ঢাকা, সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ সফর ১৪৪৭

দ্রুত নিবন্ধন ও নীতিমালা করুন

  • সড়কের বিভীষিকা ইজি বাইক
শেয়ার
দ্রুত নিবন্ধন ও নীতিমালা করুন

সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে প্রতিদিন। প্রধান কারণ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশা। মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব তিন চাকার যানবাহন।

নিবন্ধনহীন এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, জানে না সড়কের নিয়ম-কানুন। ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সাধারণত এজাতীয় যানবাহনগুলো কারিগরিভাবে ব্যস্ত সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত না হওয়ায় দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে সড়কে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
মারা যাচ্ছে যাত্রী ও চালকের পাশাপাশি পথচারীরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইক নামে পরিচিত বাহনের কারণে। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হু হু করে বাড়ছে এজাতীয় বাহনও।

বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে।

নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানির পাশাপাশি দেশেও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী অনেক বেড়ে গেছে। বন্ধ করতে গেলে শুরু হয় সড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলন। কিন্তু এভাবে অবাধ প্রাণহানির লাগাম টানাও প্রয়োজন।

২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত এসব যানবাহন বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিলেও এগুলো বন্ধ করা যায়নি। মহাসড়কে চলা এসব বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়ক ভেদে এ ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।

২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা যায়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিআরটিএর দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যেমন জরুরি, একইভাবে নিরাপদ সড়কও জরুরি। মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত বেড়ে চলাটাও কাম্য নয়। যানজট কমানো এবং সড়কে যানবাহনের গতি রক্ষাও জরুরি। ইজি বাইক নামক যানবাহনগুলোর নিরাপত্তার মানোন্নয়ন ও চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এগুলোকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সমাধান, নাকি নতুন সংকট

    ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ
শেয়ার
সমাধান, নাকি নতুন সংকট

বাংলাদেশে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্ররাজনীতি বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে, যদিও আমাদের দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ছাত্ররাজনীতির বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে এবং জাতীয় নেতৃত্বের অনেকেই এর ভেতর দিয়ে উঠে এসেছেন। সম্প্রতি ঢাবির আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর ফলে সৃষ্ট জটিলতা। এক বছর আগে পতিত সরকারের আমলে নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে প্রশাসন বহাল রেখেছে।

ফলে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে ছাত্রদল ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর মতো সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা এবং রাজনৈতিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।

ছাত্রদল বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনের এখতিয়ার নেই শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীও একই সুরে বলেছে, কোনো ব্যক্তি একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারেন না।

এই প্রতিক্রিয়াগুলো ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনি ও বিধিগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। তবে এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে কি সত্যি ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত করা সম্ভব? অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনৈতিক সক্রিয়তা সম্পূর্ণভাবে দমন করলে তা প্রায়ই গোপনে, নিয়ন্ত্রণহীন ও প্রভাবহীন উপায়ে বেড়ে ওঠে। তাই নিষিদ্ধ শব্দটি ব্যবহারের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, তারা সমস্যার সমাধান করছে, নাকি সমস্যাকে আড়ালে ঠেলে দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ধরনের কিছু অভিযোগ উঠেছে একটি ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে।
বলা হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে তারা দলীয় কর্মকাণ্ড ও রিক্রুটমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আত্মত্যাগ আজও জাতির স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ছিল গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদ পতনের আন্দোলনেও ক্যাম্পাসগুলো ছিল প্রধান শক্তিকেন্দ্র।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই ছিলেন প্রথম সারির সাহসী কণ্ঠস্বর। ক্যাম্পাসে সহিংসতা, দখলদারি ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া অবশ্যই সমাধানের দাবি রাখে। তবে এর সমাধান হতে হবে স্বচ্ছ নিয়ম, গাইডলাইন ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে, যেখানে রাজনীতি করার অধিকারও রক্ষা পাবে।

তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে ছাত্ররাজনীতিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে এটিকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৈধ রাজনীতির সুযোগ দিতে হবে, যা তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে এবং ক্যাম্পাসে এক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।

মন্তব্য

সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিন

    সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অনেক চ্যালেঞ্জ
শেয়ার
সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। সেই হিসাবে সময় বাকি ছয় মাসের মতো। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো যেমন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, তেমনি ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রশাসন। প্রস্তুতি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ।

প্রশাসনের অনেকেই বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের বিষয়ে অনেকেই আপত্তি উঠাচ্ছেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
ভোটারদের মধ্যেও এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখেই এগিয়ে চলেছে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগ আমলে তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁদের নিয়েই বেশি সমস্যায় রয়েছে কমিশন। নির্বাচনে আট লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে।

এর একটি বড় অংশই আসে স্কুল শিক্ষকদের থেকে। বিগত তিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিতে গেলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংকট তৈরি হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারাও মনে করছেন, তাঁদের সবাইকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে না। বিশেষ করে পোলিং অফিসারদের সবাইকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। তাঁরা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে চার লাখ।
দশম ও দ্বাদশ মিলিয়ে এই সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে হতে পারে। তিনটি নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছিল, সেসব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, যাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কিংবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বাদ রাখার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই কর্মকর্তাদের অনেকেই ২০০১ কিংবা ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সঠিক হলে এই কর্মকর্তারা আবারও ভালোভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।

বিশেষজ্ঞরা বেশি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। বরাবরই দেখা যায়, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তত বেশি অবনতি হতে থাকে। এ বছর পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ গত বছর অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শ থানা, কারাগার ও পুলিশ স্থাপনায় হামলা হয়েছে। অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে। এখনো কিছু অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হয়, এগুলো সন্ত্রাসীদের কাছে চলে গেছে। নির্বাচনের সময় সেসবের অপব্যবহার হতে পারে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যও জোর প্রস্তুতি চলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোতে নতুন করে প্রায় ২০ হাজার জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এসব বাহিনীতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বভিত্তিক প্রশিক্ষণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। জানা যায়, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাঁদের সবাইকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচন শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নয়, নির্বাচন হবে অত্যন্ত উৎসবমুখর। এর অন্যতম কারণ, এই নির্বাচন আদায় করতে দেশের মানুষকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মন্তব্য

প্রশাসনের এমন অবক্ষয় কেন

    এতিমের চাল চুরি
শেয়ার
প্রশাসনের এমন অবক্ষয় কেন

দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাকে হার মানাচ্ছে। সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলার ৮৩টি মাদরাসা ও এতিমখানার জন্য বরাদ্দ ১৬৬ মেট্রিক টন চালের একটি বড় অংশ আত্মসাৎ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঈদুল আজহার আগে এতিমদের জন্য সরকারের দেওয়া চাল আত্মসাৎ করে সেই অর্থ অসাধু কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

ঘটনাটি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, চরম অমানবিকতারও প্রতিফলন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি চক্রের সহায়তায় এতিমখানার নামে বরাদ্দ করা চালের বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন। মাদরাসা ও এতিমখানার প্রধানদের নামমাত্র অর্থ দিয়ে বাকি চাল বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানোই হয়নি যে তাঁদের নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে।

এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতিম শিশুরা। শ্রীপুরের কেওয়া বাজার মারকাজুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সরকার চাল দিলে লিল্লাহ বোর্ডিং পরিচালনা অনেক সহজ হতো। তাঁর মন্তব্যটি এই বঞ্চিত শিশুদের করুণ অবস্থা তুলে ধরে। যাঁরা এতিমদের চাল আত্মসাৎ করেছেন, তাঁদের বিচার দাবি করেছেন তিনি।

ঘটনা নিছক দুর্নীতি নয়, এটি বিশ্বাসভঙ্গের চূড়ান্ত রূপ। এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো সরকারের দেওয়া চালের ওপর নির্ভর করেই শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করে। সেখানে চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা যেমন খাদ্য নিরাপত্তা হারায়, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিপাকে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, এতে সরকারি ত্রাণ তহবিলের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়, আর জনগণের করের টাকা অন্যায়ভাবে বণ্টিত হয়।

উপজেলা খাদ্যগুদামের রক্ষক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তাতিন পক্ষের কেউই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব স্বীকার করেননি, বরং অভিযোগ এড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

অথচ এত বড় পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ ও বিতরণে একাধিক পর্যায়ে নথি, স্বাক্ষর ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া থাকে। সেখানে এমন দুর্নীতি প্রশাসনিক উদাসীনতা ছাড়া সম্ভব নয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেনের বক্তব্যে দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতাই প্রকাশ পায়। তাঁরা বলছেন যে চাল বিক্রি করে টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাননি কিংবা অফিসের কেউ এই কাজে জড়িত নন। কিন্তু প্রতিবেদনের তথ্য-প্রমাণ এই কর্মকর্তাদের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে।

মানবিক ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ত্রাণ বিতরণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ এবং তৃতীয় পক্ষের পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

হত্যা-হামলা-মামলা বন্ধ হোক

    নিশ্চিত হয়নি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
শেয়ার
হত্যা-হামলা-মামলা বন্ধ হোক

গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আইনসভাএই তিনটি স্তম্ভের পরেই গণমাধ্যমকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে যুগে যুগে আমরা তার উল্টোটাই দেখে আসছি। গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছে এবং সাংবাদিকরা বরাবরই হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে তাই অন্যতম প্রত্যাশা হয়ে ওঠে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম। দেয়াল লিখনগুলোতেও তা স্পষ্ট। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও সেই পুরনো চিত্রই দেখতে পাই। ক্ষেত্রবিশেষে মনে হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আরো এক ধাপ পিছিয়েছে।

দেশে খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, অপহরণ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, লুটপাটক্রমেই ঊর্ধ্বগামী। গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকদের কাজ হলো সেসব ঘটনা তুলে ধরা এবং ঘটনার নেপথ্যে থাকা কারণগুলো উদঘাটন করা। এই কাজ করতে গিয়ে অতীতে হত্যা, নির্যাতন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা, এখনো হচ্ছেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনায় বহু মানুষের সামনে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

আগের দিন গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার কাছে প্রকাশ্যে টেনেহিঁচড়ে সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এই দুটি ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ হয়েছে। সেসব প্রতিবাদে শুধু গণমাধ্যমকর্মী নন, সমাজের সব স্তরের মানুষ অংশ নিয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে গত জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত ৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে তিনজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে হামলায় নিহত হয়েছেন।

সাংবাদিক তুহিনকে নিয়ে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দাঁড়াল চার। টিআইবি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে ২৭৪টি হামলার ঘটনায় ১২৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। গত মার্চে রাজধানীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী সাংবাদিক।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদের স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেখানে তথ্য প্রকাশ, মত প্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে বলে নোয়াব আশা করেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত এক বছরে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সংবাদপত্র কিংবা গণমাধ্যমে মব সৃষ্টি করে মালিকপক্ষকে হুমকি, ভয়ভীতি দেখানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

নোয়াবের পর্যবেক্ষণকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি, যেখানে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলেও আমরা একই প্রতিক্রিয়া দেখেছি।

আমরা চাই, গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হোক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক। হামলা, মামলা, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হোক।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ