<p>বিশ্বজুড়েই শিশুরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। যৌন হয়রানি, সহিংস আক্রমণ, শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতন ও অবহেলা—এর যেকোনোটা ঘটতে পারে তার সঙ্গে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এখানেও শিশুরা এমন অনাচারের শিকার হয়। সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে এবং মানসিকভাবে হয়রানি অহরহই ঘটছে। দেশের ১৮টি ইউনিয়নের ওপর জরিপ করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে ৬১ শতাংশ শিশু। আর ৬৭ শতাংশ শিশু বাল্যবিয়ে ও ৬১ শতাংশ শিশু রয়েছে শিশুশ্রমের সঙ্গে।</p> <p>সরকার নারী ও শিশুর সুরক্ষায় নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’, ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন,-২০১০’, ‘মানবপাচার (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১২’, ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’, ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭’, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫) প্রণয়ন করেছে। তার পরও থেমে নেই শিশু নির্যাতন। গত সেপ্টেম্বর মাসে শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর গড়ে মাসিক শিশু নির্যাতনের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩৮১ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গড়ে ৪৫৭ জন করে মোট তিন হাজার ৬৫৩ শিশু বিভিন্ন রকম সহিংসতার শিকার হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯৭ শিশু। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার শিকার ১০৪ জন। অন্যদিকে এ সময়ের ভেতর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৬১ শিশু। এ ছাড়া হত্যার শিকার ২৮৫, আত্মহত্যা ১৩৩, অপহরণের শিকার ১৪৫, নিখোঁজ ১০৪, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯২ জন শিশু। এই চিত্র নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শিশুর সুরক্ষা আইন এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে শিশুদের জন্য যেসব সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোতে মান ও সমতার ঘাটতি রয়ে গেছে। শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের ভেতর বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন ও শিশু নির্যাতনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া শিশু আইন-২০১৩-এর বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়ার নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি, বাল্যবিয়ে রোধে প্রণীত আইন, নীতিমালা ও জাতীয় পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের উদ্যোগও নিতে হবে। এসব সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হলেই নিশ্চিত করা যাবে শিশুর সুরক্ষা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।</p>