দেশে করোনা মহামারির বিস্তার অনেকটাই কমে এসেছিল। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। গত ১৯ মার্চ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক শর নিচে। এরপর হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ।
বিজ্ঞাপন
সারা দুনিয়ায় এখনো করোনা মহামারি প্রবলরূপেই বিদ্যমান। আসছে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন-উপধরন। যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রতিদিন লক্ষাধিক লোক আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপেও করোনার ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়। এশিয়ায়ও একই অবস্থা। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশেই করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নতুন করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ হাজারের নিচে নেমে এসেছিল। আবার তা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। বাড়ছে আমাদের লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও। ফলে বাংলাদেশেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
করোনা কমে যাওয়ায় এবং বেশির ভাগ মানুষের দুই ডোজ টিকা নেওয়া সম্পন্ন হওয়ায় করোনার প্রতি মানুষের যে ভীতি ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে। আচার-আচরণ, চলাফেরায় মানুষ করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে গেছে। সামাজিক দূরত্ব মানার তো প্রশ্নই ওঠে না। বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পর্যন্ত পরছে না। সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান চলছে পুরোদমে। গণপরিবহনগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এই প্রবণতায় ছেদ টানতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ধরনের বিধি-বিধান আবার কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। গণপরিবহন ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে সবাই মাস্ক পরছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। বহু মানুষ ঢাকা ছাড়বে, ঈদ শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসবে। মার্কেট, শপিং মল, হাট-বাজারে মানুষের ভিড় বাড়বে। কোরবানির পশুর হাটে হবে উপচে পড়া ভিড়। ঈদের উপলক্ষ ছাড়াও থাকবে নানা ধরনের দৈনন্দিন প্রয়োজন। চলবে ছোটখাটো অনুষ্ঠান। আবার লকডাউন আরোপ করে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করাও বাস্তবসম্মত হবে না। কিন্তু সাধারণ সচেতনতা না থাকলে কিংবা ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে সংক্রমণ আবার যদি শিখরে ওঠে তখন কী হবে?
টিকা দিলেই যে করোনামুক্ত হওয়া যায় না তার প্রমাণ তো ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত দেশগুলো। এসব দেশে টিকা দেওয়ার হার অনেক বেশি। ভারতেও ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছে। এর পরও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। তাই টিকা নিয়েছি বলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাস্ক পরা। এ ছাড়া বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাটাও জরুরি। যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের টিকা নিতে হবে। সময়মতো টিকার বুস্টার ডোজও নিতে হবে। পাশাপাশি কিছু কঠোর ব্যবস্থাও নিতে হবে।