ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

দক্ষ কর্মী তৈরি করুন

  • বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনা
শেয়ার
দক্ষ কর্মী তৈরি করুন

দীর্ঘকাল ধরেই বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচারের দ্বারা অসংখ্য মানুষ যে শুধু সর্বস্বান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। প্রতারকরা এটি করতে পারছে আইনি ত্রুটির কারণে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গেছে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৮ জন। এভাবে কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এর সংখ্যা গিয়ে ১৩ লাখে পৌঁছাবে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। কিন্তু দুঃখজনক খবর হচ্ছে, কাজ না পেয়ে মাসের পর মাস বসে থাকা এবং কাজ পেলেও ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীরা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানে গিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। উন্নত জীবনের আশায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গিয়েও অনেক কর্মীকে মাসের পর মাস বসে থাকতে হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তাঁরা। এতে অনেক কর্মী দেশে ফিরতেও বাধ্য হয়েছেন।

মিথ্যা আশ্বাসে নেওয়া কর্মীরা বিদেশে গিয়ে নানা রকমের সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। নিজের ও পরিবারের জায়গাজমি বিক্রি করে বেশি বেতনের চাকরি পাওয়ার আশায় স্থানীয় দালাল ও রিক্রুট এজেন্সির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে পাড়ি দিয়ে বেশির ভাগ কর্মীই প্রতারিত হন। এজেন্ট ও রিক্রুট এজেন্সি বেশি বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে গিয়ে কম বেতনের চাকরি করতে বাধ্য করে। নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে। কয়েক দিন আগে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, চার লাখ থেকে শুরু করে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে মালয়েশিয়ায় প্রচুর কর্মী যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁরা চাকরি পাচ্ছেন না।
কর্মীদের কাজ না পাওয়ার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে, সেখানে যেসব কম্পানি কর্মী নিচ্ছে, এর বেশির ভাগই ভুয়া।
বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতা সম্পন্নদের কদর বাড়ছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম।
বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে, তাতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি আরো শক্তিশালী হবে।
বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠাতে মরিয়া হয়ে থাকে। কারণ কর্মী পাঠানো তাদের কাছে এক ধরনের ব্যবসা। ফলে তারা কাজ আছে কি নেই, তার কোনো খোঁজ না নিয়েই কর্মী পাঠিয়ে থাকে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার।
দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভালো কলেজে ভর্তির সংকট

    মোট আসনের অর্ধেকই খালি থাকবে
শেয়ার
ভালো কলেজে ভর্তির সংকট

সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন আনন্দের ঢেউ লেগেছে, তেমনি একাদশে ভর্তির দুশ্চিন্তাও ক্রমেই বাড়ছে। দেশের কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে প্রতিবছরই তীব্র ভর্তিযুদ্ধ দেখা যায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এই বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাধারণ কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি আসন রয়েছে।

অথচ এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে মাত্র ১৩ লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৬টি আসন খালি থাকবে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যাটি মোট আসনসংখ্যায় নয়, বরং মানের দিক থেকে। দেশের হাতে গোনা ৩০০টি নামি-দামি কলেজেই জিপিএ ৫ ও ৪ পাওয়া প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টা করবে, যা এক প্রবল প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।

রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত; যেমনঢাকা কলেজে এক হাজার ২০০টি, নটর ডেম কলেজে তিন হাজার ২৭০টি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই হাজার ৩৭৬টি। এ ছাড়া স্কুল সংযুক্ত কলেজগুলোতেও তাদের নিজস্ব স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। ফলে বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ আরো কমে আসে। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক বণ্টন এবং সংখ্যায় গুরুতর ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কথা বললেও সব শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং শিক্ষার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। যদি দেশের বেশির ভাগ কলেজ মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় ভালো ফল করতে বা ভবিষ্যতে কর্মজীবনে সফল হতে বাধাগ্রস্ত হবে।

এই সমস্যার সমাধানে সারা দেশে মানসম্মত কলেজ তৈরি এবং বিদ্যমান কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ প্রসারিত করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আরো স্পষ্ট। শুধু ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিস্তারে পরিকল্পিত বিনিয়োগ ও কার্যকর নজরদারি। জেলার কলেজগুলোকে কেন্দ্র করে মানোন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ না করলে প্রতিবছরই ভর্তিযুদ্ধ হবে আরো তীব্র আর শিক্ষার সমতা থেকে পিছিয়ে পড়বে  বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

    আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি
শেয়ার
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে।

বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিশোর গ্যাং নামে সারা দেশেই অরাজকতা সৃষ্টির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। ফলে দেশজুড়েই মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। যৌথ বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড।

গণমাধ্যমে নৃশংস খবরের ছড়াছড়ি বিবেকবান মানুষকে আহত করছে। কিন্তু খবর তো খবরই।

ঘটনা ঘটলে খবর তো হবেই। শুধু গতকালের কালের কণ্ঠেই এ রকম বেশ কিছু খবর রয়েছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা প্রথমে কয়েকটি গুলি করে। তার পরও মৃত্যু নিশ্চিত করতে পায়ের রগ কেটে রেখে যায়। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায়।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন। চাঁদপুর শহরে শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই মসজিদের ভেতরে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম মাওলানা নূরুর রহমান (৬৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনাখুনি বাড়ছে। এসব ঘটনা মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশে এক হাজার ১৩৯টি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে ২২৮টি। গত বছর প্রতি মাসে এই সংখ্যা ছিল গড়ে ১৫৮টি। এই পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৮৭টি, যা গড়ে প্রতি মাসে ৩১৭টি। আগের বছর প্রতি মাসে ছিল ২৮৬টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত পাঁচ মাসে ৯ হাজার ১০০ মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার ৮২০টি। আগের বছর গড়ে প্রতি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের আইনে মামলা ছিল এক হাজার ৪৬৪টি। অপহরণের মামলা এই পাঁচ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৮৭টি; গত বছর প্রতি মাসে ছিল ৫৪টি। অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ও হত্যা-সন্ত্রাসের খবর কেবল দেশেই সীমিত থাকে না, ছড়িয়ে যায় দেশের বাইরেও। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিনিয়োগ, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তার প্রভাব পড়ে। এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বাংলাদেশ আগেরবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। এই অধোগতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

মন্তব্য

জবাবদিহির নতুন অধ্যায়

    আইনের মুখোমুখি সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শেয়ার
জবাবদিহির নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জবাবদিহির দাবি বহুদিনের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ সেই জবাবদিহির পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধের প্রথম কোনো মামলার বিচারকাজ শুরু এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। অভিযোগগুলোর মধ্যে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতন নির্দেশের দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত।

এই বিচার বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করছে, যেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও আইনের ঊর্ধ্বে ননএই বার্তাটি স্পষ্ট হচ্ছে।

এই বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি চাঞ্চল্যকর দিক হলো মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের দোষ স্বীকার এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ঘটনার ভেতরের সত্য উদঘাটনে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। আমরা মনে করি, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করা গেলে মামলার গতি-প্রকৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

একই সঙ্গে শেখ হাসিনার কৃষি ভাবনার আড়ালে দুর্নীতির চাষাবাদ! শীর্ষক আইএমইডির প্রতিবেদনটি আরো একটি গুরুতর দিক তুলে ধরেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র ও প্রযুক্তি সমপ্রসারণ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় ও দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৪টি সেবাকেন্দ্রের মধ্যে ১৪টির সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা অকার্যকর, যন্ত্রপাতি চুরি হয়েছে বা অব্যবহৃত এবং ভবন নির্মাণে নিম্নমান ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেটের অভাবএগুলোর সবই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভয়াবহ গাফিলতি, নজরদারিহীনতা ও দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ। কৃষকদের হাতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবে কাগুজে সফলতায় পর্যবসিত হয়েছে, যেখানে সাধারণ কৃষকরা কোনো দৃশ্যমান সুবিধা পাননি।

এই দুটি ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং আইনের শাসনের গুরুত্বকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। একসময় যাঁরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং তাঁদের শাসনামলে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্ত ও উন্মোচন করা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অপরিহার্য ধাপ। বিশেষ করে যখন আইএমইডির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে পায়, তখন এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।

তবে এই বিচারিক প্রক্রিয়া এবং দুর্নীতি দমনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচার করলেই হবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা জনগণের সম্পদ লুটপাট করতে সাহস পাবেন না।

জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত, নিরপেক্ষ বিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখতে হবে। এই পদক্ষেপগুলোই বাংলাদেশকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।

মন্তব্য

গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসুক

    ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন
শেয়ার
গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসুক

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই জাতীয় নির্বাচন হচ্ছেএটি এখন আর কেবল কোনো ধারণা নয়, একটি বাস্তব বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। একই সঙ্গে দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করছে।

যে কয়েকটি দল নানা শর্ত ও দাবি উত্থাপন করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে তুলছিল, তাদেরও সুর অনেকটাই নরম হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রায় কোনো সংশয়ই থাকছে না। নির্বাচন কমিশনও সেভাবে এগিয়ে চলেছে।

দেশের মানুষ একটা দীর্ঘ সময় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।

তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা গণ-অভ্যুত্থানে শরিক হয়েছে। বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়াতেও দ্বিধা করেনি। অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশংসিত নেতৃত্ব ছিল।
তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় স্থির হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমরা মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোনো দল বিতর্ক করলেই সেটার মানে এই নয় যে তারা নির্বাচন চায় না কিংবা নির্বাচন পেছাতে চায়। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন যদি সংসদের না হয়, তাহলে দেশে একটা অন্ধকার শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। গতকাল তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই ঘোষণাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। জানা যায়, নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে। তারা মুখে যা-ই বলুক, নতুন এই দলের চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিকে অনেকেই নির্বাচনী প্রচার হিসেবে দেখছেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচিত রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় না এলে সংকট কেবল বাড়তেই থাকবে। তাই আমরা চাই, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসুক।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ