সারা দেশেই নদী-খালের অবস্থা শোচনীয়। ক্রমাগত দখল, দূষণ ও ভরাটের শিকার হচ্ছে। নদী-খাল রক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে সারা দেশেই নদী-খাল দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বাঁকখালী নদীতে ১৬৮ শতাংশের একটি বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে। বাস্তবে দেখা যায়, ইজারা নেওয়া জায়গা ছাড়াও নদীর আরো দুই জায়গায় নদীতে ড্রেজার এবং তীরে খননযন্ত্র বসিয়ে এক মাস ধরে বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে এভাবে বালু তোলায় কাছে থাকা শত বছরের একটি কবরস্থান, মহাসড়ক ও ফসলি জমি নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার হুমকিতে পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রশাসনও নির্ধারিত স্থানের বাইরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন নদীতে এভাবে বালু উত্তোলনের অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগ আছে, বালুমহালের বেশির ভাগ ইজারাদারই এ কাজ করেন। এক জায়গার অনুমতি নিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁরা বালু উত্তোলন করেন। এ জন্য ইজারা নেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসন থেকে তাঁরা নির্দিষ্ট মাসিক বা এককালীন অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে ‘টোকেন’ সংগ্রহ করেন। অনেকে ইজারা না নিয়ে শুধু ‘টোকেন’ নিয়েও বালু উত্তোলন করেন। গতকাল প্রকাশিত অন্য এক খবরে বলা হয়, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া শহর ঘিরে আছে চারটি খাল। এই খালগুলোর দুই তীরের কয়েক কিলোমিটার এলাকা এখন প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। সেই সঙ্গে খালে ময়লা-আবর্জনা, গৃহস্থালি বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে দ্রুত ভরাট হয়ে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালগুলো। তদুপরি বাঁধ দিয়ে খালে পানিপ্রবাহ ব্যাহত করা হয়েছে। খালের জায়গা দখল করে মানুষ স্থাপনা নির্মাণ করছে। প্রশাসন কিছুই করছে না। অথচ এই খালগুলো দিয়ে একসময় যাত্রী ও মালপত্র নিয়ে নৌকা ও ট্রলার চলাচল করত। সারা দেশের নদী-খালের অবস্থা প্রায় একই রকম।
মানুষের প্রকৃতিবিনাশী কর্মকাণ্ডের ক্ষতিকর প্রভাব আমরা ভোগ করছি। বর্ষায় বন্যা-জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে খরা, ভূগর্ভে পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়াসহ আরো অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তাই দ্রুত নদী-খাল উদ্ধার ও নাব্যতা ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দখলবাজি ও অবৈধ তৎপরতার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।