<p>করোনার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ অনেক ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়েছিল কঠোর লকডাউন আরোপ করতে। লকডাউন কার্যকর করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল। এর পরও বুধবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ছিল ২৯ শতাংশ এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ২১০। এর মধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহা কাছে চলে আসায় কঠোর বিধি-নিষেধ অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহনের চলাচল শুরু হয়েছে। মার্কেট, দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে যথেষ্ট ভিড়ও দেখা গেছে। এদিকে দেশব্যাপী কোরবানির পশুর হাটও জমে উঠেছে। সরকার সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানালেও তা খুব কমই মানা হচ্ছে।</p> <p>করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপে ফিরে আসার জন্য ভাইরাসের ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভেরিয়েন্টকে প্রধানত দায়ী করা হয়। শুরুতে সংক্রমণ ভয়াবহ রূপে ছড়িয়েও পড়েছিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায়। কিন্তু এখন তা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ১২ হাজার ৩৮৩ রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল, পাঁচ হাজার ৫৮ জন। এর পরই ছিল চট্টগ্রাম বিভাগ, সেখানে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৪৭০ জন। সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বরিশাল ও সিলেট বিভাগেও। আগে সংক্রমণ শহরাঞ্চলে থাকলেও এখন তা গ্রামাঞ্চলে সমান তালে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি উদাসীন। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এবার সংক্রমণের গতি রোধ করা অপেক্ষাকৃত বেশি কঠিন হবে। কোরবানির পশুর হাট আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের একমুখী চলাচল থাকতে হবে। হাটে আসা সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সবার তাপ মাপার জন্য যন্ত্র, হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি, বেসিন ও জীবাণুনাশক সাবান রাখতে হবে। এই নির্দেশনাগুলো যাতে যথাযথভাবে মানা হয় সে জন্য প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আক্রান্তের হার কমানো না গেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিদ্যমান হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হবে না। অক্সিজেনসংকট চরমে উঠতে পারে। চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তেমন পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্য এখন থেকেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের সব মানুষকে দ্রুত টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য দৈনিক টিকা প্রদানের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। যারা ঈদে কর্মস্থল ছাড়বে তারা যেন নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে তার সুযোগ রাখতে হবে। অতীতের মতো ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে চলাচল কোনোভাবেই কাম্য নয়।</p>