ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫
২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ মহররম ১৪৪৭

প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

  • চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধস
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার

প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

চট্টগ্রামে প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তাল তাল মাটির নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষের আর্তচিৎকার। ২০০০ সালের পর গত ২২ বছরে পাহাড়ধসে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল এলাকায় এবং দুজন মারা গেছেন বিজয়নগর এলাকায়। গুরুতর আহত আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় ঘটে পাহাড়ধসের এই মর্মান্তিক ঘটনা।

চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের বড় একটি ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের জুন মাসে।

সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে। সেই ঘটনায় চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের অকালমৃত্যু হয়। এর আগে-পরেও অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় প্রতিটি বড় ঘটনার পরই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পাহাড়ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু রোধে বহু সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সেসব সুপারিশের বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।
আর তাই পাহাড়ধস থামছে না, মর্মান্তিক মৃত্যুও রোধ হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ঘটনার পর উচ্চ পর্যায়ের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, ৯ মাস কাজ করার পর সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তাতে পাহাড়ে করুণ মৃত্যুর জন্য মূলত পাহাড় বা পাহাড়ের ঢালে অবৈধ বসতি নির্মাণকে দায়ী করা হয়েছে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছপালা কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে দেওয়া, কংক্রিটের দেয়াল বা প্রতিরক্ষা বেষ্টনী এবং পর্যাপ্ত নালা না থাকা ইত্যাদি। অন্য প্রতিবেদনগুলোতেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।

জানা যায়, এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর সহায়তায় কিছু প্রভাবশালী লোক পাহাড়ের নিচে সরকারি জমিতে খুপরি ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়। ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র লোকজন সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। বর্ষায় বড় বৃষ্টিপাতের আগে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলেই তাদের দায়িত্ব সারে। অনিশ্চয়তা কিংবা ঘরের মালপত্র চুরি হওয়ার ভয়ে মাইকিং শুনেও অনেকের পক্ষে ঘরদোর ছেড়ে অন্যত্র সরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাদেরই ভাগ্যে নেমে আসে এমন করুণ মৃত্যু। অথচ আমাদের প্রশাসন দীর্ঘদিনেও বস্তি নির্মাণের এই অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেনি। এখনো চলছে অবাধে পাহাড়ের বৃক্ষ নিধন এবং মাটি কেটে ইটখোলাসহ নানা স্থানে নিয়ে যাওয়া। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, কোনো এক অজানা কারণে তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করে। সরকারি অনেক সংস্থার বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অনৈতিকতা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের শিকার হয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষ।

আমরা চাই, বিভিন্ন সময়ে গঠন করা কমিটিগুলোর সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। পাহাড় কাটা এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ কঠোরভাবে বন্ধ করা হোক। হতাহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মহাচ্যালেঞ্জে পোশাকশিল্প

    মার্কিন শুল্কের খড়্গ
শেয়ার
মহাচ্যালেঞ্জে পোশাকশিল্প

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প এক নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায়ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্পের এক নজিরবিহীন সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা কেবল রপ্তানি নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও বেশি। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৫১ শতাংশে দাঁড়াবে। এর ফলে গত বছরের চেয়ে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এই বোঝা এতটাই বেশি যে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের মতে, ৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে সত্যি টিকে থাকা কঠিন হবে।

এরই মধ্যে এই শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশ্বখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট তাদের প্রায় ১০ লাখ পিস সাঁতারের প্যান্টের অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করেছে, যা অন্যান্য ক্রেতার মধ্যেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। পোশাক কারখানার মালিকরা জানাচ্ছেন, মার্কিন ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যা লাভের মার্জিন কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের মুখে ফেলছে। মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে জর্দান, মিসর, ইথিওপিয়া কিংবা কেনিয়ার মতো নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছে।

একবার ব্র্যান্ড সরলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ।

এমনিতেই সংকটে থাকা বস্ত্রশিল্পে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বস্ত্র খাতের সাড়ে পাঁচ শতাধিক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্তসবকিছুই বস্ত্র খাতের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশাবাদী যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক সমাধান আসবে। কিন্তু আলোচনার দৃশ্যমান অগ্রগতির অভাব এবং কঠিন শর্তগুলোর (যেমনচীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করা) কারণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

এই মহাচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে অবিলম্বে এআইটি ও সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে, যার পরিণতিতে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে, অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মন্তব্য

দায় সরকারকেই নিতে হবে

    আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি
শেয়ার
দায় সরকারকেই নিতে হবে

মিটফোর্ডে পাথর দিয়ে থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার রাজধানীর পল্লবীতে এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসী। তারা সেখানে ভাঙচুর করে এবং কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হলে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গতকালের কালের কণ্ঠে আছে, শনিবার ১০ জেলায় পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে এবং ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে এমন অনেক খুনের ঘটনা। চরম নৃশংসতাও ঘটছে। চট্টগ্রামে গত ৯ জুলাই এক নারীকে হত্যার পর ১১ টুকরা করা হয়।
ডাকাতি-ছিনতাই এতটাই বেড়েছে যে মানুষ রাতে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। দিনেই বা নিরাপত্তা কোথায়? রাজধানীর শ্যামলী ২ নম্বর রোডে শুক্রবার সকালে ছিনতাইকারীরা এক যুবকের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি জামা-জুতাও খুলে নিয়ে যায়। ভাবা যায়, দেশ অরাজকতার কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচকে বাংলাদেশ ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে।

এই সূচক তৈরি হয়েছে মূলত গত বছরের তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে। অনেকে আশঙ্কা করেন, এ বছরের চিত্র যোগ করা হলে বাংলাদেশ তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান নিতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বে সবচেয়ে অশান্তির দেশ। কেন এমন রকেট গতিতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর জন্য দায়ী সরকারের ব্যর্থতা। পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীকে মব সন্ত্রাস কিংবা প্রেসার কালচার চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদানেরও অভিযোগ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার অন্যায়কারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। তিনি বলেছেন, অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আমরা দল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কেন তাহলে বসে আছে, তাদের চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না। চালাচ্ছে সরকার। তাহলে সরকার কেন তাদের (অন্যায়কারী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারকে আহবান জানাব, অতি দ্রুত তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।

সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেক খবরে দেখা যায়, কেবল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে দৈনিক কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে। বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিশোর গ্যাং নামে সারা দেশেই অরাজকতা সৃষ্টির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। দেশজুড়ে এভাবে অরাজকতা বৃদ্ধির পেছনে অনেকে ভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রেরও গন্ধ পাচ্ছেন। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদানের পরপরই দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

মন্তব্য

ভালো কলেজে ভর্তির সংকট

    মোট আসনের অর্ধেকই খালি থাকবে
শেয়ার
ভালো কলেজে ভর্তির সংকট

সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন আনন্দের ঢেউ লেগেছে, তেমনি একাদশে ভর্তির দুশ্চিন্তাও ক্রমেই বাড়ছে। দেশের কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে প্রতিবছরই তীব্র ভর্তিযুদ্ধ দেখা যায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এই বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাধারণ কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি আসন রয়েছে।

অথচ এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে মাত্র ১৩ লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৬টি আসন খালি থাকবে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যাটি মোট আসনসংখ্যায় নয়, বরং মানের দিক থেকে। দেশের হাতে গোনা ৩০০টি নামি-দামি কলেজেই জিপিএ ৫ ও ৪ পাওয়া প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টা করবে, যা এক প্রবল প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।

রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত; যেমনঢাকা কলেজে এক হাজার ২০০টি, নটর ডেম কলেজে তিন হাজার ২৭০টি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই হাজার ৩৭৬টি। এ ছাড়া স্কুল সংযুক্ত কলেজগুলোতেও তাদের নিজস্ব স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। ফলে বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ আরো কমে আসে। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক বণ্টন এবং সংখ্যায় গুরুতর ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কথা বললেও সব শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং শিক্ষার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। যদি দেশের বেশির ভাগ কলেজ মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় ভালো ফল করতে বা ভবিষ্যতে কর্মজীবনে সফল হতে বাধাগ্রস্ত হবে।

এই সমস্যার সমাধানে সারা দেশে মানসম্মত কলেজ তৈরি এবং বিদ্যমান কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ প্রসারিত করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আরো স্পষ্ট। শুধু ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন নয়, প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিস্তারে পরিকল্পিত বিনিয়োগ ও কার্যকর নজরদারি। জেলার কলেজগুলোকে কেন্দ্র করে মানোন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ না করলে প্রতিবছরই ভর্তিযুদ্ধ হবে আরো তীব্র আর শিক্ষার সমতা থেকে পিছিয়ে পড়বে  বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

    আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি
শেয়ার
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
প্রতীকী ছবি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে।

বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিশোর গ্যাং নামে সারা দেশেই অরাজকতা সৃষ্টির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। ফলে দেশজুড়েই মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।
ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। যৌথ বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড।

গণমাধ্যমে নৃশংস খবরের ছড়াছড়ি বিবেকবান মানুষকে আহত করছে। কিন্তু খবর তো খবরই।

ঘটনা ঘটলে খবর তো হবেই। শুধু গতকালের কালের কণ্ঠেই এ রকম বেশ কিছু খবর রয়েছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা প্রথমে কয়েকটি গুলি করে। তার পরও মৃত্যু নিশ্চিত করতে পায়ের রগ কেটে রেখে যায়। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায়।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন। চাঁদপুর শহরে শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই মসজিদের ভেতরে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম মাওলানা নূরুর রহমান (৬৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনাখুনি বাড়ছে। এসব ঘটনা মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশে এক হাজার ১৩৯টি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে ২২৮টি। গত বছর প্রতি মাসে এই সংখ্যা ছিল গড়ে ১৫৮টি। এই পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৮৭টি, যা গড়ে প্রতি মাসে ৩১৭টি। আগের বছর প্রতি মাসে ছিল ২৮৬টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত পাঁচ মাসে ৯ হাজার ১০০ মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার ৮২০টি। আগের বছর গড়ে প্রতি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের আইনে মামলা ছিল এক হাজার ৪৬৪টি। অপহরণের মামলা এই পাঁচ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৮৭টি; গত বছর প্রতি মাসে ছিল ৫৪টি। অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ও হত্যা-সন্ত্রাসের খবর কেবল দেশেই সীমিত থাকে না, ছড়িয়ে যায় দেশের বাইরেও। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিনিয়োগ, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তার প্রভাব পড়ে। এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বাংলাদেশ আগেরবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। এই অধোগতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ