আন্তর্জাতিক অভিগমন কী?
উত্তর : যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমনাগমনের মাধ্যমে বাসস্থানের পরিবর্তন হয়, তবে তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলা হয়।
১০। বহিরাগমন কী?
উত্তর : অন্য দেশ থেকে কোনো দেশে চলে আসাকে বহিরাগমন বলে।
১১। সাধারণ অর্থে আদমশুমারি কী?
উত্তর : সাধারণ অর্থে ‘আদম’ বলতে জনগণ এবং ‘শুমারি’ বলতে গণনা বোঝায়। কাজেই আদমশুমারি বলতে জনসংখ্যা গণনা বোঝায়।
১২। শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি কী?
উত্তর : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশে জন্মহার ও মৃত্যুহারের মধ্যে সমতা এলে এ অবস্থানকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলা হয়।
১৩। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কী?
উত্তর : বিলম্বে বিবাহ, যৌনসংযম, জন্মনিয়ন্ত্রণ, কৌমার্য অবলম্বন ইত্যাদি পন্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলা হয়।
১৪। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : কোনো দেশের জনসংখ্যা সে দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে বেশি হলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকেই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ বলে।
১৫। মানবসম্পদ কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণ অর্থে কর্মক্ষম মানুষ অথবা শ্রমশক্তিকে মানবসম্পদ বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে মানবসম্পদ ধারণার সঙ্গে দক্ষতা তথা উৎপাদনশীলতা জড়িত। কাজেই একই দেশের উৎপাদনশীল ও দক্ষ শ্রমশক্তি বা জনশক্তিকে মানবসম্পদ বলা হয়।
১৬। আদমশুমারি কাকে বলে?
উত্তর : দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সাধারণত ১০ বছর অন্তর দেশের জনসংখ্যার বিভিন্ন দিক জানার জন্য যে জরিপ পরিচালনা করা হয়, তাকেই আদমশুমারি বলে।
১৭। মোট ও নিট অভিবাসনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।
উত্তর : মোট ও নিট অভিবাসনের মধ্যে পার্থক্য হলো—
i. মোট অভিবাসন সর্বদা ধনাত্মক হয়। কিন্তু নিট অভিগমন ধনাত্মক, শূন্য ও ঋণাত্মক হতে পারে।
ii. একাধিক অঞ্চলের সংশ্লিষ্টতায় আগমন-নির্গমনের সমষ্টি হতে মোট অভিবাসন হিসাব করা হয়। পক্ষান্তরে, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে আগমন ও নির্গমনের বিয়োগফল থেকে নিট অভিবাসন পাওয়া যায়।
iii. নিট অভিবাসনের সূত্র : মোট বহিরগম—মোট বহির্গমন। পক্ষান্তরে, মোট অভিবাসনের সূত্র : মোট আগমন + মোট নির্গমন।
১৮। শূন্য জনসংখ্যার বৃদ্ধি বলতে কী বোঝো?
উত্তর : একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশে মোট জনসংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা সমান হলে তাকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ান্তে দেশের জনসংখ্যার আকারের কোনো পরিবর্তন হয় না। নিচে শূন্য জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি সমীকরণের সাহায্যে দেখানো হলো—
ZPG = Bp-Dp=O বা, Bp=Dp যেখানে, ZPG= শূন্য জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি; Bp = মোট জন্ম সংখ্যা; Dp = মোট মৃত্যু সংখ্যা।
১৯। জনসংখ্যা সমস্যা কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : যখন কোনো দেশ বা অঞ্চলে জনসংখ্যার হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন তাকে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশ বা জাতির সব অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি হয় এবং এমন সব সমস্যা সৃষ্টি করে, যা দেশ বা জাতিকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দেয় বলে একে জনসংখ্যা সমস্যা বলে। এরূপ জনসংখ্যা সমস্যার ফলে কোনো দেশ বা অঞ্চলে খাদ্যাভাব, অনটন, মারামারি, হানাহানি, বেকারত্ব ও রোগব্যাধি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২০। ম্যালথাস জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কয়টি উপায়ের কথা বলেছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা : বিলম্বে বিবাহ, যৌনসংযম, জন্মনিয়ন্ত্রণ, কৌমার্য অবলম্বন ইত্যাদি পন্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বলা হয়। ম্যালথাস বলেছেন, প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, লোকসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকলে দেশে খাদ্য সমস্যা দেখা দেবে।
প্রাকৃতিক নিরোধ : মহামারি, দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব, অপুষ্টি, যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রাণসংহারকে প্রাকৃতিক নিরোধ বলা হয়। এসব সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে ম্যালথাস দেশের জনগণকে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন।
২১। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে নারী শিক্ষা প্রসারের গুরুত্ব কী?
উত্তর : বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার। নারী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে নারী সমাজকে জন্মরোধের আবশ্যকতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে নারী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফলতা লাভ করতে পারে। নারীরা শিক্ষিত হলে তারা বিভিন্ন আয়-উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে তারা বলিষ্ঠ মতামত দিতে পারবে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত জন্মদান রোধ হবে।
২২। মাথাপিছু ভূমি বলতে কী বোঝো?
উত্তর : কোনো এলাকায় যতটি পরিবার বাস করে তাদের সবার ভূমি বা জমির পরিমাণ সমান থাকে না। কারো জমি বেশি, কারো জমি কম থাকে। কোনো এলাকা বা দেশের সমস্ত ভূমি সব মানুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন বা ভাগ করে দিলে প্রতিজনের ভাগে যে পরিমাণ ভূমি পড়বে তাই ওই এলাকা বা দেশের মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ।
মাথাপিছু ভূমি = এলাকার মোট ভূমি (একরে)/এলাকার মোট জনসংখ্যা।
২৩। মানবসম্পদ উন্নয়নের উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর : মানবসম্পদ উন্নয়ন যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, সেসব বিষয় মানবসম্পদ উন্নয়নের উপাদান হিসেবে অভিহিত। এসব উপাদান কতিপয় সুযোগ-সুবিধার সমষ্টি। অর্থনীতিবিদ মিরডাল মানবসম্পদ উন্নয়নের আটটি উপাদানের কথা বলেছেন। যেগুলো নিম্নরূপ :
ক) খাদ্য ও পুষ্টি খ) বস্ত্র গ) বাসস্থান ও তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ঘ) স্বাস্থ্য সুবিধা ঙ) শিক্ষা চ) গণসংযোগমাধ্যম ছ) শক্তি ভোগ জ) পরিবহন।
২৪। মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসম্মত বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষকর্মী বা শ্রমশক্তি সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেই ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ বলে। অর্থনীতিবিদ Gunar Myrdal মানবসম্পদের উন্নয়নে আটটি অপরিহার্য উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—১. খাদ্য ২. বস্ত্র ৩. বাসস্থান ও তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা ৪. শিক্ষা ৫. স্বাস্থ্য সুবিধা ৬. জনসংযোগমাধ্যম ৭. পরিবহন এবং ৮. শক্তিভোগ।
২৫। আত্মকর্মসংস্থান বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সহজ অর্থে নিজেই কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। ব্যাপক অর্থে, নিজেস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাপকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।
কোনো ব্যক্তি যখন সেবার বিনিময়ে বা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে আয় করে জীবিকা চালায়, তখন একে আত্মকর্মসংস্থান পেশা বলে।
২৬। বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থান জরুরি কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বাংলাদেশে বর্তমানে জনসংখ্যা ১৫.৫৮ কোটি। এ জনসংখ্যার মধ্যে ৯ কোটি কর্মক্ষম জনসংখ্যা রয়েছে। মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩৩ ভাগ বেকার। বিশাল কর্মক্ষম বেকার জনগোষ্ঠীকে মজুরি ও বেতনভিত্তিক চাকরির মাধ্যমে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। সরকারিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগও কম। এ জন্যই বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থান অতি জরুরি। এ ছাড়া সম্পদের সদ্ব্যবহার ও দক্ষতা বাড়াতে এর কোনো বিকল্প নেই।
২৭। মানবসম্পদ উন্নয়নে আবাসন কর্মসূচির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে দক্ষ মানবসম্পদ বণ্টন ও তৈরি হতে পারে না। মানুষ দিনভর কাজ করে। বিশ্রামের জন্য রাতে আশ্রয় খুঁজে। বিশ্রামের জন্য প্রয়োজন গৃহ। গৃহ তথা আবাসন না থাকলে বিশ্রাম নেওয়া কষ্টসাধ্য। ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, কর্মের উপযোগী থাকে না। তাই আবাসন কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম।
২৮। মানবসম্পদ উন্নয়নে নারী উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারী উন্নয়ন ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করা স্বপ্নের ন্যায়। দেশের সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্থনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই জাতীয় উন্নয়নে নারী উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।