ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

শিক্ষার মানোন্নয়নে জোর দিন

  • বেসরকারি মেডিক্যালে শিক্ষার্থী সংকট
শেয়ার
শিক্ষার মানোন্নয়নে জোর দিন

আগামী ৫ জুন এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে, অথচ অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে নির্ধারিত আসনসংখ্যার অর্ধেক শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। কমে গেছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যাও। প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী এলেও এ বছর আবেদনই এসেছে দেড় হাজার। ফলে অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাওয়া ফি দিয়ে সারা বছরের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কিত।

এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের দাবি, এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিই শিক্ষার্থী সংকটের প্রধান কারণ। তারা অটোমেশন পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। অন্যদের ভাষ্য, অটোমেশন আগে থেকেই চলে আসছে। এত দিন শিক্ষার্থী সংকট না হলে এখন সংকট হচ্ছে কেন? তাই সংকটের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। বলা হয়ে থাকে, এগুলোতে ভর্তি বাণিজ্য যতটুকু হয়, লেখাপড়া ততটা হয় না। কার্যক্ষেত্রেও তার কিছু প্রতিফলন দেখা যায়। পরিসংখ্যান বলে, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করার পরও অনেকে চিকিৎসা পেশায় আসেন না।

আবার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গিয়ে বেসরকারি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেন না। তাই অভিভাবকরাও প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সন্তানদের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়াতে এখন আর আগের মতো আগ্রহী হচ্ছেন না। আবার উল্টো চিত্রও দেখা যায়। যেসব বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সুনাম আছে, শিক্ষার পরিবেশ ভালো; সেসব কলেজে শিক্ষার্থীর কোনো ঘাটতি নেই। কোনো আসনই শূন্য থাকছে না।
বিদেশি শিক্ষার্থী কম আসার অন্যতম কারণ মনে করা হয়, বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষায় ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশনের স্বীকৃতি না থাকা। এ কারণে এখান থেকে সনদ নেওয়ার পরও একজন শিক্ষার্থীকে উন্নত কোনো দেশে উচ্চতর শিক্ষা নিতে কিংবা চাকরি পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। তাই শিক্ষার্থী সংকটের জন্য শুধু অটোমেশনকে দোষ না দিয়ে সমস্যার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে সেসব সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বরং দেখা যায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি সম্পন্ন করায় কিছু মেডিক্যাল কলেজের আয় কমে গেলেও শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মানদণ্ড ধরে রাখা যাচ্ছে।

রোগীর জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসা শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বৈষম্য কাম্য নয়

    নারী শহীদদের পরিবারে হাহাকার
শেয়ার
বৈষম্য কাম্য নয়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরশাসনের পতন হয়েছিল। আর এই অভ্যুত্থানের সাফল্যের পেছনে আছে অনেক করুণ কাহিনি। অনেক রক্ত ঝরেছে। অনেক মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, ভাই বোন হারিয়েছে, সন্তান মা-বাবা হারিয়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে নিহত হওয়া ১১ জন নারীর কথা। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তাঁর মরদেহ পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। বছর ঘুরে এলেও হাহাকার থামেনি তাঁদের পরিবার কিংবা স্বজনদের।
ভুলতে পারেননি শিক্ষক কিংবা সহপাঠীরা।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন রিতা আক্তার (১৮)। বাবা রিকশা চালিয়ে আর মা বাসাবাড়িতে কাজ করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত বছর ৫ আগস্ট তিনি যোগ দিয়েছিলেন লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে।

কিন্তু মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় তাঁকে। মিরপুরের হজরত শাহ আলী মহিলা কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মেহেরুন নেছা তানহা। ৫ আগস্ট আনন্দ মিছিল শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে জানালা দিয়ে আসা গুলিতে প্রাণ হারান তানহা। ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ ১৯ জুলাই নিজ বাসার ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল নাইমা সুলতানা।
১৯ জুলাই বিকেলে নিজ বাসার বারান্দায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় নাইমা। সাভার এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসা হোসেনও পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। রাজধানীর শান্তিনগরে ১৪ তলা ভবনের সাততলায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন ১৮ বছর বয়সী লিজা। ১৮ জুলাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ২২ জুলাই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই বিকেলে চিটাগাং রোডে নিজের বাসার পাশে হৈচৈ শুনে বারান্দায় গিয়ে উঁকি দেন সুমাইয়া আক্তার। গ্রিলের ভেতর দিয়ে গুলি এসে তাঁর প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তানের জননী। ১৯ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বাসার ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাছিমা আক্তার (২৪)। শনির আখড়ায় বসবাসকারী শাহিনূর বেগম (৫৭) ২২ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ২০ জুলাই শহীদ হন মায়া ইসলাম (৬০)।

অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে এখন এক ধরনের কাড়াকাড়ি চলছে। কিন্তু আসল কৃতিত্ব যাঁদের, যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলো কেমন আছে সেই খোঁজ কজন রাখেন? যে বৈষম্য বিলোপে এত আত্মত্যাগ, আমরা চাই না শহীদদের পরিবারগুলো সেই বৈষম্যের শিকার হোক।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

    গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা
শেয়ার
জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বনির্ধারিত পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে পতিত হলেও স্বৈরাচারের চরিত্র পাল্টায়নি। তাদের হামলায় বুধবার গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা হামলা-সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং তাদের সমর্থকরা দফায় দফায় এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করতে হয়।

গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়।

ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসীরা এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। বুধবার এক বিবৃতিতে হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহবানও জানান তিনি। এনসিপির মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে পৌঁছার আগেই সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন তিন পুলিশ সদস্য হামলার শিকার হন। সকাল ১১টায় টেকেরহাট সড়কের কংশুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতেও হামলা চালালে গাড়িচালক মো. মইন আহত হন। কেন্দ্রীয় নেতারা দুপুর ২টার পর সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন এবং সমাবেশ শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৩টায় সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।

চারদিক থেকে এনসিপির নেতাকর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেয় তারা। ওই সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষে অবরুদ্ধ এনসিপির শীর্ষ নেতারা বিকেল ৫টার পর সেনাবাহিনী-র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় শহর থেকে বের হয়ে খুলনায় যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গোপালগঞ্জের ঘটনায় আবারও প্রমাণ হলো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কতটা জরুরি। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনী গোপালগঞ্জের সহিংসতাকে যেভাবে মোকাবেলা করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে এনসিপির নেতাকর্মীরা রক্ষা পেয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

নিকট অতীতে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। মতপ্রকাশের অধিকার নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল। দেশের সম্পদ লুটপাট করা হয়েছিল। আর এসব কারণে গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের মানুষ একযোগে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। দেড় দশকের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছিল। তারা আবারও নানাভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এসব অপচেষ্টা প্রতিরোধে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মন্তব্য

উচ্ছেদ আতঙ্কে স্থানীয়রা

    জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা
শেয়ার
উচ্ছেদ আতঙ্কে স্থানীয়রা

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। টেকনাফের বাতাসে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের পাশাপাশি ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধ তৎপরতা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে।

মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা এখন রোহিঙ্গাদের হাতে রীতিমতো জিম্মি। অন্যায়-অপরাধের শিকার হলে প্রতিবাদ করার ভাষাও তারা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
অনেকে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ছয় লাখ, আর রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। তার পরও প্রতিদিনই মায়ানমার থেকে আসছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে এসেছে আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা।

তথ্য মতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে কম করে হলেও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। সেই হিসাবে দৈনিক গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৮২টি শিশু। ফলে এই দুটি উপজেলায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে।

শুধু রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধিই সমস্যার কারণ নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রদত্ত আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা ক্রমেই কমছে।

এখানে তাদের কর্মসংস্থান বা আয়-উপার্জনেরও বিশেষ সুবিধা নেই। অর্থনৈতিক কারণেও তারা বাধ্য হয় নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতায় জড়িয়ে যেতে। স্থানীয় অপরাধী চক্রগুলোও তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। যোগ দিচ্ছে নানা ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠনেও। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানেও তাদের ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর তারা শুধু কক্সবাজারেই নয়, এসব চক্রের মাধ্যমে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, পাঁচ বছরে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হয়, তাদের একটি বড় অংশ নানা ধরনের অপরাধী চক্রের সঙ্গে ভিড়ে গেছে।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানান, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তিনি জানান, অস্ত্র ও মাদক প্রথমে ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করা হয়, পরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর প্রতিটি দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে একরকম জিম্মিদশার মধ্যে আছে উখিয়ার মানুষ। তাদের ভয়ে সারাক্ষণ স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে হয়। স্থানীয়দের রাত কাটে রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।

 

মন্তব্য

পোশাকশিল্প রক্ষা করতে হবে

    ১০ লাখ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
শেয়ার
পোশাকশিল্প রক্ষা করতে হবে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এই খাত শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল উৎস নয়, প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক, যাঁদের বড় অংশ নারী, এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা গোটা অর্থনীতিকেই গভীর অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ঘোষণা কার্যকর হলে প্রায় ১০ লাখ পোশাক শ্রমিকের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপরও সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বর্তমানে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে প্রায় ৫১ শতাংশে দাঁড়াবে। এই বর্ধিত শুল্কের বোঝা বহন করা ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সহস্রাধিক কারখানা।

এরই মধ্যে ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করছে এবং বাড়তি শুল্কের খরচ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা লাভের অংশ কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের মুখে ফেলছে। এমনকি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে, যা আসন্ন সংকটের পূর্বলক্ষণ।

এই শুল্কচাপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশের বস্ত্র খাতও অভ্যন্তরীণভাবে গভীর সংকটে ভুগছে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্তসবকিছুই এই শিল্পের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।

এরই মধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাধিক টেক্সটাইল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সম্মিলিত চাপ দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতকে পঙ্গু করে দিতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বৃহৎ ও সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ হারাতে পারে না। তিনি শুল্কসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকারকে জোরালো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারাও সরকারের কাছে লবিইস্ট নিয়োগসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।

প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১০ শতাংশ শুল্কহারের জন্য আলোচনা করছে, সেখানে বাংলাদেশের জন্য ৫১ শতাংশ শুল্কহার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলবে।

এই মহাচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক পদক্ষেপ অপরিহার্য। শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা প্রয়োজন। সরকার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি ভিত্তিতে গম আমদানিসহ বিভিন্ন পণ্যে বাণিজ্য সমন্বয়ের চেষ্টা করছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তা যথেষ্ট নয়। ১ আগস্টের আগেই আলোচনায় স্পষ্ট অগ্রগতি ও সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন।

অভ্যন্তরীণ শিল্প বাঁচাতে এআইটি ও সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। অন্যথায় লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে এবং দেশের অর্থনীতি এক দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সম্মুখীন হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ