ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিন

  • হানা দিচ্ছে বন্যা
শেয়ার
দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিন

বর্ষাকাল কেবল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে বন্যা কিংবা নদীভাঙনের প্রকোপ। টানা তিন দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে ফেনীর মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেনীর ফুলগাজীতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বরইয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।

এতে নতুন করে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বিজয়পুর, বসন্তপুর, ফতেহপুর, বশিকপুর ও জগত্পুর গ্রামের নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। এসব গ্রামের মৎস্য ও পোলট্রি খামারিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।

গত বছরও এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছিল। সেই দুর্ভোগের স্মৃতি এখনো প্রবল। নতুন করে প্লাবিত হওয়া এলাকার বাসিন্দারা জানায়, ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর দুই তীরে ১২২ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এটি এলাকার মানুষের আশীর্বাদ না হয়ে যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এই বাঁধটি প্রতিবছর ভেঙে একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়।

গত বৃহস্পতিবার  মুহুরী ও কুহুয়া নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী বাজারসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে নিয়ে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ফেনী পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানি বাড়ছে। বাঁধের ভাঙনস্থল রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পুরনো বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাজিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাছির মোহাম্মদ ঘাট ও মালাকারপাড়া এলাকায় ১০ হাজার পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প হাতে নিলেও নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। ফলে হালদাতীরের বাসিন্দারা বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে পানি নেমে আসাও অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা, ভূমিধস ও নদীভাঙনের আশঙ্কা থাকবেই। কিন্তু সেসব প্রতিরোধে এবং নদীভাঙন রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার আঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এর প্রধান কারণ আমাদের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। তাই নদী খননের মাধ্যমে নদী দিয়ে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করুন

    পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে আবারও সিন্ডিকেট
শেয়ার
দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করুন

পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রতিবছরই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ছাপার ক্ষেত্রে এক ধরনের সিন্ডিকেটের খবর উঠে আসে। এই চক্র শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই জিম্মি করে রাখছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনসিটিবি ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটে এখনো পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠরাই কলকাঠি নাড়ছে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বই ছাপার জন্য এবারও কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে ক্ষমতার প্রভাবে সক্ষমতার বাইরে কাজ নিয়েছে। গত রবিবার মুদ্রণশিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তার আগেই আওয়ামী সিন্ডিকেট, বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছোট ভাই মো. রাব্বানি জব্বারের নেতৃত্বে বেশির ভাগ কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। জানা যায়, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পাঠ্যবই ছাপার কাজে সিন্ডিকেটের ইচ্ছামতো কাজ ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সক্ষমতার বাইরে গিয়ে বড় ধরনের কাজ ধরে রাখা এবং বন্ধ প্রেসের নামে কাজ নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো অন্যান্য প্রেস মালিকদের অসহায় করে তুলছে।

এ ধরনের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে। নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির নামে ৩৩ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৩৬ জন প্রেস মালিকের বিষয়ে এনসিটিবির কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এই পদক্ষেপ দেরিতে নেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট এরই মধ্যে তাদের কাজ সেরে ফেলেছে। এই পরিস্থিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক সময়ে মানসম্মত বই সরবরাহ করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। পাঠ্যবই ছাপার মতো একটি মৌলিক বিষয়ে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিকেই দুর্বল করে দিচ্ছে।

এই চক্র ভাঙতে হলে শুধু প্রশাসক নিয়োগই যথেষ্ট নয়, বরং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যাতে কোনো সিন্ডিকেট আর শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে জিম্মি করতে না পারে।

মন্তব্য

নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র!

    রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি কেন
শেয়ার
নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র!

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি ছিল শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রসহ সারা দেশের সব মানুষের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেই ঐক্যের জোরেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক বছর যেতে না যেতেই সেই ঐক্য প্রায় হারিয়ে গেছে। রাজনীতিতে অনেক পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে।

এক পক্ষ আরেক পক্ষের চরিত্রহননে নেমে গেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম-হত্যার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতিতে গুপ্ত সংগঠনের আলামত স্পষ্ট হচ্ছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে দায়ী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এখনই লাগাম টানা না হলে এসব অপকর্ম বড় ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষ ও হানাহানির কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙ্গারি পণ্যের ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগের হত্যাকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। লন্ডনে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে, নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এরই প্রতিবাদস্বরূপ গত সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একই দিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদ শীর্ষক এই কর্মসূচি থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার বন্ধ করার এবং সোহাগ হত্যার শক্ত প্রতিবাদ করা হয়। প্রকৃত দোষীদের ধরে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়।

নয়াপল্টনের সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর যখন মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে, ঠিক সেই সময়ই কয়েকটি রাজনৈতিক মহল, কয়েকটি চক্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এই চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে যাতে নির্বাচন না হয় সেই চেষ্টা তারা করছে। একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, কোনো এক ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এমন আশঙ্কাই করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে রাওয়া ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। প্রায় পাঁচ মাস পর এসে সেনাপ্রধানের সেই সতর্কবার্তাই সচেতন সব মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেকেরই উপলব্ধি, সেনাপ্রধান সঠিক আশঙ্কাই করেছিলেন।

দেশের মানুষ আর কোনো সংঘাত-সহিংসতা চায় না। সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা মূলত রাষ্ট্রের, রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকারের। আমরা মনে করি, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হবে। গুপ্ত সংগঠনের অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য

সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

    বিচারপ্রক্রিয়ায় বড় বাধা
শেয়ার
সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

সাক্ষী হলো মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় মামলার বিচার কার্যক্রম। কিন্তু দেখা গেছে, বিভিন্ন মামলার অভিযোগপত্রে যাঁদের সাক্ষী করা হয়, শুনানির সময় তাঁদের বেশির ভাগ অনুপস্থিত থাকে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিভিন্ন মামলার অন্তত ৬৭ শতাংশ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি বলে এসব মামলা ঝুলে আছে।

প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার এক গভীর সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। সাক্ষীদের ব্যাপক অনুপস্থিতি কেবল বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে না, বরং মামলার জট বাড়িয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরো ঘনীভূত করছে। সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় হাজার হাজার মামলা ঝুলে আছে, যা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথকে কঠিন করে তুলছে।

সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করেই সত্য উদঘাটিত হয় এবং অপরাধীর বিচার হয়।

কিন্তু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পাঠানো ৪৮ হাজার ৮২৭টি সমনের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ সাক্ষী আদালতে হাজির হয়েছেন। এমনকি অন্যদিকে আদালতে উপস্থিত হয়েও প্রায় ২০০ সাক্ষী সাক্ষ্য না দিয়ে ফিরে গেছেন, যা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।

পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। দাপ্তরিক ব্যস্ততা, বদলি বা অবসরে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এমন উদাসীনতা বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার বিগত সরকারের আমলে সাক্ষীদের ভয়ে আদালতে না আসার কথা বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতেও যে এর বিশেষ উন্নতি হয়নি, তা স্পষ্ট। সাক্ষীদের অনুপস্থিতি কেবল মামলার জটই বাড়াচ্ছে না, এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা প্রমাণের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করছে।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, সাক্ষী হাজিরা নিশ্চিত করতে সাক্ষী সেল গঠন ও তার কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল মাধ্যমে ভিডিও সাক্ষ্যগ্রহণ চালু করা গেলে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে। তৃতীয়ত, সাক্ষীদের জন্য যথাযথ ভাতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাঁরা সাহস করে আদালতে হাজির হতে পারেন। পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে সাক্ষী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

    এখনো হয়নি জাতীয় সনদ
শেয়ার
দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও ১১ মাস পেরিয়েছে। এখনো অনেক মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। এখনো প্রণয়ন করা যায়নি একটি জাতীয় সনদ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে; সেটি ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে খানিকটা ছাড় দিয়ে হলেও এক জায়গায় আসার আহবান জানান তিনি।

কমিশনের কাজের অগ্রগতির ওপর যেহেতু রাষ্ট্রের সংস্কার ও বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকাংশেই নির্ভর করছে, তাই কমিশনের সাফল্য বা ব্যর্থতা মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।

প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এ আলোচনা চলে ১৯ মে পর্যন্ত। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি এমন ২০টির মতো বিষয়কে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে চিহ্নিত করে ঐকমত্য কমিশন। সেগুলোর বিষয়ে গত ৩ জুন থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল পর্যন্ত ১২তম দিনে ১৩টির মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল আলোচনা শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৪১(ক) সংশোধনের সময় অভ্যন্তরীণ গোলযোগের শব্দগুলোর পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। আর জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৫-এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন। এর আরো কিছু ব্যাখ্যা নিয়েও মতৈক্যের কথা জানান তিনি।

এদিকে দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। পারস্পরিক আক্রমণ ও কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, যা ঐকমত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত চলছে। কিন্তু বিএনপিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। গত রবিবার তারেক রহমান : দ্য হোপ অব বাংলাদেশ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকে যে অপপ্রচার হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এ ধরনের অপরাজনীতির সমালোচনা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানও। রবিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা দলের চরিত্র হনন একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়।

আমরা আশা করি, জুলাই সনদ অতি দ্রুত চূড়ান্ত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেবে। দেশ ক্রমেই একটি সফল নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ