ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করুন

  • ব্রহ্মপুত্র খননের দুরবস্থা
শেয়ার
প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করুন

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার বেশির ভাগই হয় বন্যার কারণে। আর এই বন্যার প্রধান কারণ হচ্ছে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। বর্ষায় বৃষ্টির পানি এবং উজানের ঢল পুরোটা গভীরতাহীন নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। তখন নদীর আশপাশের ফসলি জমি, বাড়িঘর প্লাবিত করে।

সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার ছোট নদীগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি বড় নদী খননের পরিকল্পনা নেয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের (২০২৪ সালের) জুন মাসে, অর্থাৎ আর এক মাস পরে। গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরে যে প্রকল্পের মাত্র ২৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, তা কি আর মাত্র এক বছরে সম্পন্ন হবে? প্রকল্পের এমন ধীর গতিতে ময়মনসিংহবাসীর হতাশা কেবলই বাড়ছে।

জানা যায়, প্রকল্পটির আওতায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র নদের ড্রেজিং কাজ। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের টোক থেকে জামালপুরের পোল্লাকান্দি পর্যন্ত পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটার অংশ খনন করার কথা রয়েছে।

এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে, নদে শুষ্ক মৌসুমেও যেন ১০ ফুট পানি থাকে সে ব্যবস্থা করা হবে আর নদের প্রশস্ততা বাড়ানো হবে অন্তত ৯০ মিটার। কাজ শেষ হলে এটি আন্তর্জাতিক নৌ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হবে। শুরুতে কথা ছিল প্রথম দুই বছরেই শেষ করা হবে খননকাজ। এরপর তিন বছর প্রকল্পটি দেখভাল করা হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, করোনা মহামারি এবং সংযোগস্থলে জমিসংক্রান্ত জটিলতায় স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে প্রকল্পের কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গত বর্ষায় বলেছিলেন, সংযোগস্থলের কিছু অংশ খনন করে চলতি বছর শুকনা মৌসুমে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদে পানির প্রবাহ বাড়ানো হবে, কিন্তু সেটিও সম্ভব হয়নি। এদিকে পানির প্রবাহ না থাকায় খনন করা অংশেও দ্রুত নদী ভরাট হচ্ছে এবং ছোট-বড় চর জাগতে শুরু করেছে। ফলে খনন করা অংশও আবার খনন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

জনগণের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প সময়মতো সম্পন্ন না হলে তাতে জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি সরকারি অর্থের বিপুল অপচয় হয়, যেটি এখানে হবে খনন করা অংশ পুনঃখনন করতে গিয়ে। আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের খননকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

    সংকটে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি
শেয়ার
শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিন

 

যেকোনো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ নিয়ে গভীর সংকটে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সন্ত্রাস, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ সুদহারের কারণে দেশে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, তেমনি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দেশি উদ্যোক্তারাও। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকছে।

উৎপাদন কমছে, লোকসান বাড়ছে। ফলে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে কর্মসংস্থান কমছে এবং বাড়ছে বেকারত্ব।

গত রবিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনীতির এই সংকটময় দিক তুলে ধরেছে।

একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মব সন্ত্রাসের কারণে বিনিয়োগ তলানিতে পৌঁছানো, অন্যদিকে বস্ত্রশিল্পের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে খাতটিকে সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিষয়ই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বিদেশি ও দেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যোবিদায়ি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ ৯১ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে দেশি বিনিয়োগও স্থবির হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ক্রমে আরো খারাপ হবে।

বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)মন্তব্য, তুলা আমদানিতে নতুন করে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা দেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করবে। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং অন্য নেতারা এটিকে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের নীলনকশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যার উদ্দেশ্য দেশটির শিল্পকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পকে রুগ্ণ করে দেওয়া। তাঁদের মতে, ১৮ শতাংশ সুদের ব্যাংকঋণ এবং ৫০ শতাংশ কার্যকর করের বোঝা নিয়ে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষে কারখানা চালু রাখা অসম্ভব।

এটি কেবল দেশের বস্ত্রশিল্পের ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং এই খাতে জড়িত লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকেও হুমকির মুখে ফেলছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের বস্ত্রশিল্পকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ক্রমাগত কমানো হচ্ছে, যা দেশের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে খর্ব করছে।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের উচিত অতি দ্রুত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। একই সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সমস্যাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অযৌক্তিক কর আরোপ প্রত্যাহার এবং শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়ন না করা হলে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক

    রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে
শেয়ার
ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হোক

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় বা অনিশ্চয়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান বা পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রবণতাও ক্রমে বাড়ছে। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল চাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হোক। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হোক। নির্বাচিত সংসদ বড় ধরনের সংস্কারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিক।

অন্যদিকে কয়েকটি দল বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। কেবল গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের পরই নির্বাচন হতে পারে। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করতে হবে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে। এসব প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কেবলই বাড়ছে।
এতে নিকট ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে চরম সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

বেকারত্ব অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চূড়ান্ত খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় দেশে যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি এবং নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে, তখন রাজনীতিতে যেন দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছিল এবং কর্মসূচি দিতে শুরু করেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ধারণা দেন যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করা দলগুলো কিছুটা হতাশ হলেও প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে ফেব্রুয়ারিকে মেনে নেয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সেই ঘোষণায় অসন্তোষ প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত শনিবার ফেনীতে এক সমাবেশে বলেছেন, ফ্যাসিজম তৈরির পথ বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিকে বেছে নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গত শনিবার বগুড়ায় এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগে গণহত্যার বিচার, সংস্কার, তারপর নির্বাচন। অন্যদিকে শনিবার কেরানীগঞ্জের এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কিছু দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ পিআর পদ্ধতি বোঝেন না। তাঁরা এ পদ্ধতিতে কখনো ভোট দেননি। যারা পিআর নির্বাচনের কথা বলে, তাদের ভোট নেই। নির্বাচন হলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

রাজনীতি অস্থিতিশীল বা সংঘাতময় হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অর্থনীতির স্বার্থে এবং মানুষের দুর্ভোগ কমাতে অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদ আর দীর্ঘায়িত করা উচিত হবে না। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দেওয়াটাই সবচেয়ে যৌক্তিক হবে।

মন্তব্য

মব সন্ত্রাস থামান

    আইনের প্রতি আস্থাহীনতা
শেয়ার
মব সন্ত্রাস থামান

সাম্প্রতিককালে দেশের নানা প্রান্তে যেভাবে মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, তা শুধু ভয়াবহ নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ ব্যর্থতার প্রকাশ। কুমিল্লার মুরাদনগরে মা, ছেলে ও মেয়েকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রেশ না কাটতেই গাজীপুর, লালমনিরহাট, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে একের পর এক গণপিটুনির খবর এসেছে। এই নির্মম ঘটনাগুলোর পরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি কিংবা দায়ীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন এবং সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদার অভিমত থেকে স্পষ্ট হয় যে এই মব সন্ত্রাসের পেছনে রয়েছে সমাজের অস্থিরতা, আইনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাব।

মুরাদনগরের ঘটনাটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, যেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের উপস্থিতিতে সালিসি বৈঠকের নামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও কাউকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান মব সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। ভুক্তভোগীরা আছে আতঙ্কে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা। সরকারের উপদেষ্টারা কয়েক মাস ধরে মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ২৫৩টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ৩১২ জন আহত হয়েছে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা যথার্থই বলেছেন, মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাঁর মতে, সরকার যদি কঠোর অবস্থানে থাকত, তাহলে এভাবে একের পর এক মব সৃষ্টি হতো না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, আইনের প্রতি আস্থাহীনতা, রাজনৈতিক বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ নানা কারণে গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও মব তৈরি করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কঠোর ও দ্রুত পদক্ষেপ অপরিহার্য।

জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। কোনো অবস্থায়ই মবের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় প্রদান করা যাবে না কিংবা তাদের অপরাধকে লঘু হিসেবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ না হলে এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র যদি এই ব্যর্থতা অব্যাহত রাখে, তাহলে আইনের শাসনের পরিবর্তে উন্মত্ততার শাসন সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে। সে শাসনে কেউ নিরাপদ থাকবে না, নাগরিকত্বের মৌলিক নিশ্চয়তাও হারিয়ে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জনপ্রত্যাশাকে মূল্য দিন

    নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা
শেয়ার
জনপ্রত্যাশাকে মূল্য দিন

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বা রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ঘোষণার পর দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে নির্বাচনী উৎসবকে উপভোগ করার জন্য। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণযোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোও প্রার্থী বাছাই, জোট গঠনসহ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নানা রকম কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে।

কিন্তু একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা বা অস্পষ্টতাও প্রবল হচ্ছে। এর কারণ নির্বাচনের সময়, সংস্কার, বিচার ও আরো কিছু বিষয় নিয়ে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদ বা মতভেদ ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।

গত শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কিসের নির্বাচন? কী নির্বাচন হবে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অবশ্যই আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দাবি করছে।

কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করেছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, এমনকি উপদেষ্টা পরিষদও পুনর্গঠনের দাবি করছে কেউ কেউ। ফলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনো একটি অনিশ্চিত বিষয়।

গত শুক্রবার রংপুরের জনসভায় জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য।

আমরা সেই সংস্কারের দাবিতে কথা বলেছি এবং এগুলো আদায় করব। ইনশাআল্লাহ, সুষ্ঠু নির্বাচনও আদায় করব। তিনি বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আদলে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে, আমরা আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। কোনো মাস্তানতন্ত্র বা কালো টাকার খেলা চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসনিক ক্যুও হতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে আসছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে এমন ঘোষণা দিলে তারা তা মেনে নেয়। কিন্তু এখন সেই সময়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হতাশা ও বিভেদ বাড়ছে।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলছে, নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা তেমনই একটি অপচেষ্টা। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। ভোট ডাকাতির সুযোগ থাকবে না বলেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনকে ভয় পায়। এসব কারণে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমেই বিভেদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উভয়েই জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এক থাকার কথা বলেছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রত্যাশা মানুষের ভোটাধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অনির্দিষ্টকাল ধরে দেশ অনির্বাচিত সরকারের অধীনে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ