ঢাকা, শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫
৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫
৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ সফর ১৪৪৭

উদ্যোক্তাদের আস্থায় নিতে হবে

  • ঘনীভূত সংকটের মধ্যে আসছে বাজেট
শেয়ার
উদ্যোক্তাদের আস্থায় নিতে হবে

দেশের শিল্প খাতে স্বস্তি নেই। দুরবস্থা বিরাজ করছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। ব্যাংকঋণে সুদের হার ৯ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ডলারের উচ্চমূল্য ও সংকট শিল্পে কাঁচামালসহ জরুরি আমদানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গ্যাস বা জ্বালানির সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এর ওপর বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। অথচ গণমাধ্যমের খবরাখবরে জানা যায়, শুধু জ্বালানিসংকটে বহু কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।
লোকসান টানতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ওপর চলছে শিল্পোদ্যোক্তাদের নানাভাবে হয়রানি। আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ফলে নতুন উদ্যোগ আসছে না, বরং শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হচ্ছে আগামী অর্থবছর বা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

দেশীয় উদ্যোক্তারা যখন সংকটে থাকেন, নতুন বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যান, তখন বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রেও ভাটা পড়ে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কম্পানিগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যবসার পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ ছাড়া সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি, আইনের অস্পষ্টতা ও জটিলতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেও তারা বড় ঝুঁকি মনে করে।

জরিপে আরো বলা হয়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ব্যাবসায়িক আস্থা সূচক ৪১.৮ থেকে কমে ৬.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশীয় উদ্যোক্তারাও আস্থার সংকটে রয়েছেন। এর ওপর আসন্ন বাজেটে শিল্প খাতে বিদ্যমান কর রেয়াত ও ভর্তুকি হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হলে অনেক স্থানীয় শিল্প, বিশেষত এসএমই ও নবীন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। পরে তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাস হবে। বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে আসন্ন বাজেটের মূল আকার সাত হাজার কোটি টাকা কমবে, দেশে যেমনটি অতীতে কখনো দেখা যায়নি। শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে বাজেট উত্থাপন করা হতে যাচ্ছে, তাতে বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ হবে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধ রপ্তানি বাজারেও নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিয়েই দুশ্চিন্তা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না, বাড়বে বেকারের সংখ্যা। তাই অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে বিদ্যমান শিল্পের সুরক্ষার পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো পরিবেশ সৃষ্টি ও রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে স্বচ্ছন্দ ও নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট ঘোষণার আগে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর সঙ্গে বসে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংকট ও তা থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কার্যকর উদ্যোগ নিন

    বিনিয়োগে স্থবিরতা
শেয়ার
কার্যকর উদ্যোগ নিন

দেশে শিল্প-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা চলছে। ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোক্তারা চরম দুঃসময় কাটাচ্ছেন। বাড়ছে আস্থাহীনতা।

পাশাপাশি দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে ঋণের উচ্চ সুদহার। এতে পুরনো ব্যবসার সম্প্রসারণ যেমন থমকে গেছে, তেমনি নতুন বিনিয়োগ গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না। তিনি বলেন, টাকা না ছাপিয়ে, ঋণনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে বিনিয়োগমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। গত বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন ২০২৫-এর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট : বিকাশ ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। এ কারণে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা দ্রুত নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে-বিদেশে নির্বাচনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে, তাঁরা বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না। আমরা সবাই মিলে সেই কাজটা করতে যাচ্ছি, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশের জন্য দেশি বিনিয়োগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীদের পণ্য ব্র্যান্ডিং করতে হবে, তাঁদের টেকনিক্যাল ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হবে। বিনিয়োগই অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার একমাত্র টেকসই সমাধান।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক। তাঁদের বেশির ভাগই অন্য কোনো কাজের সংস্থান করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে। অনেকে খেয়ে না খেয়ে শিল্পাঞ্চলেই পড়ে রয়েছেন, কাজের সন্ধান করছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অনেকেই বাধ্য হয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক স্থিতি। আবার অনেক কারখানা বন্ধ না হলেও ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। লোকসান দিচ্ছে। ফলে সময়মতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। এতেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

দেশে কর্মক্ষম জনশক্তি বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থান প্রয়োজন। সে জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। আমরা আশা করি, দেশের শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ জরুরি

    বড় ধরনের সামাজিক সংকটের শঙ্কা
শেয়ার
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ জরুরি

দেশজুড়েই এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এই কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধী তৎপরতার খবর প্রতিনিয়ত আসছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি আর রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে আটকে নেই, সারা দেশেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর অপরাধের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লাসহ প্রায় সব বড় শহরেই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোথাও তারা স্থানীয় বড় ভাই বা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সংগঠিত, কোথাও আবার প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে দাপট দেখাচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসব ক্ষেত্রেই কিশোরদের অংশগ্রহণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

কিশোর অপরাধীরা এখন এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

তাদের দৌরাত্ম্য কেবল ছিনতাই, চাঁদাবাজি বা মারামারির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, মাদক ব্যবসা, খুনাখুনি এবং প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তারা পুরো সমাজকে এক ভীতিকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে তা অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের সামাজিক সংকটের জন্ম দেবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় ভাই এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ আমলে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ব্যানারে কিশোর অপরাধীচক্রের সক্রিয় থাকার তথ্য উঠে এসেছে।

একইভাবে চট্টগ্রামে বড় ভাই পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

এই অপরাধপ্রবণতা আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়েরও প্রতিফলন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সঙ্গে তাদের তৎপরতাও বাড়ছে। নানা রকম অপরাধীচক্র তাদের ব্যবহারও করছে। সম্প্রতি রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্পে ১১ গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা ও সহিংসতার যে চিত্র উঠে এসেছে, তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিশোর অপরাধীরাও।

প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীরা কিশোরদের সহজেই প্রলুব্ধ করে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সহিংসতায় যুক্ত করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনলাইন আসক্তি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। দীর্ঘ সময় স্মার্টফোনে গেমস, টিকটক বা রিলসে ডুবে থাকা তাদের বাস্তব জগৎ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। খেলার মাঠের অভাব, পারিবারিক সময়ের ঘাটতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপযুক্ত পরিবেশ তাদের অপরাধপ্রবণতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অপরাধবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কিশোর অপরাধ দমনে শুধু পুলিশি অভিযান যথেষ্ট নয়। একদিকে আইনের প্রয়োগ, অন্যদিকে সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরোধদুই দিক থেকেই সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা বন্ধ, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের যুক্ত করার মতো উদ্যোগ নিতে হবে।

কিশোর গ্যাং একটি জাতীয় সংকটের রূপ নিয়েছে। এখনই সমন্বিত নীতি, কঠোর আইন প্রয়োগ ও সামাজিক পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু না করলে এই কিশোর অপরাধীরা আগামী দিনে আরো বড় অপরাধ নেটওয়ার্কে জড়িয়ে যাবে। রাষ্ট্র ও সমাজ দুই পক্ষেরই দায়িত্ব এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

মন্তব্য

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

    বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা
শেয়ার
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগে গতি নেই। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বিদ্যমান কলকারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ হারাচ্ছেন। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক। তাঁদের বেশির ভাগই অন্য কোনো কাজের সংস্থান করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে।
অনেকে খেয়ে না খেয়ে শিল্পাঞ্চলেই পড়ে রয়েছেন, একটি কাজের সন্ধান করছেন।

কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্ধ কারখানার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্পের। শিল্প মালিকরা বলছেন, ব্যাংকঋণে উচ্চ সুদহার, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, তদুপরি দফায় দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি সমস্যা, শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন কারণে দেশে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় এক বছরে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ১২২টি ও অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৯২টি কারখানা। এসব কারখানার প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এক বছরে গাজীপুরে ৭২টি কলকারখানা বন্ধ করা হয়েছে। বেকার হয়েছে এসব কারখানার প্রায় ৭৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। চট্টগ্রামে এক বছরে বন্ধ হয়েছে ২১টি কারখানা।
এখানে জাহাজ ভাঙা শিল্পই বেশি বিপদে আছে। এসব কারখানার কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ২৬টি এবং নরসিংদীতে ২০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে গত এক বছরে।

বন্ধ না হলেও অনেক কারখানা ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। অনেক কারখানা লোকসানে আছে। সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন, কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতেও লোকসান বাড়ছে এবং বন্ধ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে আরো অনেক কারখানা। অন্য এক খবরে দেখা যায়, গত মঙ্গলবারও আশুলিয়ার মাসকট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একই দিন গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকার রোয়া ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত চলছে এমন বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।

শিল্প-বাণিজ্যের এমন সংকটজনক অবস্থায় চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা প্রায় কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছেন না। ১৫-১৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কারখানা চলমান রাখার সাহসও পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। এমন উচ্চসুদে ঋণ নিলে নতুন করে গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিতে পারে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই দেশে শিল্প-কারখানার এমন দুরবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য

নতুন উচ্চতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক

    প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর
শেয়ার
নতুন উচ্চতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃপ্রতিম একটি দেশ। বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার অনেক বিনিয়োগ রয়েছে এবং আরো বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারও মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফর দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

এই সফরে স্বাক্ষরিত পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট বিনিময় চুক্তি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই চুক্তিগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দুই জাতির মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং কৌশলগত অংশীদারিকে আরো গভীর করার একটি দৃঢ় অঙ্গীকার।

এই সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো মানবসম্পদ খাতে সহযোগিতাকে আরো সম্প্রসারিত করা। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ বহু শ্রমিক কাজ করছেন।

সেখানে আরো অনেক কর্মী প্রেরণের সুযোগ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরো বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, তা লাখ লাখ বাংলাদেশি পরিবারের জীবনমানের উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশেষ করে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার প্রচলন এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশীয় কর্মীদের সমান সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এমওইউ ও নোট বিনিময় স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন, যা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার প্রতি তাঁদের আস্থা তৈরি করবে। হালাল ইকোসিস্টেম, এলএনজি সরবরাহ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কৌশলগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

পাশাপাশি শিক্ষা ও কূটনৈতিক প্রশিক্ষণসংক্রান্ত নোট বিনিময় চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময়ের পথ প্রশস্ত করবে। ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জন্য গ্র্যাজুয়েট পাস ভিসা চালুর অনুরোধ করা হয়েছে, এটি মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জোরালো সমর্থনও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পাশে থাকার এবং মায়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মালয়েশিয়ার সক্রিয় ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার বাংলাদেশের ওপর থেকে চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

সব মিলিয়ে এই সফরটি কেবল কিছু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল একটি কৌশলগত সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট বার্তা। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে, যা উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ