ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

সমস্যাগুলো দূর করা হোক

  • রাজৈর আশ্রয়ণ প্রকল্প
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
সমস্যাগুলো দূর করা হোক

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘর ভেঙে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্ত হয়। কিছু ঘরে ত্রুটিও ধরা পড়ে। সরকারের এই মহৎ প্রকল্পটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কিছুসংখ্যক মানুষের কারণে।

২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তাঁর এই ঘোষণার পর সারা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীন আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারই পাচ্ছে দুর্যোগ-সহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর ২ শতাংশ জমির মালিকানা।

সরকারের একটি শুভ উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্প। অল্পসংখ্যক মানুষের কারণে এই মানবিক প্রকল্পটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গৃহনির্মাণ প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নিম্নমানের কাজের পাশাপাশি উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা ও নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
অনেক ঘর মালিকের অভিযোগ, এসব ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। হস্তান্তরের শুরু থেকে অনেক ঘরে ছিল না পানি ও বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশের অভাবে মাদারীপুরের রাজৈরের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর সুতারপাড় এলাকার বেশির ভাগ ঘরই খালি পড়ে আছে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি এসব পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও এখনো ৪৪টি পরিবার ঘরে বসবাস শুরু করেনি। ফলে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে টিউবওয়েল, টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় নানা সরঞ্জাম।
বরাদ্দপ্রাপ্তদের বক্তব্য হচ্ছে, ঘরের মধ্যে জায়গা কম। টয়লেট ও রান্নাঘর ব্যবহার অনুপযোগী। টিউবওয়েলও নষ্ট। সব মিলিয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারের কল্যাণকামী ভাবমূর্তি একটি বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার কথা। সব মহল থেকেই এই প্রকল্পের প্রশংসা করা হলেও অল্পসংখ্যক মানুষের দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে যুক্ত উদ্যোগ বা প্রকল্পে এটা প্রত্যাশিত নয়।

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জবাবদিহির নতুন অধ্যায়

    আইনের মুখোমুখি সাবেক প্রধানমন্ত্রী
শেয়ার
জবাবদিহির নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জবাবদিহির দাবি বহুদিনের। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ সেই জবাবদিহির পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধের প্রথম কোনো মামলার বিচারকাজ শুরু এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। অভিযোগগুলোর মধ্যে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতন নির্দেশের দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ অন্তর্ভুক্ত।

এই বিচার বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করছে, যেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও আইনের ঊর্ধ্বে ননএই বার্তাটি স্পষ্ট হচ্ছে।

এই বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি চাঞ্চল্যকর দিক হলো মামলার অন্যতম আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের দোষ স্বীকার এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ঘটনার ভেতরের সত্য উদঘাটনে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। আমরা মনে করি, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করা গেলে মামলার গতি-প্রকৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

একই সঙ্গে শেখ হাসিনার কৃষি ভাবনার আড়ালে দুর্নীতির চাষাবাদ! শীর্ষক আইএমইডির প্রতিবেদনটি আরো একটি গুরুতর দিক তুলে ধরেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র ও প্রযুক্তি সমপ্রসারণ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় ও দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৪টি সেবাকেন্দ্রের মধ্যে ১৪টির সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা অকার্যকর, যন্ত্রপাতি চুরি হয়েছে বা অব্যবহৃত এবং ভবন নির্মাণে নিম্নমান ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেটের অভাবএগুলোর সবই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভয়াবহ গাফিলতি, নজরদারিহীনতা ও দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ। কৃষকদের হাতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবে কাগুজে সফলতায় পর্যবসিত হয়েছে, যেখানে সাধারণ কৃষকরা কোনো দৃশ্যমান সুবিধা পাননি।

এই দুটি ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং আইনের শাসনের গুরুত্বকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। একসময় যাঁরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবতেন, তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা এবং তাঁদের শাসনামলে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্ত ও উন্মোচন করা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি অপরিহার্য ধাপ। বিশেষ করে যখন আইএমইডির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে পায়, তখন এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।

তবে এই বিচারিক প্রক্রিয়া এবং দুর্নীতি দমনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচার করলেই হবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে ক্ষমতাশীল ব্যক্তিরা জনগণের সম্পদ লুটপাট করতে সাহস পাবেন না।

জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত, নিরপেক্ষ বিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখতে হবে। এই পদক্ষেপগুলোই বাংলাদেশকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।

মন্তব্য

গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসুক

    ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন
শেয়ার
গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসুক

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই জাতীয় নির্বাচন হচ্ছেএটি এখন আর কেবল কোনো ধারণা নয়, একটি বাস্তব বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। একই সঙ্গে দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করছে।

যে কয়েকটি দল নানা শর্ত ও দাবি উত্থাপন করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে তুলছিল, তাদেরও সুর অনেকটাই নরম হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রায় কোনো সংশয়ই থাকছে না। নির্বাচন কমিশনও সেভাবে এগিয়ে চলেছে।

দেশের মানুষ একটা দীর্ঘ সময় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।

তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা গণ-অভ্যুত্থানে শরিক হয়েছে। বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়াতেও দ্বিধা করেনি। অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশংসিত নেতৃত্ব ছিল।
তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় স্থির হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতারাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমরা মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোনো দল বিতর্ক করলেই সেটার মানে এই নয় যে তারা নির্বাচন চায় না কিংবা নির্বাচন পেছাতে চায়। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচন যদি সংসদের না হয়, তাহলে দেশে একটা অন্ধকার শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। গতকাল তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই ঘোষণাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। জানা যায়, নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে। তারা মুখে যা-ই বলুক, নতুন এই দলের চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিকে অনেকেই নির্বাচনী প্রচার হিসেবে দেখছেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচিত রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় না এলে সংকট কেবল বাড়তেই থাকবে। তাই আমরা চাই, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসুক।

মন্তব্য

অডিও টেপের সত্যতা নির্ধারণ

    হাসিনাই গুলি চালানোর নির্দেশদাতা
শেয়ার
অডিও টেপের সত্যতা নির্ধারণ

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থান দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিবিসি আইয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও আলোচিত ঘটনাগুলোর একটির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে এবং এর সত্যতা যাচাইয়ে বিভিন্ন প্রমাণ (ছবি, ভিডিও, ড্রোন ভিডিও, অডিও রেকর্ড, গণমাধ্যম কাটিং, ফুটেজ ও সাক্ষাৎকার) ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য ফাঁস হওয়া অডিও টেপটি নকল নয়, যা বিবিসির গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

বিবিসির প্র্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ধারণার চেয়েও অনেক বেশি, অর্থাৎ মোট ৫২ জন আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, যা আগে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিবিসির যাচাই করা রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেপ্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তাঁরা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাঁদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, তাঁরা গুলি করবেন। এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ‌‘নির্দেশেরসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন।

এই কল রেকর্ডটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা উদ্ধার করেছেন এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এটিকেট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি বলে মন্তব্য করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেআনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হলে বিচারের সময় এই ফোনালাপ সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও রয়েছেন। মামলাটিসুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনেও গত বছরের জুলাই ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্র আন্দোলন মোকাবেলায় অভিযান পরিচালনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

এই গুরুতর অভিযোগগুলো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। যদি প্রমাণিত হয় যে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তবে তা দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই ধরনের ঘটনার নিরপেক্ষ স্বচ্ছ তদন্ত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দেশের জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতে ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য

প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ

    ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন
শেয়ার
প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ

অবশেষে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে যে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বা রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে এবং জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানতে চান, নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কি না। তিনি বলেন, যদি নতুন নিয়োগ করতে হয়, তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। প্রতিদিন ট্রেনিং হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা কখনো কখনো ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়ে আসছিলেন। আর বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বাম দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

এমন অবস্থায় গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার বরাতে বলা হয়েছিল, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। এর ২৬ দিন পর গতকাল রাত ৮টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আর তাতেই প্রকাশ পায়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দ্রুতই নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগবে। গত সোমবার সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আয়োজন করবে।

অবশ্য কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এখনো বলা হচ্ছে, আগে বিচার ও সংস্কার, পরে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সংগত কারণেই মানুষের মনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দ্বিধা-সন্দেহ কাজ করছিল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর সেই সন্দেহ অনেকটাই কেটে গেছে।

আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন। দেড় দশক ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ আগামী ফেব্রুয়ারিতে উৎসবের পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ