<p> কারো কারো কাছে জ্যামিতি সরলরেখার মতো সহজ একটি বিষয় মনে হয়। আবার কারো রয়েছে এর প্রতি বিশেষ এক ধরনের ভীতি। জ্যামিতির ইংরেজি জিওমেট্রি। শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'জিও' ও 'মেট্রন' থেকে। জিও শব্দের অর্থ পৃথিবী এবং মেট্রন অর্থ পরিমাপ। মূলত ভূমি বা জমির পরিমাপ করতে গিয়েই সৃষ্টি হয় আজকের জ্যামিতি। জ্যামিতির ইতিহাস বেশ পুরনো। যিশু খ্রিস্টেরও জন্মের বহু আগে মেসোপটেমিয়া ও ইজিপ্টে জ্যামিতির যাত্রা শুরু হয়। তবে তাঁরা জ্যামিতির বাস্তবিক কোনো ব্যবহার করতে পারেননি। জ্যামিতি নিয়ে প্রাচীন লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্লিম্পটন ৩২২, ১৮৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মস্কো প্যাপিরাস ইত্যাদি। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ মিলেতুসের থালেস প্রথম জ্যামিতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করেন। তিনি জ্যামিতির তত্ত্বের সাহায্যে পিরামিডের উচ্চতা বা তীর থেকে জাহাজের দূরত্ব মাপতে সক্ষম হন। থালেসকে বেশ কিছু সরল উপপাদ্যের জনক হিসেবেও মনে করা হয়। পরে জ্যামিতি আরো বিকাশ লাভ করে থালেসের ছাত্র পিথাগোরাসের হাতে। পিথাগোরাস তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে বেশ কিছু নতুন উপপাদ্য প্রমাণ করেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপপাদ্যটি হলো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ ত্রিভুজটির বাকি বাহুদ্বয়ের বর্গের সমষ্টির সমান। জ্যামিতির অগ্রগতিতে বড় অবদান রাখেন ইউক্লিড। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন উপপাদ্য এক করে গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেন তিনি। ইউক্লিড গ্রন্থটির নাম দেন 'এলিমেন্টস'। এলিমেন্টস গ্রন্থটিতে যা কিছু লেখা ছিল তা আরো আগে থেকেই মানুষের জানা থাকলেও এ গ্রন্থটি জ্যামিতি শাস্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এ উপপাদ্যগুলো যে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তা এলিমেন্টসের মাধ্যমে প্রথম তুলে ধরেন ইউক্লিড। আধুনিক জ্যামিতির আগে যাঁদের হাত ধরে জ্যামিতি আরো উন্নতি লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছেন ফরাসি দার্শনিক ও গণিতবিদ রনে দেকার্ত, ফরাসি প্রকৌশলী জেরার দ্যজার্গ, গাসপার মোঁজ প্রমুখ।</p> <p> গ্রন্থনা : জাকারিয়া জামান</p> <p>  </p> <p>  </p>