ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ মহররম ১৪৪৭

মনিটরিং জোরদার করুন

  • সিন্ডিকেটের কবলে বিমানের টিকিট
শেয়ার
মনিটরিং জোরদার করুন

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুরবস্থা সর্বজনবিদিত। এর জন্য মূলত দায়ী করা হয় সংস্থাটির অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি বিমানে টিকিট কালোবাজারি করছে। আর তাদের লোভের মাসুল গুনছে রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সাধারণ বিমানযাত্রীরা।

অভিযোগ আছে, এই ট্রাভেল এজেন্ট সিন্ডিকেটের কবজায় চলে গেছে বিমানের টিকিট। তারা বিশেষ বিশেষ রুটে বিমান বাংলাদেশসহ কিছু এয়ারলাইনসের টিকিট আগাম ব্লক করে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় এবং পরে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়। এ কারণে বিমানের বিদেশগামী যাত্রীদের স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়। যাত্রী, কর্মী ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিন্ডিকেটের কারণে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার টিকিট কখনো কখনো কিনতে হয় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী এবং দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো সময়ে কোনো কোনো রুটে টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো নিজেদের চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত লাভের আশায় বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট ব্লক করে রাখে। আর বিমান বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়া শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে এরা দু-তিন মাস আগেই এয়ারলাইনসগুলোর সিট বুকিং করে থাকে। পরবর্তীকালে সাধারণ যাত্রীরা সেসব এয়ারলাইনসে টিকিট কিনতে গেলে দেখানো হয় টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তখন সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো বেশি দাম নিয়ে সেই টিকিট বিক্রি করে। জানা যায়, রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহা, কুয়ালালামপুরসহ বেশ কিছু রুটে এই পদ্ধতিতে যাত্রীদের পকেট বেশি কাটা হয়। বিশেষ করে হজের মৌসুমে সিন্ডিকেটের তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি। আটাবের মতে, এই সমস্যা সমাধানে বিমান মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশনকে ভূমিকা রাখতে হবে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে সরকারকে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে অথবা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলে সমঝোতা করতে হবে। সিন্ডিকেট বন্ধে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের যাতায়াত বেশি, সেসব দেশে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটগুলোতে স্বচ্ছন্দে টিকিটপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উচ্ছেদ আতঙ্কে স্থানীয়রা

    জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা
শেয়ার
উচ্ছেদ আতঙ্কে স্থানীয়রা

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। টেকনাফের বাতাসে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের পাশাপাশি ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধ তৎপরতা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে।

মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা এখন রোহিঙ্গাদের হাতে রীতিমতো জিম্মি। অন্যায়-অপরাধের শিকার হলে প্রতিবাদ করার ভাষাও তারা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
অনেকে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ছয় লাখ, আর রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। তার পরও প্রতিদিনই মায়ানমার থেকে আসছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে এসেছে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা।

তথ্য মতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে কম করে হলেও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। সেই হিসাবে দৈনিক গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮২টি শিশু। ফলে এই দুটি উপজেলায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে।

শুধু রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধিই সমস্যার কারণ নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রদত্ত আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা ক্রমেই কমছে।

এখানে তাদের কর্মসংস্থান বা আয়-উপার্জনেরও বিশেষ সুবিধা নেই। অর্থনৈতিক কারণেও তারা বাধ্য হয় নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতায় জড়িয়ে যেতে। স্থানীয় অপরাধী চক্রগুলোও তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। যোগ দিচ্ছে নানা ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনেও। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানেও তাদের ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর তারা শুধু কক্সবাজারেই নয়, এসব চক্রের মাধ্যমে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, পাঁচ বছরে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হয়, তাদের একটি বড় অংশ নানা ধরনের অপরাধী চক্রের সঙ্গে ভিড়ে গেছে।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তিনি জানান, অস্ত্র ও মাদক প্রথমে ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করা হয়, পরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর প্রতিটি দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে একরকম জিম্মিদশার মধ্যে আছে উখিয়ার মানুষ। তাদের ভয়ে সারাক্ষণ স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে হয়। স্থানীয়দের রাত কাটে রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।

 

মন্তব্য

পোশাকশিল্প রক্ষা করতে হবে

    ১০ লাখ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
শেয়ার
পোশাকশিল্প রক্ষা করতে হবে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এই খাত শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল উৎস নয়, প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, যাঁদের বড় অংশ নারী, এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা গোটা অর্থনীতিকেই গভীর অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ঘোষণা কার্যকর হলে প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিকের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বর্তমানে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে প্রায় ৫১ শতাংশে দাঁড়াবে। এই বর্ধিত শুল্কের বোঝা বহন করা ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সহস্রাধিক কারখানা।

এরই মধ্যে ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করছে এবং বাড়তি শুল্কের খরচ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা লাভের অংশ কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের মুখে ফেলছে। এমনকি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে, যা আসন্ন সংকটের পূর্বলক্ষণ।

এই শুল্কচাপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশের বস্ত্র খাতও অভ্যন্তরীণভাবে গভীর সংকটে ভুগছে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্তসবকিছুই এই শিল্পের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।

এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাধিক টেক্সটাইল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সম্মিলিত চাপ দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতকে পঙ্গু করে দিতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বৃহৎ ও সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ হারাতে পারে না। তিনি শুল্কসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকারকে জোরালো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারাও সরকারের কাছে লবিইস্ট নিয়োগসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।

প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১০ শতাংশ শুল্কহারের জন্য আলোচনা করছে, সেখানে বাংলাদেশের জন্য ৫১ শতাংশ শুল্কহার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলবে।

এই মহাচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক পদক্ষেপ অপরিহার্য। শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা প্রয়োজন। সরকার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি ভিত্তিতে গম আমদানিসহ বিভিন্ন পণ্যে বাণিজ্য সমন্বয়ের চেষ্টা করছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তা যথেষ্ট নয়। ১ আগস্টের আগেই আলোচনায় স্পষ্ট অগ্রগতি ও সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন।

অভ্যন্তরীণ শিল্প বাঁচাতে এআইটি ও সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। অন্যথায় লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে এবং দেশের অর্থনীতি এক দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সম্মুখীন হবে।

মন্তব্য

দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করুন

    পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে আবারও সিন্ডিকেট
শেয়ার
দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করুন

পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রতিবছরই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ছাপার ক্ষেত্রে এক ধরনের সিন্ডিকেটের খবর উঠে আসে। এই চক্র শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই জিম্মি করে রাখছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনসিটিবি ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটে এখনো পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠরাই কলকাঠি নাড়ছে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বই ছাপার জন্য এবারও কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে ক্ষমতার প্রভাবে সক্ষমতার বাইরে কাজ নিয়েছে। গত রবিবার মুদ্রণশিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তার আগেই আওয়ামী সিন্ডিকেট, বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছোট ভাই মো. রাব্বানি জব্বারের নেতৃত্বে বেশির ভাগ কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। জানা যায়, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পাঠ্যবই ছাপার কাজে সিন্ডিকেটের ইচ্ছামতো কাজ ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সক্ষমতার বাইরে গিয়ে বড় ধরনের কাজ ধরে রাখা এবং বন্ধ প্রেসের নামে কাজ নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো অন্যান্য প্রেস মালিকদের অসহায় করে তুলছে।

এ ধরনের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে। নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির নামে ৩৩ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৩৬ জন প্রেস মালিকের বিষয়ে এনসিটিবির কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এই পদক্ষেপ দেরিতে নেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট এরই মধ্যে তাদের কাজ সেরে ফেলেছে। এই পরিস্থিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক সময়ে মানসম্মত বই সরবরাহ করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। পাঠ্যবই ছাপার মতো একটি মৌলিক বিষয়ে সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিকেই দুর্বল করে দিচ্ছে।

এই চক্র ভাঙতে হলে শুধু প্রশাসক নিয়োগই যথেষ্ট নয়, বরং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যাতে কোনো সিন্ডিকেট আর শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে জিম্মি করতে না পারে।

মন্তব্য

নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র!

    রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি কেন
শেয়ার
নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র!

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি ছিল শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রসহ সারা দেশের সব মানুষের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেই ঐক্যের জোরেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক বছর যেতে না যেতেই সেই ঐক্য প্রায় হারিয়ে গেছে। রাজনীতিতে অনেক পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে।

এক পক্ষ আরেক পক্ষের চরিত্রহননে নেমে গেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম-হত্যার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতিতে গুপ্ত সংগঠনের আলামত স্পষ্ট হচ্ছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে দায়ী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এখনই লাগাম টানা না হলে এসব অপকর্ম বড় ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষ ও হানাহানির কারণ হতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙ্গারি পণ্যের ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগের হত্যাকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। লন্ডনে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে, নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এরই প্রতিবাদস্বরূপ গত সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একই দিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদ শীর্ষক এই কর্মসূচি থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার বন্ধ করার এবং সোহাগ হত্যার শক্ত প্রতিবাদ করা হয়। প্রকৃত দোষীদের ধরে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়।

নয়াপল্টনের সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার আহবান জানান।

তিনি বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর যখন মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে, ঠিক সেই সময়ই কয়েকটি রাজনৈতিক মহল, কয়েকটি চক্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এই চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে যাতে নির্বাচন না হয় সেই চেষ্টা তারা করছে। একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, কোনো এক ইসলামী সংগঠন বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এমন আশঙ্কাই করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে রাওয়া ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। প্রায় পাঁচ মাস পর এসে সেনাপ্রধানের সেই সতর্কবার্তাই সচেতন সব মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেকেরই উপলব্ধি, সেনাপ্রধান সঠিক আশঙ্কাই করেছিলেন।

দেশের মানুষ আর কোনো সংঘাত-সহিংসতা চায় না। সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা মূলত রাষ্ট্রের, রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকারের। আমরা মনে করি, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হবে। গুপ্ত সংগঠনের অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ