ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে কারগারে পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পুরান ঢাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁকে মদ্যপানের অভিযোগে এক বছর ও অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সংসদ সদস্যের ছেলে জেলে
- অপরাধ করলে সাজা পেতেই হবে
অন্যান্য

মারধরের ঘটনাটি ঘটে রবিবার সন্ধ্যার পরে রাজধানীর কলাবাগান ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে। সেখানে ইরফানকে বহন করা জিপগাড়িটি নৌবাহিনী কর্মকর্তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় কিছু কথা-কাটাকাটির পর ‘সংসদ সদস্য’ স্টিকার লাগানো গাড়ি থেকে নেমে আরোহীরা নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে পিটিয়ে জখম করেন।
কলাবাগানে যে ঘটনাটি ঘটল সেটি নিছকই ক্ষমতা প্রদর্শন। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে কারোরই, তিনি যদি ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে জড়িয়েও থাকেন, এ ধরনের আচরণ করার সুযোগ নেই। র্যাব-পুলিশ পরবর্তী সময়ে ইরফান সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র, মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে। বাড়িতে একটি টর্চার সেলেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। অনুমোদনহীন ৩৮টি ওয়াকিটকিসহ এমন কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া গেছে, যেগুলো বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। একজন আইনপ্রণেতার সন্তানের বাড়িতে এমন বেআইনি কাজকর্ম কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। ‘সংসদ সদস্য’ স্টিকার লাগানো গাড়ির যেরূপ ব্যবহার হয়েছে তা-ও আমাদের হতবাক করেছে।
ক্ষমতার অপপ্রয়োগের এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে আমাদের দেশে। ক্ষমতাসংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে ক্ষমতা প্রদর্শনেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অন্যায়কারী জনপ্রতিনিধি হলেও তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরাও তাই চাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রত্যাশা করি।
সম্পর্কিত খবর

মহাচ্যালেঞ্জে পোশাকশিল্প
- মার্কিন শুল্কের খড়্গ

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প এক নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। শুল্ক কমানোর ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায়ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিনটি প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্পের এক নজিরবিহীন সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা কেবল রপ্তানি নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও বেশি। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৫১ শতাংশে দাঁড়াবে। এর ফলে গত বছরের চেয়ে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এই বোঝা এতটাই বেশি যে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের মতে, ‘৩৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে সত্যি টিকে থাকা কঠিন হবে।
এরই মধ্যে এই শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। বিশ্বখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট তাদের প্রায় ১০ লাখ পিস সাঁতারের প্যান্টের অর্ডার স্থগিত বা বিলম্বিত করেছে, যা অন্যান্য ক্রেতার মধ্যেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। পোশাক কারখানার মালিকরা জানাচ্ছেন, মার্কিন ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যা লাভের মার্জিন কমিয়ে দিচ্ছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের মুখে ফেলছে। মার্কিন ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে জর্দান, মিসর, ইথিওপিয়া কিংবা কেনিয়ার মতো নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছে।
এমনিতেই সংকটে থাকা বস্ত্রশিল্পে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। বস্ত্র খাতের সাড়ে পাঁচ শতাধিক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস-পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার, রপ্তানি প্রণোদনা হ্রাস, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত্ত—সবকিছুই বস্ত্র খাতের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।
এই মহাচ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্তিশালী কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা এবং অভ্যন্তরীণ শিল্পকে বাঁচাতে অবিলম্বে এআইটি ও সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে, যার পরিণতিতে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে, অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দায় সরকারকেই নিতে হবে
- আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

মিটফোর্ডে পাথর দিয়ে থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার রাজধানীর পল্লবীতে এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসী। তারা সেখানে ভাঙচুর করে এবং কয়েক রাউন্ড গুলিও চালায়। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হলে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচকে বাংলাদেশ ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে।
সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেক খবরে দেখা যায়, কেবল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে দৈনিক কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে। বেড়েছে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিশোর গ্যাং নামে সারা দেশেই অরাজকতা সৃষ্টির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। দেশজুড়ে এভাবে অরাজকতা বৃদ্ধির পেছনে অনেকে ভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রেরও গন্ধ পাচ্ছেন। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদানের পরপরই দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

ভালো কলেজে ভর্তির সংকট
- মোট আসনের অর্ধেকই খালি থাকবে

সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন আনন্দের ঢেউ লেগেছে, তেমনি একাদশে ভর্তির দুশ্চিন্তাও ক্রমেই বাড়ছে। দেশের কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি থাকা সত্ত্বেও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে প্রতিবছরই তীব্র ভর্তিযুদ্ধ দেখা যায়। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন এই বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।
আন্ত শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাধারণ কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি আসন রয়েছে।
রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত; যেমন—ঢাকা কলেজে এক হাজার ২০০টি, নটর ডেম কলেজে তিন হাজার ২৭০টি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই হাজার ৩৭৬টি। এ ছাড়া স্কুল সংযুক্ত কলেজগুলোতেও তাদের নিজস্ব স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়। ফলে বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ আরো কমে আসে। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক বণ্টন এবং সংখ্যায় গুরুতর ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কথা বললেও সব শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে না, বরং শিক্ষার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। যদি দেশের বেশির ভাগ কলেজ মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষায় ভালো ফল করতে বা ভবিষ্যতে কর্মজীবনে সফল হতে বাধাগ্রস্ত হবে।
এই সমস্যার সমাধানে সারা দেশে মানসম্মত কলেজ তৈরি এবং বিদ্যমান কলেজগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। অঞ্চলভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ প্রসারিত করতে হবে।

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
- আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা ক্রমেই বাড়ছে।
গণমাধ্যমে নৃশংস খবরের ছড়াছড়ি বিবেকবান মানুষকে আহত করছে। কিন্তু খবর তো খবরই।
প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনাখুনি বাড়ছে। এসব ঘটনা মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে দেশে এক হাজার ১৩৯টি ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে ২২৮টি। গত বছর প্রতি মাসে এই সংখ্যা ছিল গড়ে ১৫৮টি। এই পাঁচ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৮৭টি, যা গড়ে প্রতি মাসে ৩১৭টি। আগের বছর প্রতি মাসে ছিল ২৮৬টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত পাঁচ মাসে ৯ হাজার ১০০ মামলা হয়েছে, যা গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার ৮২০টি। আগের বছর গড়ে প্রতি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের আইনে মামলা ছিল এক হাজার ৪৬৪টি। অপহরণের মামলা এই পাঁচ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৮৭টি; গত বছর প্রতি মাসে ছিল ৫৪টি। অন্যদিকে দায়িত্ব পালন করতে গেলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়েছে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ও হত্যা-সন্ত্রাসের খবর কেবল দেশেই সীমিত থাকে না, ছড়িয়ে যায় দেশের বাইরেও। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিনিয়োগ, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তার প্রভাব পড়ে। এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে বাংলাদেশ আগেরবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। এই অধোগতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।