অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার কমছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা
- মানুষের সেবক হিসেবেই কাজ করে যাবেন
notdefined

অতীতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ঘটে যাওয়া অনেক অনিয়মের খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। কিছু লোভী মানুষ দুস্থ ও অসহায় মানুষকে দেওয়া সরকারি সহায়তার অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। সেসব মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইল ফোনে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
কোনো দেশের উন্নয়ন অনেকটাই নির্ভর করে নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার ওপর। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখনই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ক্ষমতা চলে যায় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে। একই সঙ্গে থেমে যায় দেশের উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি আবার ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। দেশ এরই মধ্যে অনেক দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে চলে এসেছে। আমাদের বিশ্বাস, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে বাংলাদেশ দ্রুতই উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে।
সম্পর্কিত খবর

শোক, মানবিকতা এবং জরুরি প্রশ্ন
- মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে, যা শোকস্তব্ধ করেছে পুরো জাতিকে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার চতুর্থ দিনেও ক্যাম্পাসের থমথমে পরিবেশ, নিখোঁজদের জন্য অভিভাবকদের হাহাকার এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির বেদনাদায়ক চিত্র তুলে ধরেছে। এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং আমাদের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষত, যা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৪-এ পৌঁছেছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ৪৯ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানবিক দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, যা কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
তবে এই দুর্ঘটনার সঙ্গে কিছু জরুরি প্রশ্নও সামনে এসেছে। যুদ্ধবিমান কেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিধ্বস্ত হলো? প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা প্রোটোকল কী ছিল? এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। তবে সমানভাবে জরুরি আহত ও নিহতদের পরিবারকে স্থায়ী পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া। যে শিশুরা আর কখনো স্কুলে ফিরবে না, তাদের পরিবারের প্রতি জাতির দায় কেবল দয়া নয়, দায়িত্ব।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির এই শোকাবহ মুহূর্তে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করার পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আসন্ন বিপর্যয় রোধ করুন
- শিল্প-বিনিয়োগে স্থবিরতা

দেশের অর্থনীতি ভয়ংকর বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেশের উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের প্রকাশিত হতাশার সুর।
কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের টুঁটি চেপে ধরার মতো নানামুখী সংকট ও অস্থিরতা। এর মধ্যে ছিল করোনা মহামারি, যা চলেছে কয়েক বছর ধরে।
নানা রকম সংকটে সাম্প্রতিক সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। সদ্যোবিদায়ি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯.৬ শতাংশ, যা শিল্প উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান সংকটে গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ। এর সঙ্গে বিদ্যমান ১৬ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে তা দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের শুল্কের পরিমাণ অনেক কম। ফলে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। তাঁরা তাকিয়ে আছেন ২৯ জুলাইয়ের চূড়ান্ত আলোচনার দিকে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শিল্পায়নের স্বপ্ন ভেঙে গেলে শুধু কর্মসংস্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বাংলাদেশ হারাবে আত্মমর্যাদা ও ভবিষ্যতের পথ। তাই যেকোনো মূল্যে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আর সে জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই ব্যর্থতা দূর করতে হবে
- ইতিহাসের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

জনকল্যাণে সরকার নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় শত শত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছর শেষে দেখা যায় এডিপি বাস্তবায়নের হার থাকে খুবই কম। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বাড়ে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৮টি প্রকল্প ছিল এডিপির আওতায়। এসব প্রকল্পের জন্য সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পুরো বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশের মতো অর্থ খরচই হয়নি। অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও দেখা গেছে ব্যয় কমে যাওয়ার প্রবণতা।
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু বাজেট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পরিকল্পনা, দক্ষতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা—এই তিনের সমন্বয় না হলে এডিপি বার্ষিক টার্গেটের নিচেই থেকে যাবে। আমরা মনে করি, প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর জবাবদিহির আওতায় আনাই হতে পারে ভবিষ্যতের বাস্তবায়ন সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

রাজনৈতিক সরকার জরুরি
- আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার উত্খাতের পর গঠিত হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল এই সরকার। কিন্তু এক বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
এরই মধ্যে সরকারের দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। সংস্কার যদি দৃষ্টান্তমূলক না হয়, নির্বাচনও যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য চোখে পড়ছে না, বরং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে।’ বুধবার রাজধানীতে একটি গোলটেবিল বৈঠকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মিষ্টি কথা, ভালো কথা, ভালো উদ্যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু হয়েছে।...আজ পাওনার হিসাবটা খুবই জরুরি। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—এই বিষয়গুলোতে এক বছরে কী কী হলো, সেই পাওনার হিসাবটা আজ মূলকথা হতে হবে।’ একই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোনো ভয়ভীতি নেই, এমনটা কেউই বলতে পারবে না।
অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার না এলে সমস্যা আরো বাড়বে।
দেশ এখন গভীর খাদের কিনারে। সেই খাদে একবার পতিত হলে সেখান থেকে দেশকে টেনে তোলা প্রায় অসম্ভব। তাই আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আর সে জন্য প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেই হবে।