<p> ইসলাম মানবতা, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের ধর্ম। এ ধর্মের নবীকেই পাঠানো হয়েছে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য মানবিকতা ও করুণার মূর্তপ্রতীক হিসেবে। হাল আমলের মানবাধিকারের ধ্বজাধারীদের চেয়ে ইসলামের মানবাধিকার ধারণা আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। ইসলাম কেবল রাষ্ট্রের নাগরিকের প্রতিই অধিকার ও কর্তব্য আরোপ করেনি; ব্যক্তির পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি প্রতিবেশীর অধিকার ও কর্তব্য পালনে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। তাই দ্বিধাহীনচিত্তে এ কথা বলা যায় যে ইসলামের সামাজিক সৌন্দর্য ও আচার আচরণ অন্য যেকোনো ধর্ম ও মতাদর্শ থেকে শ্রেষ্ঠ। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি অধিকার রয়েছে : তন্মধ্যে অন্যতম হলো, রোগী দেখতে যাওয়া'- (বোখারি ও মুসলিম)।</p> <p> অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কানো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, সে না বসা পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের অনুসন্ধানে থাকে, এর পর যখন সে রোগীর কাছে বসে, তখন আল্লাহর অনুগ্রহে নিমজ্জিত হয়ে যায়- (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে হিব্বান)।</p> <p> রোগী দেখার কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। রোগীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে, যা তার মানসিক অবস্থা উন্নত করে এবং তার কষ্ট ও ব্যথা উপশম করে। রোগীর কাছে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করা উচিত নয়। বরং দুই খোতবার মধ্যকার সময় পরিমাণ অবস্থান করবে, প্রথমে তাকে সালাম দেবে। এরপর তার হাত বা কপালে হাত রেখে সাতবার এ দোয়াটি পাঠ করবে- আস্আলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম আঁই ইয়াশফিয়াকা'। এরপর একবার বলবে 'লা বা'সা তুহুন ইনশাআল্লাহু তায়ালা'। প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা করাও কাউকে সহমর্মিতা জানানোর অংশ।</p> <p> <strong>দুঃসংবাদ দেওয়ার পদ্ধতি</strong></p> <p> বন্ধু, আত্মীয় কিংবা প্রিয়জনকে কোনো ভীতিকর বা দুঃসংবাদ দিতে বাধ্য হলে উত্তম পদ্ধতি হলো, বিষয়টি হালকাভাবে বলা। এর জন্য প্রথমে ছোট একটি ভূমিকা উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন আমি অনেক দিন থেকেই শুনছি, অমুক অসুস্থ। তার অসুস্থতা দিন দিন বাড়ছিল। আজ শুনলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আর খাবার খাওয়ার সময়, ঘুমের আগে, অসুস্থ বা শোকেবিহ্বল ব্যক্তিকে দুঃসংবাদ জানানো উচিত নয়।</p> <p> <strong>সহমর্মিতা জানানোর পদ্ধতি</strong></p> <p> শোকাহত ও ব্যথিত কাউকে সান্ত্বনা দেওয়া, তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও ইমানের দাবি। তখন মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.) হজরত আবু সালামা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও যাকে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে কথাবার্তার ধরন এমন হওয়া চাই, যা তার শোকতাপকে প্রশমিত করে। উদাহরণত ধৈর্যশীলতা, আল্লাহর আমানত, দুনিয়ার ক্ষয়িষ্ণুতা বিষয়ে কোরআন সুন্নাহ ও পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের বাণী উল্লেখ করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেন, 'জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ প্রতিদানপ্রাপ্ত হবে'- (সুরা আলে ইমরান : ১৫৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'ভূপৃষ্ঠের সব কিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া'- (সুরা আর রহমান : ২৬-২৭)।</p> <p> হজরত উমর (রা.) বলতেন, 'প্রতিদিন বলা হয় অমুক মৃত্যুবরণ করেছে, অমুক মৃত্যুবরণ করেছে। আর এটাও অবশ্যম্ভাবী যে, একদিন বলা হবে উমর মৃত্যুবরণ করেছে।'</p> <p> লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ</p>