ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

অভিনন্দন বাংলাদেশ দল

  • ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়
শেয়ার
অভিনন্দন বাংলাদেশ দল

বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে গেল বাংলাদেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের মতো একটি শক্তিশালী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৩-০ ম্যাচে বাংলাদেশের সিরিজ জয়। এক অসাধারণ প্রাপ্তি। এই জয় বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।

বাংলাদেশ এর আগেও অনেক জয় পেয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো একটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় করার আনন্দ একেবারই আলাদা। একটি অবিস্মরণীয় সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফসহ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন। নিত্য আশাভঙ্গের ঘটনা যে দেশে ঘটে, সেখানে এমন উৎসবের আমেজ পাওয়া খুবই বিরল।
কারণ ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আইসিসি র্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় সেরা দল। গত কয়েক বছরে ক্রিকেটের সব সংস্করণের ভাষা, চরিত্র ও ধরন বদলে দেওয়া দল।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় এই জয়ে রচিত হলো অনন্য ইতিহাস।

বাংলাদেশের এই জয় দেশের ক্রিকেটকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিল সামর্থ্যের কমতি নেই তাদের। এই জয়ের নেপথ্যে একাদশের কারো অবদানই খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এই জয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রিকেটের এই সংস্করণে বাংলাদেশ দলের অবস্থান একেবারেই নড়বড়ে।
এই সংস্করণে পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজছে বাংলাদেশ। সেই দলটিই প্রবল প্রতাপশালী ইংল্যান্ডকে ৩-০ ম্যাচে সিরিজ হারিয়ে দিল। এটাই ক্রিকেটজগতের সাম্প্রতিক সময়ের চমক। দেশের মাঠে ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটবিশ্বের প্রথাগত কোনো বড় দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য ধরা দিল এই প্রথম।

অতীতে অনেক সময় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দল মাঠে নামে কিন্তু ভয়কে জয় করতে পারে না। কাটিয়ে উঠতে পারে না মনের ভীতি। এই সিরিজে বাংলাদেশের জয় যেমন আলোচিত হয়েছে, তেমনি আলোচিত হয়েছে খেলার ধরনও। মাঠে কিংবা টিভি পর্দায় যাঁরা খেলা দেখেছেন, তাঁরা সাক্ষী ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। এই সিরিজটি বোধ হয় এমন ধারণাও দিচ্ছে যে নিজেদের একটি ঘরানাও তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

ক্রিকেট হচ্ছে ফিটনেসের খেলা। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হচ্ছে পাওয়ার হিটিং ও ফিটনেসের খেলা। শুধু ফিটনেস নয়, ক্রিকেট হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কিলের খেলা। কেউ কেউ বলেন, ক্রিকেট হচ্ছে এক বলের খেলাবিশেষ করে ব্যাটিং। আউট হয়ে গেলে সব শেষ। হয়তো এ কারণেই ক্রিকেটকে বলে অনিশ্চয়তার খেলা। কিন্তু এই সিরিজে সেই অনিশ্চয়তাকে অতিক্রম করল বাংলাদেশ। দলগত খেলা ক্রিকেট। এখানে সব ডিপার্টমেন্টেই খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখাতে হয়। তা করে দেখিয়েছেন আমাদের খেলোয়াড়রা।

এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিশ্চয় উজ্জীবিত করেছে। কিন্তু এখানে থেমে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশকে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। রক্ষা করতে হবে জয়ের ধারাবাহিকতা। তার জন্য দরকার নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন। তারুণ্যের শক্তিকে তুলে ধরেছে এই সিরিজ। এই সিরিজে নতুনরা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের ক্রিকেটে নতুনদের তুলে আনার পাশাপাশি সব ধরনের উইকেটে পারফরম করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আবেগ দিয়ে নয়, ক্রিকেটকে দেখতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। প্রতিভা তুলে এনে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের দল গড়ে তুলতে হবে অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেলে। দেশের সর্বত্র ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। আজকের বিজয়ের সাফল্য ধরে রাখতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

    বিচারপ্রক্রিয়ায় বড় বাধা
শেয়ার
সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

সাক্ষী হলো মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় মামলার বিচার কার্যক্রম। কিন্তু দেখা গেছে, বিভিন্ন মামলার অভিযোগপত্রে যাঁদের সাক্ষী করা হয়, শুনানির সময় তাঁদের বেশির ভাগ অনুপস্থিত থাকে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিভিন্ন মামলার অন্তত ৬৭ শতাংশ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হননি। সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি বলে এসব মামলা ঝুলে আছে।

প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার এক গভীর সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। সাক্ষীদের ব্যাপক অনুপস্থিতি কেবল বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে না, বরং মামলার জট বাড়িয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরো ঘনীভূত করছে। সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় হাজার হাজার মামলা ঝুলে আছে, যা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথকে কঠিন করে তুলছে।

সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করেই সত্য উদঘাটিত হয় এবং অপরাধীর বিচার হয়।

কিন্তু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পাঠানো ৪৮ হাজার ৮২৭টি সমনের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ সাক্ষী আদালতে হাজির হয়েছেন। এমনকি অন্যদিকে আদালতে উপস্থিত হয়েও প্রায় ২০০ সাক্ষী সাক্ষ্য না দিয়ে ফিরে গেছেন, যা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।

পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। দাপ্তরিক ব্যস্ততা, বদলি বা অবসরে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এমন উদাসীনতা বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার বিগত সরকারের আমলে সাক্ষীদের ভয়ে আদালতে না আসার কথা বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতেও যে এর বিশেষ উন্নতি হয়নি, তা স্পষ্ট। সাক্ষীদের অনুপস্থিতি কেবল মামলার জটই বাড়াচ্ছে না, এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা প্রমাণের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এটি সামগ্রিকভাবে বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করছে।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, সাক্ষী হাজিরা নিশ্চিত করতে সাক্ষী সেল গঠন ও তার কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল মাধ্যমে ভিডিও সাক্ষ্যগ্রহণ চালু করা গেলে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে। তৃতীয়ত, সাক্ষীদের জন্য যথাযথ ভাতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাঁরা সাহস করে আদালতে হাজির হতে পারেন। পুলিশ সদস্যদের অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে সাক্ষী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

    এখনো হয়নি জাতীয় সনদ
শেয়ার
দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও ১১ মাস পেরিয়েছে। এখনো অনেক মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। এখনো প্রণয়ন করা যায়নি একটি জাতীয় সনদ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে; সেটি ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায়। বড়জোর ৩১ জুলাইয়ে যেতে পারি। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে খানিকটা ছাড় দিয়ে হলেও এক জায়গায় আসার আহবান জানান তিনি।

কমিশনের কাজের অগ্রগতির ওপর যেহেতু রাষ্ট্রের সংস্কার ও বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকাংশেই নির্ভর করছে, তাই কমিশনের সাফল্য বা ব্যর্থতা মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।

প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এ আলোচনা চলে ১৯ মে পর্যন্ত। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি এমন ২০টির মতো বিষয়কে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে চিহ্নিত করে ঐকমত্য কমিশন। সেগুলোর বিষয়ে গত ৩ জুন থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়।
গতকাল পর্যন্ত ১২তম দিনে ১৩টির মতো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল আলোচনা শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৪১(ক) সংশোধনের সময় অভ্যন্তরীণ গোলযোগের শব্দগুলোর পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। আর জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৫-এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন। এর আরো কিছু ব্যাখ্যা নিয়েও মতৈক্যের কথা জানান তিনি।

এদিকে দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। পারস্পরিক আক্রমণ ও কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, যা ঐকমত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত চলছে। কিন্তু বিএনপিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। গত রবিবার তারেক রহমান : দ্য হোপ অব বাংলাদেশ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকে যে অপপ্রচার হচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এ ধরনের অপরাজনীতির সমালোচনা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানও। রবিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা দলের চরিত্র হনন একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়।

আমরা আশা করি, জুলাই সনদ অতি দ্রুত চূড়ান্ত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেবে। দেশ ক্রমেই একটি সফল নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মহাচ্যালেঞ্জে পোশাকশিল্প

    মার্কিন শুল্কের খড়্গ
শেয়ার
মহাচ্যালেঞ্জে পোশাকশিল্প

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প এক নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায়ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্পের এক নজিরবিহীন সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা কেবল রপ্তানি নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও বেশি। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৫১ শতাংশে দাঁড়াবে। এর ফলে গত বছরের চেয়ে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এই বোঝা এতটাই বেশি যে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের মতে, ৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে সত্যি টিকে থাকা কঠিন হবে।

এরই মধ্যে এই শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশ্বখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট তাদের প্রায় ১০ লাখ পিস সাঁতারের প্যান্টের অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করেছে, যা অন্যান্য ক্রেতার মধ্যেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। পোশাক কারখানার মালিকরা জানাচ্ছেন, মার্কিন ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যা লাভের মার্জিন কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের মুখে ফেলছে। মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে জর্দান, মিসর, ইথিওপিয়া কিংবা কেনিয়ার মতো নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছে।

একবার ব্র্যান্ড সরলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ।

এমনিতেই সংকটে থাকা বস্ত্রশিল্পে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বস্ত্র খাতের সাড়ে পাঁচ শতাধিক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্তসবকিছুই বস্ত্র খাতের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশাবাদী যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক সমাধান আসবে। কিন্তু আলোচনার দৃশ্যমান অগ্রগতির অভাব এবং কঠিন শর্তগুলোর (যেমনচীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা) কারণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

এই মহাচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে অবিলম্বে এআইটি ও সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে, যার পরিণতিতে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে, অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মন্তব্য

দায় সরকারকেই নিতে হবে

    আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি
শেয়ার
দায় সরকারকেই নিতে হবে

মিটফোর্ডে পাথর দিয়ে থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার রাজধানীর পল্লবীতে এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসী। তারা সেখানে ভাঙচুর করে এবং কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হলে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গতকালের কালের কণ্ঠে আছে, শনিবার ১০ জেলায় পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে এবং ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে এমন অনেক খুনের ঘটনা। চরম নৃশংসতাও ঘটছে। চট্টগ্রামে গত ৯ জুলাই এক নারীকে হত্যার পর ১১ টুকরা করা হয়।
ডাকাতি-ছিনতাই এতটাই বেড়েছে যে মানুষ রাতে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। দিনেই বা নিরাপত্তা কোথায়? রাজধানীর শ্যামলী ২ নম্বর রোডে শুক্রবার সকালে ছিনতাইকারীরা এক যুবকের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি জামা-জুতাও খুলে নিয়ে যায়। ভাবা যায়, দেশ অরাজকতার কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচকে বাংলাদেশ ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে।

এই সূচক তৈরি হয়েছে মূলত গত বছরের তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে। অনেকে আশঙ্কা করেন, এ বছরের চিত্র যোগ করা হলে বাংলাদেশ তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান নিতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বে সবচেয়ে অশান্তির দেশ। কেন এমন রকেট গতিতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর জন্য দায়ী সরকারের ব্যর্থতা। পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীকে মব সন্ত্রাস কিংবা প্রেসার কালচার চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদানেরও অভিযোগ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার অন্যায়কারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। তিনি বলেছেন, অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কেন তাহলে বসে আছে, তাদের চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না। চালাচ্ছে সরকার। তাহলে সরকার কেন তাদের (অন্যায়কারী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারকে আহবান জানাব, অতি দ্রুত তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।

সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেক খবরে দেখা যায়, কেবল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে দৈনিক কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে। বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিশোর গ্যাং নামে সারা দেশেই অরাজকতা সৃষ্টির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। দেশজুড়ে এভাবে অরাজকতা বৃদ্ধির পেছনে অনেকে ভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রেরও গন্ধ পাচ্ছেন। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদানের পরপরই দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ