ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
করোনা

কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো

  • বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে চীনের উহান টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন সুমাইয়া সন্ধি। বিশেষ বিমানে উহান ফেরত বাংলাদেশিদের একজন তিনি। আশকোনার হজ ক্যাম্প থেকে আরো ৩১১ জনের সঙ্গে ছাড়া পেয়েছেন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। ক্যাম্পজীবনের গল্প বলেছিলেন আতিফ আতাউরকে
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো
লাবিবার সঙ্গে

মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসির পাঠ চুকানোর পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হই। এখানে পড়াশোনা ভালোই চলছিল। একপর্যায়ে চীনে পড়ালেখার সুযোগ পাই। কারণ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির একটি চুক্তি করা আছে।

প্রতিবছরই বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটির কিছু নির্বাচিত শিক্ষার্থী চীনের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। চীনা সরকার প্রণোদনাভাতাসহ থাকা এবং পড়াশোনার সুযোগ দেয়। এভাবেই চীনে পড়তে গিয়েছিলাম ২০১৮ সালের অক্টোবরে। সেখানে ফ্যাশন ডিজাইনে মাস্টার্স করছিলাম।
সামনের জুলাইয়ে দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় উহানে। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এই ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি আমরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওটা মেনে এক ধরনের বন্দিজীবন কাটাচ্ছিলাম। কবে মুক্তি পাব জানা ছিল না। রীতিমতো ভীতিকর এক পরিবেশ ছিল ওটা। পাঁচ-ছয় দিন পর পর খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে যাওয়া হতো আমাদের। ২০ জনের মধ্য থেকে একজনকে প্রতিনিধি করা হয়েছিল।
সে গিয়ে ওগুলো নিয়ে আসত। দিনে দুটি করে মাস্ক দিয়ে যাওয়া হতো। ভেতরেও সব সময় পরে রাখতে হতো। এরপর বেইজিং দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করে জানানো হয়, দেশে ফিরিয়ে আনা হবে আমাদের। একপর্যায়ে বিশেষ বিমানে চড়ে দেশে ফিরি। জানতাম, দেশে ফিরে ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কিছুদিন কাটাতে হবে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। তবে উহানের ভয়ংকর পরিবেশ থেকে নিজ দেশের মাটিতে ফেরার স্বস্তিটা ছিল অনেক বড়। আবার আপনজনদের সঙ্গে দেখা করতে না পারার বেদনাও পোহাতে হয়েছে এই কয়েক দিন। চীনে বেশ ভালোই ছিলাম। থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ডরমিটরি আছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। দুজন করে এক রুমে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে অনেকে একজন এক রুমও পান। নিজের জন্য বিছানা, টেবিল, চেয়ার, আলমারি, এসি। সঙ্গে অ্যাটাচ বাথরুম, বারান্দা। প্রতি ছয়জনের জন্য একটি করে আলাদা রান্নাঘর। স্বাভাবিকভাবেই আশকোনার হজ ক্যাম্পে এসব আশা করা উচিত নয়। প্রথম দিন যখন ক্যাম্পে আসি তখন অনেকটাই অপরিচ্ছন্ন ছিল জায়গাটা। পরে ধীরে ধীরে পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছিল। আমরা একেকটা রুমে ২০-২৫ জন থাকতাম। প্রত্যেকের জন্য মাটিতে সিঙ্গেল ফোমের বিছানা, চাদর, কম্বল, মশারি ছিল। আরো ছিল নিজস্ব ব্যবহারের জন্য সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ, স্যানিটাইজার, তোয়ালে, পেস্ট, ব্রাশ, স্যান্ডেল, টিস্যু। প্রতিদিন দুই বেলা করে নতুন মাস্কের ব্যবস্থা ছিল। এটার ব্যবহার ছিল আবশ্যকীয়। পাশাপাশি গোসলের জন্য দেওয়া হয় গরম পানি, রুম হিসেবে চারটি করে বালতি, মগ। মশা তাড়ানোর জন্য প্রতিদিন দেওয়া হতো ওষুধ। এ ছাড়া আলাদাভাবে মশা মারার জন্য দেওয়া হয়েছিল ইলেকট্রিক ব্যাট ও অ্যারোসল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ