ঢাকা, রবিবার ২৭ জুলাই ২০২৫
১২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০১ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২৭ জুলাই ২০২৫
১২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০১ সফর ১৪৪৭

একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ

  • ইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি
শেয়ার
একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সমৃদ্ধ করা ও সুশিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তথা জাতির শিক্ষা বিকাশের জন্য এমপিওভুক্ত করা একটি জরুরি পদ্ধতি। কারণ এর সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, জীবন-জীবিকা, মান-মর্যাদার বিষয়টি জড়িত। শিক্ষা মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। এই অত্যাবশ্যক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতন জাতি সর্বাধিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র জাতিকে শিক্ষার আলোতে সুন্দর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুভ উদ্যোগইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ৪০ বছর পর এক হাজার ৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার ছয় হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। তাঁদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে নিজের শেষ কর্মদিবসে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হবেন। বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিওভুক্ত (বেসরকারি) শিক্ষকদের জন্যও সুখবর দিয়ে গেছেন। শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতার জন্য একটি তহবিল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা।

আমাদের দেশে শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার চাকরির ক্ষেত্রে। তাঁদের জীবন যাপন করার মতো বা ন্যূনতম জীবনমান সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতার জোগান দেওয়া হয় না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা দিতে বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। অথচ শিক্ষকদের অবসর সুবিধা পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধার অনেক আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে।

প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে এসব আবেদন নিষ্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অবসর সুবিধার জন্য বছরের পর বছর শিক্ষকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি সময় চলে যায়। বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা এ বিষয়ে একটি সুখবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতার জন্য একটি তহবিল তৈরি করা হচ্ছে। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা এবং অবসর ভাতাএটি হলো তাঁদের সবচেয়ে ন্যায্য দাবি উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, তাঁদের ওই দাবিটিই সবচেয়ে আগে মেটানো উচিত।    

শিক্ষকদের অর্থনৈতিক দীনতার কারণে মেধাবী ছাত্ররা পাস করে শিক্ষকতা পেশায় যেতে চায় না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া শিক্ষার প্রসার কখনো সম্ভব নয়। জাতির শিক্ষা বিকাশের জন্য এমপিওভুক্ত করা একটি জরুরি পদ্ধতি। কারণ এর সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, জীবন-জীবিকা, মান-মর্যাদার বিষয়টি জড়িত, যা সরাসরি শিক্ষার বিকাশে বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের এই শুভ উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সুরক্ষায় নজর বাড়ান

    সুসংবাদ দিচ্ছে সুন্দরবন
শেয়ার
সুরক্ষায় নজর বাড়ান

সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং বাংলাদেশের গর্ব। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় এটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। রক্ষা করে পেছনের জনপদকে। সেই সুন্দরবনের জন্য একটি সুসংবাদ হলো, গত পাঁচ বছরে বনটির প্রকৃতি অনেক বেশি জীবন্ত হয়েছে, অনেক বেশি প্রাণপ্রাচুর্য ফিরে পেয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাছের ঘনত্ব, কাঠের পরিমাণ ও গ্রোয়িং স্টকসবই বেড়েছে। সুন্দরবনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কার্বন বাণিজ্যের সম্ভাবনা। সুন্দরবন ছাড়াও উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃজন করা হয়েছে, যেগুলো প্রায় একইভাবে রক্ষা করবে উপকূলীয় জনপদকে।

বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে হেক্টরপ্রতি গাছের ঘনত্ব, কার্বন শোষণের পরিমাণ, বায়োমাস বা কাঠের পরিমাণসহ নানা বিষয়ের তথ্য জানতে প্রথম জরিপ চালানো হয় ২০১৯ সালে।

পাঁচ বছর পর দ্বিতীয় বন জরিপের ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে সুন্দরবনে মোট কার্বন শোষণ ছিল ছয় কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২৫ সালে তা উন্নীত হয়েছে সাত কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টনে। ফলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কার্বন শোষণের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ লাখ ১০ হাজার টন।
ফলে পরবর্তী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্বন বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি হবে। ২০১৯ সালে প্রতি হেক্টরে বায়োমাস বা কাঠের পরিমাণ ছিল ৯৮.৩৮ টন। ২০২৫ সালে তা উন্নীত হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১১১.২০ টনে। ২০১৯ সালে সুন্দরবনে গ্রোয়িং স্টক ছিল ৯৭.৭৫ ঘনমিটার। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪.৭০ ঘনমিটারে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমের মধ্যে অবস্থানরত উদ্ভিদ প্রাণীর পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সুন্দরবনের জন্য কিছু খারাপ খবরও আছে। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে যেমন বনজীবীদের অবহেলা আছে, তেমনি আছে উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ড। গাছ বা কাঠ চুরি, হরিণ, বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না। গতকাল প্রকাশিত অন্য এক খবরে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গত দুই মাসে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় বন বিভাগের ৮৬টি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজন চোরা শিকারিসহ খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরা আরো ৩১ জন জেলেকে। সময় জব্দ করা হয় ৫৩টি ট্রলার, নৌকাসহ তিন টন ওজনের জাল, বিষযুক্ত ৩২৫ কেজি মাছ, ১৩টি বোতল ভর্তি বিষসহ নানা সামগ্রী।

আমরা আশা করি, কঠোর নজরদারির মধ্যে সুন্দরবনের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বনের সুরক্ষায় নজর দিতে হবে।

মন্তব্য

প্রতিরোধে কঠোর হতে হবে

    ভয়ংকর রূপে মাদকের বিস্তার
শেয়ার
প্রতিরোধে কঠোর হতে হবে

দেশে মাদকাসক্তি ক্রমে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই মাদকের ছড়াছড়ি। শুধু তরুণ-যুবা নয়, কিশোর-কিশোরীরাও ক্রমেই বেশি সংখ্যায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এর প্রধান কারণ মাদকের সহজলভ্যতা।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গাজীপুর, লক্ষ্মীপুর ও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তজুড়ে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গাজীপুর ও লক্ষ্মীপুরের মতো জনবহুল এলাকায় মাদকের জমজমাট কারবার এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে মাদকের অবাধ প্রবেশ প্রমাণ করে দেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি কেবল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে না, বরং সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে।

জানা যায়, গাজীপুরে মাসে শতকোটি টাকার মাদক কারবার চলছে, যেখানে দুই শতাধিক স্থানে মাদকের হাট এবং পাঁচ শতাধিক পাইকারি কারবারি সক্রিয়।

এসব কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি মাদকসম্রাজ্ঞীরা। অন্যদিকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত সন্তানের যন্ত্রণায় অভিভাবকরা অতিষ্ঠ। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সন্তানরা মা-বাবাকে মারধর করছে, এমনকি খুনও করছে। টঙ্গীর বস্তিগুলো; যেমনএরশাদনগর, মাজার বস্তি, ব্যাংকের মাঠ বস্তি কেরানীর টেক বস্তি মাদকের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যেখানে নারী কারবারিদের দাপট চোখে পড়ার মতো।

লক্ষ্মীপুরের চিত্রও একই রকম উদ্বেগজনক। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, জেলায় ৪২ জন মূল হোতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে মাসোহারা দিয়ে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় হত্যা এবং মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে গুলি চালানোর ঘটনা প্রায় নিয়মিত। অন্যদিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক অবাধে প্রবেশ করছে।

কাঁটাতারবিহীন সীমান্ত এলাকাগুলো মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এই ব্যবসা চলছে।

জানা যায়, মাদকের ভয়ংকর বিস্তারের কারণে পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে এখন উচ্ছৃঙ্খল মাদকসেবীদের বাড়বাড়ন্ত। মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বাড়ছে খুনাখুনি। মাদকের অর্থ সংগ্রহের জন্য এসব তরুণের অনেকেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একটি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। মাদকের বিস্তার এভাবে চলতে থাকলে দেশের যুবসমাজ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এর লাগাম টানতেই হবে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সুস্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনের স্বচ্ছতা স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। প্রতিটি মাদক মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাক্ষী সুরক্ষা এবং জামিনব্যবস্থার অপব্যবহার রোধে আইনি সংস্কার জরুরি। সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি এবং আন্তর্দেশীয় সমন্বয় জোরদার করতে হবে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদক শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, এটি পারিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রেরও এক জটিল সমস্যা।

মন্তব্য

শোক, মানবিকতা এবং জরুরি প্রশ্ন

    মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
শেয়ার
শোক, মানবিকতা এবং জরুরি প্রশ্ন

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে, যা শোকস্তব্ধ করেছে পুরো জাতিকে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার চতুর্থ দিনেও ক্যাম্পাসের থমথমে পরিবেশ, নিখোঁজদের জন্য অভিভাবকদের হাহাকার এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির বেদনাদায়ক চিত্র তুলে ধরেছে। এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং আমাদের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষত, যা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৪-এ পৌঁছেছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ৪৯ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর মধ্যে বেশির ভাগই স্কুল শিক্ষার্থী। প্রিয় সন্তান, শিক্ষক ও অভিভাবক হারানোর বেদনা যেন পুরো মাইলস্টোন ক্যাম্পাসকে গ্রাস করেছে। নিখোঁজদের খোঁজে দিশাহারা মা-বাবাদের আহাজারি এবং পোড়া ব্যাগ ও ছেঁড়া খাতার মতো স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহের চেষ্টা আমাদের শোককে গভীর ও মর্মস্পর্শী করে তোলে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানবিক দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, যা কিছুটা স্বস্তি এনেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। মেজর মেহেদী হাসান ও সৈনিক আশিকের মতো সেনা সদস্যরা নিজেদের ইউনিফর্ম খুলে মা ও সন্তানের মরদেহ ঢেকে দিয়ে যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যি প্রশংসনীয়। ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে আহতদের উদ্ধার এবং হাসপাতালে প্রেরণে তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা দেশের সংকটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনীর দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার উদাহরণ হয়ে থাকবে। অন্যদিকে আহতদের চিকিৎসায় সিঙ্গাপুর, ভারত ও চীনের চিকিৎসকদলের আগমনও আন্তর্জাতিক সহমর্মিতার বার্তা বহন করে।

তবে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে কিছু জরুরি প্রশ্নও সামনে এসেছে। যুদ্ধবিমান কেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিধ্বস্ত হলো? প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা প্রোটোকল কী ছিল? এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। তবে সমানভাবে জরুরি আহত ও নিহতদের পরিবারকে স্থায়ী পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া। যে শিশুরা আর কখনো স্কুলে ফিরবে না, তাদের পরিবারের প্রতি জাতির দায় কেবল দয়া নয়, দায়িত্ব।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির এই শোকাবহ মুহূর্তে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করার পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

এটিই হবে নিহতদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দেওয়ার পথ।

 

মন্তব্য

আসন্ন বিপর্যয় রোধ করুন

    শিল্প-বিনিয়োগে স্থবিরতা
শেয়ার
আসন্ন বিপর্যয় রোধ করুন

দেশের অর্থনীতি ভয়ংকর বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন  শিল্পোদ্যোক্তারা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেশের উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের প্রকাশিত হতাশার সুর।

কয়েক বছর আগেও যেসব উদ্যোক্তা বলতেন, এবার কারখানায় নতুন লাইন চালু করব, আধুনিক যন্ত্র আনব, রপ্তানির বাজার বাড়াব, তাঁরাই এখন বলেন, ব্যাংকের কিস্তি মেটাতে পারব তো? উচ্চ সুদের ভয়াল ছায়া, ডলার সংকটের দীর্ঘ রেশ এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এতে গতি হারাচ্ছে দেশের শিল্প খাত।

কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের টুঁটি চেপে ধরার মতো নানামুখী সংকট ও অস্থিরতা। এর মধ্যে ছিল করোনা মহামারি, যা চলেছে কয়েক বছর ধরে।

এরপর এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা। প্রভাব রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধ। ক্ষমতার পালাবদলের পরও সংকট না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে।
চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা।

নানা রকম সংকটে সাম্প্রতিক সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯.৬ শতাংশ, যা শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি বিনিয়োগ মন্দার স্পষ্ট লক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যেসব খাতে আমদানি হ্রাস সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে চামড়াশিল্প শীর্ষে। এ ছাড়া প্যাকেজিং, বস্ত্র ও পাট খাতও রয়েছে তালিকায়। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে এই খাতে ঋণছাড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.১৭ শতাংশ, আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭.৫০ শতাংশ। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এক বড় অশনিসংকেত। ঋণপ্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার জন্য মূলত দায়ী ঋণের উচ্চ সুদহার, যা এখন ১৬ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

ক্রমবর্ধমান সংকটে গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ। এর সঙ্গে বিদ্যমান ১৬ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে তা দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের শুল্কের পরিমাণ অনেক কম। ফলে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। তাঁরা তাকিয়ে আছেন ২৯ জুলাইয়ের চূড়ান্ত আলোচনার দিকে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শিল্পায়নের স্বপ্ন ভেঙে গেলে শুধু কর্মসংস্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বাংলাদেশ হারাবে আত্মমর্যাদা ও ভবিষ্যতের পথ। তাই যেকোনো মূল্যে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আর সে জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ