<p>সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুস্থ পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। তাই প্রয়োজন নিজের আশপাশের ও দেশের পরিবেশ ঠিক থাকা। বর্তমান সময়ে পরিবেশদূষণের মাত্রা এত বেড়েছে যে বেশির ভাগ মানুষ দূষণজনিত নানা রোগে ভুগছে। দ্রুত বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ। বাংলাদেশে পরিবেশের মানোন্নয়ন নিয়ে কাজ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় নিজেই বিভিন্ন রকম দূষণে দূষিত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দেশের পরিবেশ উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়; কিন্তু প্রকল্পের বাস্তব কাজ এগোয় না। এ অবস্থায় দেশের পরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্ব কে নেবে?</p> <p>কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের ২৩টি প্রকল্পের মধ্যে ১৪টিরই কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশের কম। অথচ কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটির বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতেই উঠে এসেছে এমন হতাশাজনক চিত্র। এমন একটি প্রকল্পের নাম হচ্ছে ‘এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর দ্য পাওয়ার সেক্টর উইথ দ্য ফাইনাল ডিসপোজাল অব পলিক্লোরিনেটেড বাই ফিনাইল (পিসিবি)’। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। একই সময়ে মেয়াদ শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ‘শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্ক’ প্রকল্পের, যার বাস্তব অগ্রগতি আরো কম, ১৭.৮৩ শতাংশ মাত্র। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হবে ‘ইকোসিস্টেম বেসড অ্যাপ্রোচ টু অ্যাডাপশন (ইবিএস) ইন দ্য ড্রাউট প্রোন বারিন্দ ট্র্যাক্ট অ্যান্ড হাওর ওয়েটল্যান্ড এরিয়া’ প্রকল্পের। অথচ এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৬.৪০ শতাংশ। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণ এখন বিপজ্জনক মাত্রায় চলে গেছে। শব্দদূষণের কারণে বহু মানুষ প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে। এমন একটি জরুরি বিষয়ে গৃহীত হয়েছে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’। এই প্রকল্পের তিন বছর মেয়াদের মধ্যে দুই বছর এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২.২৭ শতাংশ। প্রায় একই রকম অবস্থা আরো অনেক প্রকল্পের। কাজের এমন অস্বাভাবিক ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটিও। মন্ত্রণালয় ধীরগতির জন্য করোনা মহামারির অজুহাত দিলেও সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে কাজের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করা হয়েছে বেশি। কমিটির বৈঠকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা এবং ব্যয় কমাতে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।</p> <p>সরকারি প্রকল্পের গতি-প্রকৃতি ও হাল-হকিকত নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প রয়েছে। সেসবে আমরা যেতে চাই না। সংসদীয় কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরাও বলতে পারি, প্রকল্প গ্রহণে আরো যৌক্তিক হতে হবে। প্রকল্পের সময় বাড়ানোর উদ্দেশ্যমূলক প্রথাটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।</p>