বৈশ্বিক পর্যায়ে রীতিমতো শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রশাসন নানা মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে। এর বিপরীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কযুদ্ধ বিশ্ববাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে।
বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে
- শুল্কযুদ্ধের মারাত্মক প্রভাব

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যেও একই পরিমাণ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার ওপরও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জানা যায়, দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে মোট ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ৭৫০ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ এই শিল্পে ৪০ লাখের বেশি শ্রমজীবী সরাসরি জড়িত। তাই অনেকে আশঙ্কা করছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। গতকাল প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নতুন করে শুল্কারোপের কারণে অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্রয়াদেশ স্থগিত করতে শুরু করেছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মূল্যছাড়ও চাইতে শুরু করেছে। তাঁদের ধারণা, ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় মার্কিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামলাতে এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অতিরিক্ত শুল্কারোপ অন্তত তিন মাস স্থগিত রাখার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

রাষ্ট্রকে পাশে দাঁড়াতে হবে
- গভীর সংকটে আহত জুলাইযোদ্ধাদের জীবন

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালিত হলো। ঠিক এক বছর আগে এই দিনটিতে জাতির ওপর গভীরভাবে গেড়ে বসা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে এই অভ্যুত্থান হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে। অনন্য ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বছর পার করলাম। অথচ গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত সহস্রাধিক মানুষের জীবনে নেমে এসেছে স্থায়ী দুর্দশা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের বর্তমান জীবন এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আহতদের চিকিৎসায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭৫ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ হাজার ৪২ জন গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধার মধ্যে সাত হাজার ৩৬৩ জনকে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক আহত ব্যক্তি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং আর্থিক সহায়তা তহবিলে অর্থসংকট দেখা দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে জুলাইযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা দেড় দশকের স্বৈরশাসনমুক্ত হলাম, তাঁদের জীবন ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব না? আমরা মনে করি, তাঁদের পুনর্বাসন ও আজীবন দেখভাল করা রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আহতদের পুনর্বাসন এবং তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই আহত জুলাইযোদ্ধাদের যেন ভুলে না যাওয়া হয়, বরং তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক, যা তাঁদের জীবনকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া জনগণের রক্ত ও ত্যাগ কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা চলবে না।

দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক
- আসন্ন জাতীয় নির্বাচন

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধু নয়, সাধারণ মানুষের আড্ডায়-আলোচনায়ও মুখ্য বিষয় এখন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনের টক শো, গোলটেবিল, সভা-সেমিনার—সর্বত্রই নির্বাচনের নানা দিক আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও কথা হচ্ছে। বিশেষ করে এই আলোচনা গতি পায় গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর।
অবশ্য নির্বাচন নিয়ে কিছু অস্পষ্টতাও যে ছিল না, তা নয়। অভিযোগ উঠছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সংস্কার ও বিচারকে অজুহাত করে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা বলছে, এসব দাবি পূরণ ছাড়া নির্বাচন নয়। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? কী নির্বাচন হবে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে আসার পর গত ৮ জুলাই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ফুলগিয়ারে প্রস্তুতি চলছে।’ এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তাঁর প্রদত্ত সময় অনুযায়ীও ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল মানুষের ভোটাধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকুক।

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
- শিল্প-বিনিয়োগের দুঃসময়

কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ হারাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এক বিপর্যয়কর অবস্থা নেমে আসছে। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের কারণে কয়েক বছর ধরেই শিল্প-কারখানা দুঃসময় পার করছিল।
শুধু গাজীপুর নয়, কমবেশি প্রায় একই রকম চিত্র দেশের অন্যান্য শিল্পাঞ্চলেও। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুরো বন্ধ না হলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে বহু কারখানা। তারাও শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।
শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের এমন সংকটজনক অবস্থায় চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামলাবেন এমন পরিস্থিতিও নেই। ঋণের সুদের হার ১৫-১৬ শতাংশ হয়ে গেছে। এমন উচ্চ সুদে ঋণ নিলে তা নতুন করে গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেবে। তার ওপর রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কোনো কোনো শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে বলেও গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সেই সঙ্গে আছে টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার সংকট। আছে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিও দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। এই অবস্থায় নিজস্ব শিল্প-কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগে আছেন বেশির ভাগ শিল্পোদ্যোক্তা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে শ্রমিকদের অনেক দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা উঠে এসেছে। একটি কারখানার অপারেটর ছিলেন রংপুরের পীরগাছার শেফালী বেগম (৪৮)। তিনি বলেন, ‘ঘরে স্বামী অসুস্থ। তিন সন্তানের সবাই লেখাপড়া করে। আমার আয়েই আগে সংসার চলত। এখন ঘরভাড়াসহ সংসার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করব?’ তিনি জানান, কাজের জন্য অনেক কারখানায় গিয়েছেন, কোথাও লোক নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাসাবাড়ির ঝিয়ের কাজ খুঁজছেন। স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ফোরম্যান আসকর হোসেন বলেন, ‘ছয় মাস ঘুরে চাকরি খুঁজে পাইনি। বাধ্য হয়ে এখন ইজি বাইক চালাচ্ছি। ইজি বাইকের জমার টাকা বাদ দিয়ে যা আয় হয় তাতে সংসার চলছে না।’
কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন সেখানে হচ্ছে উল্টোটা। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। শিল্প ও বিনিয়োগের এই দুরবস্থা দ্রুত কাটাতে হবে। তা না হলে শুধু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, দেশের স্থিতিশীলতাও হুমকিতে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ন্যায়বিচারের নতুন অধ্যায়
- বিচারের কাঠগড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। গণ-আন্দোলনে সহিংস দমন-পীড়ন এবং হাজারো নাগরিকের প্রাণহানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির প্রাক্কালে এই বিচার শুরু হওয়ায় এটি শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের হৃদয়বিদারক জবানবন্দি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকালে দমন-পীড়ন ও নৃশংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। একজন সাধারণ ড্রাইভার হিসেবে তাঁর ওপর চালানো নির্মম নির্যাতন, এক চোখ হারানো এবং মুখমণ্ডলের বিকৃত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে তৎকালীন সরকার প্রতিবাদ দমনে কতটা মরিয়া ছিল। তাঁর সাক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির বিবরণ নয়, বরং হাজার হাজার পঙ্গু ও নিহতদের হয়ে রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়ার এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যেও তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়ন, খুন ও গুমের সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।
এই বিচার শুধু শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নয়। এই বিচার একটি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এই বিচার প্রক্রিয়া কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়। এটি একটি জাতির আকাঙ্ক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার।
খোকনের মতো অসংখ্য মানুষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গুলিতে নিহত বা পঙ্গু হয়েছেন। তাঁর মুখের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব আজ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করছে। ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত ভিডিও ফুটেজ, চিকিৎসার বিবরণ এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় উন্মোচন করছে।
দেশের জনগণ আশা করে যে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন এবং যাঁরা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁরা সবাই ন্যায়বিচার পাবেন। এই বিচার যেন অতীত রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। ট্রাইব্যুনালের উচিত হবে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের ওপর এমন নির্মম দমন-পীড়ন চালানোর সাহস না করে। এই বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করেছে। যেখানে আইনের শাসন, জবাবদিহি এবং মানবাধিকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।