<p>কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ঘটনার যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নিতে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা করেছে তাঁর পরিবার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে।</p> <p>কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ এরই মধ্যে একটি ভীতিকর এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ কিছুদিনের মধ্যে পরিণত হয় আতঙ্কের ‘ক্রসফায়ারের’ নিরাপদ এলাকা হিসেবে। পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে মেরিন ড্রাইভে এত ব্যাপক হারে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে যে মেরিন ড্রাইভ এখন যেন ‘রোড টু ডেথ’-এর সমার্থক হয়ে উঠেছে। গত দুই বছরে শুধু মেরিন ড্রাইভেই অর্ধশতাধিক ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা ঘটেছে। কালের কণ্ঠের একটি খবরে বলা হয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযানে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারে’ ১৬১ জন নিহত হয়েছে। এর বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। এলাকাটি ‘ক্রসফায়ার জোন’ হয়ে উঠলেও থামেনি ইয়াবার কারবার। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হচ্ছে, টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় ইয়াবাবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আগে থানার কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেই ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ ছিল। চলছিল ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’। পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ একেবারেই নতুন নয়। অবৈধ উপার্জনের পথ হিসেবে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পরও পুলিশের গ্রেপ্তার বাণিজ্য থেমে নেই। এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্য কৌশল খাটিয়ে ব্যবসায়ী ও তরুণদের বিরুদ্ধে ইয়াবা বাণিজ্যের অভিযোগ আনছে। তাদের পকেটে বা জুতার ভেতরে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে।</p> <p>জননিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। বিপদে-আপদে জনসাধারণ পুলিশের সাহায্য নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে একধরনের ভীতি রয়েছে। আবার এটাও সত্য যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>এই করোনাকালে আমরা মানবিক পুলিশ বাহিনীকে দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এই ঘটনাটি পুলিশকে আবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কয়েকজন সদস্যের কারণে একটি বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। কাজেই কক্সবাজারের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।</p>