্রমোন্নতি : ‘ইনিয়াক’ নামক পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটারটি সর্বপ্রথম ১৯৪৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আবিষ্কার হয়। এর দ্বারা সেকেন্ডে ৩০০টি গুণনের কাজ করা সম্ভব ছিল। আজকের কম্পিউটার ইনিয়াকের উন্নতির রূপ। প্রথম পর্যায়ে জেনারেশন কম্পিউটার, অতঃপর নতুন জেনারেশন কম্পিউটারের প্রচলন হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৬৪০ আইবিএম, ইউনিভ্যাক-১ সিস্টেম, ৩৬০ আইসিএল-২৯০০, এডস্যক-৪৩০০ ব্যবহার করা হচ্ছে। তা ছাড়া সুপার কম্পিউটার ক্রে-১, ক্রে-২-এর ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কম্পিউটারের বিকাশ : কম্পিউটার উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে রয়েছে মানুষের শতাব্দীকালের উদ্ভাবনী শক্তি ও গবেষণার স্বাক্ষর। বলা যায়, গণনা প্রচেষ্টা কম্পিউটার উদ্ভাবনের প্রাচীনতম ঘটনা। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণনা কৌশলও পরিবর্তিত হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে চীনে প্রচলিত অ্যাবাস নামক যন্ত্রকে প্রথম অঙ্কভিত্তিক গণনাযন্ত্র বলা হয়। ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের কন্যা অ্যাডা অগাস্টা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রগ্রাম রচয়িতা। কম্পিউটার প্রগ্রামের ভাষা ‘অ্যাজ’ তাঁর নামেরই
বাহক।
কম্পিউটার ও তার কার্যকারিতা : কম্পিউটার যেন যন্ত্রমস্তিষ্ক। কম্পিউটারে থাকে তিনটি সুস্পষ্ট অংশ। ১. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, ২. ইনপুট, ৩. আউটপুট। যেকোনো সমস্যা-সংক্রান্ত সব রকম তথ্য নিয়ে কাজ করে ‘সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট’। ইনপুট তথ্যসংবলিত নির্দেশ প্রদান করে আর ‘আউটপুট’ প্রকাশ করে গণনাসংবলিত ফল। কম্পিউটারের কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। কারণ কম্পিউটারের আছে অতি দ্রুত গণনার শক্তি, বহু তথ্যকে গুছিয়ে মগজে ধরে রাখার ক্ষমতা।
কম্পিউটারের গুরুত্ব : বর্তমান যুগে কম্পিউটার একটি অত্যাবশ্যকীয় ও জনপ্রিয় যন্ত্র। আধুনিক সভ্যতায় কম্পিউটারের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। কম্পিউটারের কার্যক্ষেত্র এখন বলা চলে স্বর্গ-মর্ত্য পাতালবিহারি। অর্থাত্ মহাশূন্যের কার্যাবলি থেকে শুরু করে ভূগর্ভস্থ খনির অন্ধকার কুঠুরির তথ্য ও জোগান দেয় কম্পিউটার। এককথায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম।
কম্পিউটারের ব্যবহার : কম্পিউটার এখন মানুষের অনেক কাজ করে দিতে পারে। যেমন অনুবাদের কাজ। কম্পিউটার যে শুধু কবিতা বা সাহিত্যের সফল অনুবাদ করতে পারে তা নয়। তবে একটি তথ্য বা খবর এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ঠিকরূপে রূপান্তরিত হতে পারে। রাশিয়ার প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দৈনিক প্রাভদা’র গুরুত্বপূর্ণ সব খবর বোধগম্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে আসছে কম্পিউটার। তা ছাড়া মানুষের মহাকাশ বিজয়ের কাজে সর্বাধিক শক্তি হলো কম্পিউটার। কম্পিউটারের সাহায্যে মহাকাশ বিজ্ঞানে এতটা সাফল্য এসেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা ও জার্মান কম্পিউটার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করেছে। এসব দেশের অনেক কারখানায় অনেক কাজ কম্পিউটার দ্বারা হয়ে থাকে। রাশিয়ায় একটি পানিবিদ্যুত্ কেন্দ্রে ১৯৪০ সালে ২৯০ জন প্রকৌশলী ছিলেন। এখন সেখানে কাজ করেন মাত্র ছয়জন। বাকি সব কাজ করে কম্পিউটার। আবার যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় কৃষি খামারে কম্পিউটারের প্রচলন আছে। কৃষকরা ঘরে বসে কেবল সুইচ টিপে ট্রাক্টর চালান, তা ছাড়া কৃষিসহ অন্য সব ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান রয়েছে।
প্রয়োগ ও প্রভাব : মানব জীবনের সব ক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রয়োগ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। নির্ভুল কর্মসম্পাদন, বিশাল স্মৃতি সংরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় ও আশ্চর্য দ্রুতগতিসম্পন্ন কর্মক্ষমতা কম্পিউটারকে বর্তমান যুগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিণত করেছে। এসব কারণে কম্পিউটারের প্রয়োগক্ষেত্র সুবিস্তৃত। সুদূরপ্রসারী তার প্রভাব। আমাদের কর্মজীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাশকালীন জীবন, ভ্রমণ, বিনোদন, এককথায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার তার অবদান রেখে যাচ্ছে। যেমন :
চিকিত্সা বিজ্ঞানে কম্পিউটার : আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম। রোগীর দেহের নানা রকম জটিল রোগ নির্ণয়, পরীক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ওষুধ নির্ধারণ, হাসপাতালের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, চোখের ক্ষমতা নির্ণয়, রক্তের গ্রুপের তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি কাজে আজকাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
শিল্প ক্ষেত্রে কম্পিউটার : ১৯৫৯ সালে পারমাণবিক চুল্লিতে কম্পিউটার সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পণ্যের মান উন্নয়ন, শিল্প ক্ষেত্রের উপাত্ত সংগ্রহ, স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, রোবটের মাধ্যমে শ্রম ব্যবহার ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার শিল্প ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার : বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার সুবিধার এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শিক্ষার্থীদের গাণিতিক হিসাব ও সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন, কোর্স নির্দেশনা, প্রশাসনিক কাজ সবই কম্পিউটারের সাহায্যে করা হচ্ছে। কম্পিউটার কেনা এখন সাধ্যের মধ্যে থাকায় শিক্ষার্থীরা এটি সহজে ব্যবহার করে লেখাপড়াকে আরো ত্বরান্বিত করছে। শিক্ষার মানও বেড়ে যাচ্ছে এর প্রয়োগে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে কম্পিউটার : মজুদ নিয়ন্ত্রণ, এয়ারলাইনের টিকিট বুকিং, বেতনের হিসাব, ব্যাংকিং সিস্টেম, আয়-ব্যয় ও বাজেটের হিসাব, ব্যবসায়িক যোগাযোগ ইত্যাদি সব কাজই কম্পিউটার দিয়ে সমাধান করা যায়।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে কম্পিউটার : যোগাযোগব্যবস্থায় আধুনিকায়নে কম্পিউটারের বড় ভূমিকা রয়েছে। বিমান, নভোযান, ট্রেন ও নদীপথে জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ, দিক নির্দেশনায় অবস্থান নির্ণয়, এসব ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার যোগাযোগকে করেছে জটিলতামুক্ত, সহজ ও আধুনিক।
গবেষণা ক্ষেত্রে কম্পিউটার : সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক সব গবেষণায় সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কম্পিউটারের সফল প্রয়োগ রয়েছে।
নিরাপত্তা ক্ষেত্রে কম্পিউটার : যেকোনো কাজে সরকারি হোক বেসরকারি হোক নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি, কম্পিউটারের ব্যবহারে তা সম্ভব। বিমানবন্দরে, দেশের সীমান্ত চেকপোস্টে, সমুদ্রবন্দরে, মন্ত্রণালয়ে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার বর্তমানে অপরিহার্য বলে গণ্য।
কৃষি ক্ষেত্রে কম্পিউটার : কৃষি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকরা ঘরে বসে কেবল সুইচ টিপে ট্রাক্টর চালান, সুইচ টিপে বীজ বোনার কাজ হয়, সার দেওয়া হয়, ফসল তোলা, মাড়ানো ইত্যাদি করা হয়। এমনকি ফসল গুদামে এনে কাচের বড় বড় বাক্সে ভরার কাজটিও কম্পিউটার করে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া : নির্ভুল কর্মসম্পাদন, দ্রুতগতি ও বিচিত্র জটিলতার সহজ সমাধানে কম্পিউটার বর্তমান যুগে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সমাজজীবনের গতিকে করেছে ত্বরান্বিত, জীবনকে করেছে আধুনিক ও উন্নত। সময়ের অপচয় রোধ, নিখুঁতভাবে কাজ করা, কাজের মান বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে কম্পিউটার আজ আমাদের জন্য এক অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। তবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার বেকারত্ব ও মস্তিষ্কের অলসতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক ভারসাম্য নষ্টও করতে পারে।
আধুনিক সভ্যতা ও কম্পিউটার : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। ব্যবসা-বাণিজ্যে, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান গবেষণাগার থেকে শুরু করে কম্পিউটার মানুষের সর্বস্তরে এক অভাবনীয় বিপ্লবের সূচনা করেছে। বর্তমানে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইলেকট্রনিক যোগাযোগব্যবস্থায় এক নবযুগের সূচনা করেছে। অদূর ভবিষ্যতে কম্পিউটারকে একজন মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করানোর চেষ্টা চলছে।
মানবজীবনে কম্পিউটারের প্রভাব : মানবজীবনে কম্পিউটার যে প্রভাব ফেলছে তা সত্যিই অকল্পনীয়। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। কম্পিউটার আমাদের জীবনে আধুনিকত্ব এনে দিয়েছে, ফলে আমরা এখন আরামপ্রিয় হয়ে যাচ্ছি। কখনো কখনো মানবজীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া বর্তমান যুগের মানুষ এক মুহূর্তের জন্যও চলতে পারে না।
বাংলাদেশে কম্পিউটার : ১৯৬৪ সালে ঢাকা পরমাণু শক্তিকেন্দ্র আইবিএম ১৬২০ কম্পিউটার স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কম্পিউটারের প্রচলন হয়। আশির দশকে তা ব্যাপক আকার লাভ করে। উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজে কম্পিউটার ব্যবহূত হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা, ব্যাংকিং, বীমা, লাভ-লোকসানের হিসাব, এয়ারলাইনের টিকিট বুকিং, ডাটাবিশ্লেষণ, রিপোর্ট তৈরি, বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, সিকিউরিটি সিস্টেম ইত্যাদি কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার আমাদের জীবনে এক বৈপ্লবিক গতিশীলতা এনে দিয়েছে।
বেকারত্ব ও কম্পিউটার : বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় ও যন্ত্রদানবের ক্ষমতা অপরিসীম। অনেকেই আশঙ্কা করছে অচিরেই মানুষ এ যন্ত্রদানবের ক্রীড়নকে পরিণত হবে। কাজপিপাসু এ যন্ত্রদানব যখন সর্বস্তরে পৌঁছে যাবে, তখন মানুষ তার ক্রীড়নকে পরিণত না হয়ে পারে না। বেড়ে যাবে বেকারত্ব। এরই মধ্যে বিভিন্ন অফিস-আদালতে কর্মজীবীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে অপারেটর প্রগ্রামসহ বিভিন্ন পদে বহু লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। তার পরও সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, কম্পিউটার একটি উপকারী যন্ত্রদানব, যার ইতিবাচক ছোঁয়া লাগবে সর্বস্তরে।
উপকারিতা : কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানজগেক বিশেষভাবে উপকৃত করেছে। এটি মানুষের সব কাজের তদারকি করছে। এরই মধ্যে কম্পিউটার ইলেকট্রনিকস খবরাদির প্রক্রিয়া হিসেবে টেলিফোন শিল্পে, মনিটরিং-ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। হোটেল, পরিবহন অফিস-আদালতের বিভিন্ন দপ্তর বহু জায়গায় কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
অপকারিতা : কম্পিউটার শুধু মানুষের উপকার করে যাচ্ছে এমন নয়। এটা মানুষের কিছু অপকারও করছে। কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে বেকারত্ব বেড়ে গেছে এবং এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বাংলাদেশ বা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। একই সঙ্গে অল্প সময়ে কম্পিউটার অনেক লোকের কাজ করে ফেলতে পারে বলে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা।
উপসংহার : একদিকে বৈজ্ঞানিকরা কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এর ক্রমোন্নতি ঘটাচ্ছেন, অন্যদিকে এটা নিয়ে নানা আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ভবিষ্যতে মানুষ আর কম্পিউটার পাশাপাশি বাস করবে। কারো কারো প্রশ্ন, আগামী দিনে মানুষ কম্পিউটারকে পরিচালিত করবে না মানুষকে কম্পিউটার পরিচালিত করবে? পরিশেষে বলা যায় যে কম্পিউটার আধুনিক ও বিজ্ঞানজগতের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার তাতে সন্দেহ নেই। এ জন্যই ইংরেজিতে একটি কথা আছে—“Computer is like Aladin’s magic lamp or magic wand.”