<p> নদী</p> <p> প্রশ্ন : নদীর উৎপত্তি হয় কিভাবে? নদীর কারণে সৃষ্ট ক্ষয়জাত ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দাও?</p> <p> ভূমিকা : উঁচু পর্বত বা মালভূমি থেকে বৃষ্টি, প্রস্রবণ, হিমবাহ বা বরফ গলা পানিতে সৃষ্ট কোনো জলাধারা যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়ে সমভূমি ও নিম্নভূমির ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে অবশেষে কোনো বিশাল জলাশয় বা হ্রদ অথবা সমুদ্রে পতিত হয়, তখন তাকে নদী বলা হয়।</p> <p> নদীর উৎপত্তি : নদীর উৎপত্তির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও ঢালু জায়গা। পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টির পানি ও বরফ গলা পানি পাওয়া যায় বলে পৃথিবীর বেশির ভাগ নদীই পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এ ছাড়া পাহাড়ের প্রস্রবণের পানিও নদীর উৎপত্তিতে সহায়তা করে থাকে। পানিপ্রবাহ স্বভাবত নিম্নগামী; সেজন্য সব নদীই ভূ-ভাগের ঢাল অনুসারে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র বা হ্রদে কিংবা অন্য কোনো নদীতে গিয়ে পড়ে। নদীর আকৃতি, প্রকৃতি ও এর বিভিন্ন প্রকার কার্যের পরিমাণ বহুলাংশে নির্ভর করে তার উৎসস্থলের পানি সরবরাহের পরিমাণের ওপর। হিমালয় পর্বতে বৃষ্টি, বরফ গলা পানি ও প্রস্রবণের পানি মিলিত হয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p> নদীর ক্ষয়জাত ভূ-প্রকৃতি : নদীর কারণে যে ভূ-প্রকৃতির সৃষ্টি হয়, তার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো-</p> <p> (১) নদী উপত্যকা : পার্বত্য এলাকায় নদীর সঞ্চয়ক্রিয়ার চেয়ে ক্ষয়ক্রিয়াই বেশি। ফলে সেখানে নদীর উপত্যকা গঠিত হতে থাকে। পার্বত্য এলাকায় স্রোতের বেগ ঘণ্টায় প্রায় ২৪ থেকে ৩২ কিলোমিটার। পর্বত থেকে প্রবলবেগে নামার সময় নদীর প্রবল স্রোত বড় বড় শিলাখণ্ড বহন করে নিচের দিকে অগ্রসর হয়। পর্বত কঠিন শিলা দিয়ে গঠিত, কিন্তু মাঝে মাঝে নরম শিলাও থাকে। নদীখাতের পাশের চেয়ে নিচের দিকে শিলা বেশি কোমল হলে পার্শ্ব ক্ষয়ের চেয় উল্লম্ব ক্ষয় বেশি হয়।</p> <p> <a name=\"RIMG0\"></a></p> <p> (২) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন : প্রাথমিক গতিতে নদীর প্রবল স্রোত খাড়া পর্বতগাত্র বেয়ে নিম্নদিকে প্রবাহিত হয়। এতে ভূ-পৃষ্ঠে ক্ষয় হয় এবং ভূত্বক থেকে শিলাখণ্ড ভেঙে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে শিলাখণ্ডগুলো মসৃণ ও ক্ষুদ্রতর হয়ে অবশেষে কাঁকর, বালি ও কাদায় পরিণত হয় এবং পানির সঙ্গে বহু দূর চলে যায়। এসব পাথরের ঘর্ষণে নদীর খাত গভীর ও সংকীর্ণ হতে থাকে। নদীর দুই পাশ্র্বের শিলা যদি ক্ষয় না হয়, তাহলে এসব খাত খুব গভীর হয়। তখন এসব খাতকে গিরি সংকট বা গিরিখাত বলে। গিরিখাতগুলো শুষ্ক অঞ্চলে কোমল শিলাস্তরে হলে অত্যন্ত সংকীর্ণ ও গভীর হয়। ফলে নদীর উভয় পার্শ্ব অধিক উচ্চ ও খাড়া হয়। এরূপ গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে। উত্তর আমেরিকার কালোরাডো নদীর গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ান পৃথিবী বিখ্যাত।</p> <p> (৩) খরস্রোত ও নির্ঝর : অনেক সময় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নদীর স্রোত নিচে চলতে থাকে। এরূপ ঢালু জায়গায় মাটি পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল থাকতে পারে। ফলে নদীর স্রোতে নরম মাটি অল্প অল্প ক্ষয় হয় এবং ছোট ছোট জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ জলপ্রপাতগুলো সারিবদ্ধভাবে ওপর থেকে নিচের দিকে অবস্থান করে এবং নদীর স্রোত লাফাতে লাফাতে নিচে পড়তে থাকে। এমন প্রবাহমান স্রোতকে বা সারিবদ্ধভাবে সৃষ্ট ছোট ছোট জলপ্রপাতকে খরস্রোত বলে। খরস্রোত অপেক্ষা আরো ক্ষুদ্র জলপ্রপাতকে নির্ঝর বলে।</p> <p> <a name=\"RIMG1\"></a></p> <p> (৪) জলপ্রপাত : পার্বত্য অবস্থায় নদীর স্রোত কোনো কঠিন শিলাস্তর থেকে কোমল শিলাস্তরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে কোমল শিলাস্তরটিকে বেশি পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে। ফলে কঠিন শিলাস্তর কোমল শিলাস্তর অপেক্ষা অনেক উচ্চে অবস্থান করে এবং পানিধারা খাড়াভাবে নিচে পড়তে থাকে। পানির এরূপ পতনকে জলপ্রপাত বলে। অর্থাৎ নদীর পানি হঠাৎ খাড়া ঢালে নিচে পতিত হলে তাকে জলপ্রপাত বলে। উত্তর আমেরিকার সেন্ট লয়েন্স নদীর বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এরূপে গঠিত হয়েছে।</p> <p> <a name=\"RIMG2\"></a></p> <p> (৫) নদীসোপান বা নদীমঞ্চ : অনেক সময় নদী অববাহিকায় ধাপে ধাপে কতগুলো ভূমির সৃষ্টি হয়। সিঁড়ির ন্যায় অবস্থিত এ ধাপগুলোকে নদীসোপান বা নদীমঞ্চ বলে। সাধারণত দুই প্রকারের নদীসোপান দেখা যায়। (ক) শিলা সোপান (খ) পলল সোপান।</p> <p> <a name=\"RIMG3\"></a></p> <p> (৬) বর্তুলাকার গর্ত বা স্বাভাবিক জলধারা : বর্ষাকালে নদীর গতিবেগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অনেক স্থানে নদীর পানি প্রবলবেগে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। এতে নদীর তলদেশের কোনো কোনো স্থানের নরম মাটি অপসারিত হয়ে সেখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে বর্তুলাকার গর্ত বলা হয়। বাংলাদেশের নদীগর্ভে বর্ষাকালে এরূপ বহু বর্তুলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়।</p> <p> <a name=\"RIMG4\"></a></p> <p> উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, নদীর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ মূলত প্রাথমিক গতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপ। যদিও মধ্যম গতিতে বাঁক সৃষ্টির মতো কিছু ক্ষয়জাত ভূমিরূপ উল্লিখিত হয়েছে, তবুও পার্বত্য গতিপ্রবাহে সৃষ্ট ক্ষয়জাত ভূমিরূপই মূলত নদীর ভূ-প্রকৃতির ক্ষয়সাধিত ভূমিরূপ।</p> <p>  </p> <p>  </p>