<p>গল্প</p> <p>১। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :</p> <p>রাজার এক পাখি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সে গান গায়, বনের ফল খায়, উড়ে বেড়ায়। এক শ্রেণির আত্মস্বার্থসচেতন মানুষ রাজাকে পরামর্শ দেয় পাখিকে শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব আয়োজন ব্যর্থ হয়। পাখি পুঁথি পাঠের ভার বহন করতে না পেরে শেষ হয়ে যায়। আর বসন্তের বাতাসে মুকুলিত কিশলয়গুলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।</p> <p>ক) রাজার পাখিটির নাম কী?</p> <p>উত্তর : রাজার পাখিটির নাম তোতা।</p> <p>খ) পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার সব আয়োজন ব্যর্থ হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : পাখিটি মারা যাওয়ায় তাকে শিক্ষা দেওয়ার সব আয়োজন ব্যর্থ হয়।</p> <p>‘তোতা কাহিনী’ গল্পের রাজার তোতা পাখিটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে গান গেয়ে, বনের ফল খেয়ে মনের আনন্দে উড়ে বেড়াত। কিছু স্বার্থসচেতন মানুষের পরামর্শে রাজা পাখিটির শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটায় সব আয়োজন ব্যর্থ হয়। পাখিটা পুঁথি পাঠের ভার বহন করতে না পেরে মারা যায়।</p> <p>গ) মানুষের ভাষা অন্য প্রাণীকে শেখানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে তোমার মতামত ও অভিমত ব্যক্ত করো।</p> <p>উত্তর : মানুষের ভাষা অন্য প্রাণীকে শেখানোর প্রচেষ্টা মূলত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করা। ‘তোতা কাহিনী’ গল্পের অপরিণামদর্শী রাজা তোতা পাখিটাকে মানুষের ভাষা শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। রাজার লোকজন পাখিটাকে স্বাভাবিক খাদ্য, ফলমূল না দিয়ে পুঁথি থেকে পাতা ছিঁড়ে কলমের ডগা দিয়ে তার মুখে দেয়। ফলে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সে যে গান গাইত, তা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিত্কার করার স্বাভাবিক ফাঁকটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। পরিণামে মানুষের ভাষা শেখানোর সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে পাখিটি মারা যায়।</p> <p>তাই অন্য প্রাণীকে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের ভাষা শেখানোর প্রচেষ্টাকে আমি নির্বুদ্ধিতা বলে মনে করি।</p> <p>ঘ) উদ্ধৃতাংশ থেকে রাজা, পরামর্শদাতা ও পাখির স্বভাবের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করো।</p> <p>উত্তর : রাজা ‘তোতা কাহিনী’ গল্পের রাজা নির্বোধ ও হঠকারী। তাই তোতা পাখির স্বাভাবিক আচরণ তাঁর কাছে অসংগত মনে হওয়ায় তিনি পাখিটাকে মানুষের মতো শিক্ষা দিতে চাইলেন। তাঁর নির্বুদ্ধিতার কারণে পরামর্শদাতারা লাভবান হলেও পাখিটার প্রাণ যায়।</p> <p>পরামর্শদাতা : রাজার পরামর্শদাতারা বোকা রাজাকে উল্টো-পাল্টা বুঝিয়ে মোটা অঙ্কের পারিতোষিক নিয়ে বিদায় হয়। পুঁথির ভার বহন করতে না পেরে পাখিটা যখন মারা গেল, তখনো তারা রাজাকে বোঝাল যে পাখিটার শিক্ষা পুরো হয়েছে।</p> <p>পাখি : পাখি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে গান গায়, লাফায়, বনের ফলমূল খেয়ে গাছে গাছে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু রাজার চাটুকার পরামর্শদাতারা বিদ্যাশিক্ষার নাম করে শেষ পর্যন্ত পাখিটাকে মেরে ফেলে।</p> <p> </p> <p>২। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :</p> <p>সংসারে অন্য অনেক অভাব আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট। তারা বলল, ‘খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।’ কথাটা রাজার কানে গেল। তিনি ভাগিনাকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘ভাগিনা, একী কথা শুনি।’</p> <p>ভাগিনা বলিল, ‘নিন্দুকগুলি খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।’</p> <p>জবাব শুনিয়া রাজা অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন, আর তখনি ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়িল।</p> <p>ক) পাখিটাকে কেন খাঁচায় রাখা হয়েছিল?</p> <p>উত্তর : পাখিটাকে শাস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্য খাঁচায় রাখা হয়েছিল।</p> <p>খ) নিন্দুক কারা? তাদের মন্তব্যের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করো?</p> <p>উত্তর : যারা অপরের নিন্দা করে বেড়ায় শাব্দিক অর্থে তারাই ‘নিন্দুক’। কিন্তু ‘তোতা কাহিনী’ গল্পের নিন্দুক শাব্দিক অর্থের নিন্দুক নয়। তারা রাজার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তার বোধোদয় ঘটাতে চায়। তারা রাজার আত্মীয়স্বজন ও পরামর্শদাতাদের মতো তোষামোদকারী নয়। তারা সত্যবাদী ও স্পষ্টভাষী।</p> <p> </p> <p>এই নিন্দুকেরা সমাজ ও মানুষের অসংগতির দিকগুলো তুলে ধরে প্রকৃতপক্ষে উপকারীর কাজটিই করে। ‘তোতা কাহিনী’ গল্পের নিন্দুকেরাও তাদের মন্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছে যে পাখিকে মানুষের মতো শিক্ষা দেওয়া অসম্ভব।</p> <p>গ) উদ্দীপকের আলোকে ভাগিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দাও।</p> <p>উত্তর : তোতা কাহিনী গল্পের ভাগিনা সম্পর্কে রাজার নিকটাত্মীয়। তাদের ওপর পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল। রাজ পণ্ডিতের বিচারে পাখিকে বিদ্বান করার জন্য প্রথমে স্যাঁকরা দিয়ে সোনার খাঁচা বানানো হলো। তারপর পুঁথি লেখকদের দিয়ে পুঁথি লেখানো হলো। দামি খাঁচাটার তদারকি, মেরামত, ঝাড়া-মোছা-পলিশ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তারা রাজার কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নিত। প্রকৃত সত্য নিন্দুক প্রকাশ করতে চাইলে ভাগিনারা রাজাকে উল্টো-পাল্টা বুঝিয়ে শান্ত করত। এমনকি পুঁথির ভার বহন করতে না পেরে পাখিটা যখন মারা গেল, তখনো তারা পাখিটার শিক্ষা পুরো হয়েছে বলে নির্বোধ রাজাকে বোঝাতে প্রয়াস পায়। এ কাহিনী থেকে বোঝা যায় যে রাজার ভাগিনারা চতুর কূটকৌশলী ও স্বার্থপর স্বভাবের।</p> <p>ঘ) ‘নিন্দুকেরা খাইতে পারে না বলিয়াই মন্দ বলে’ ভাগিনার এ কথার তাত্পর্য বিশ্লেষণ করো?</p> <p>উত্তর : ‘নিন্দুকেরা খাইতে পারে না বলিয়াই মন্দ কথা বলে’ ভাগিনার এ কথার তাত্পর্য হলো নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা।</p> <p>‘তোতা কাহিনী’ গল্পের রাজা পাখিকে শাস্ত্র শিক্ষার দায়িত্ব তার ভাগিনাদের ওপর দেন। সে অনুযায়ী পাখির জন্য সোনার খাঁচা বানিয়ে তার তদারকির জন্য বিভিন্ন লোক নিয়োগ করা হলো। তারা খাঁচার ঝাড়া-মোছা ও পলিশ ইত্যাদি কাজে লাগলেও যার জন্য এত আয়োজন তার দিকে অর্থাৎ পাখিটার দিকে কোনো মনোযোগ দিল না।</p> <p>নিন্দুকেরা এই দিকটি লক্ষ করে খাঁচার উন্নতি আর পাখিটার প্রতি অবহেলার বিষয়ে মন্তব্য করলে রাজা ভাগিনাদের ডেকে প্রকৃত সত্য জানতে চাইলে দোষ ঢাকতে ভাগিনা উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করে। প্রকৃতপক্ষে রাজার হঠকারিতা, নির্বুদ্ধিতা ও অদূরদর্শিতার কারণেই ভাগিনা এ ধরনের মন্তব্য করার সাহস পেয়েছে।</p>