ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭
নগরজীবন

‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসে!’

শওকত হোসেন, বাসার কেয়ারটেকার মোহাম্মদপুর, ঢাকা
শওকত হোসেন, বাসার কেয়ারটেকার মোহাম্মদপুর, ঢাকা
শেয়ার
‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসে!’

ঢাকার জীবন শুরু কিভাবে?

ঢাকায় ১২ বছর ধরে আছি। আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। তাদের সঙ্গে গ্রামে আছিলাম। কিন্তু সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা।

এক দিন কাজ থাকে তো, তিন দিন বইয়া থাকন লাগে। ভাবলাম, গ্রামে না থাইকা শহরে যাই। একটা না একটা কাজ তো পামুই। সেই আশাতেই গ্রাম ছাইড়া ঢাকায় আইছিলাম।
প্রথমে একাই আসি। এরপর কাজকাম করি। তারপর পুরা পরিবার নিয়া আসছি। বড় ছেলে চা কম্পানিতে চাকরি করে, দোকানে দোকানে চা বিক্রি করে।
ছোট ছেলে একটা বেকারিতে চাকরি করে। আর বউ কাজ করে বাসাবাড়িতে।

 

ঢাকায় এসে কী কাজ শুরু করলেন?

আমি তো অনেক কাজ পারি। যখন যে কাজ হাতে আসে, সেই কাজই করি। আমি গ্যারেজ থেকে রিকশাও চালাইছি।

আমি ইলেকট্রিক কাজও পারি। বেশ কয়েক বছর দুধের খামারেও কাজ করছি। আমার কাছে কোনো কাজই ছোট না। ঢাকায় এসে ইনকামের পাশাপাশি অনেক টাকা লোকসানও করছি।

 

লোকসান হলো কিভাবে?

ঢাকায় এক আদম ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম। চার লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে গেছিলাম। কিন্তু কপালে বিদেশ সয় নাই। ওখানে একটা কাজও পাইছিলাম। কিন্তু ঠিকমতো বেতন পাইনি। পরে বাধ্য হয়া দেশে চইলা আইছি।

 

দেশে এসে কী করলেন?

বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ নিছি। মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন। এই টাকা দিয়াই সংসারের খরচ চালাই। বিদেশ যাওয়ার সময় কিছু টাকা ধারও করছিলাম। লোকজন সেই টাকা পাবে। আস্তে আস্তে শোধ দিতাছি। টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই। 

 

ঢাকার জীবন কেমন লাগছে?

ঢাকার জীবন এমনিতে খারাপ লাগে না। তবে ঢাকায় গরিব মানুষের অনেক কষ্ট। যাদের টাকা-পয়সা আছে, গাড়ি-বাড়ি আছে, তাদের কোনো সমস্যা নাই। আমি বাড়িওয়ালার কেয়ারটেকারের চাকরি করি। মাঝে মাঝে ভাবি, লেখাপড়া জানলে তো আমিও এর থেকে ভালো কোনো কাজ করতে পারতাম। কপালে নাই, কথায় আছে না, ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসে!’

 

লেখাপড়া করেননি কেন?

লেখাপড়া করতে তো টাকা লাগে। লেখাপড়ার মতো টাকা মা-বাবা দিতে পারেন নাই। লেখাপড়ার এত মূল্য তখন তো বুঝতে পারি নাই। টাকার অভাবে আমার দুই ছেলেকেও তো পড়াইতে পারলাম না। তারা এখন তাদের মতো কাজকর্ম খুঁজে নিছে। আমিও গ্রামে চলে যাওয়ার চিন্তাভাবনায়ই আছি।

 

গ্রাম থেকে শহরে এলেন, আবার গ্রামে যাবেন?

এই শহরে তো অনেক দিন হইলো। ভাবছি, এবার গ্রামে চইলা যাব। কিছু টাকা-পয়সা জমিয়ে কয়েকটি গরু কিনব, আর দুই-এক বিঘা জমি বন্ধক রেখে ধান-চালের আবাদ করব। পাশাপাশি টুকিটাকি কিছু করলে নিশ্চয়ই ভালোভাবে সময় কেটে যাইব।

সাক্ষাৎকার গ্রহণে : কবীর আলমগীর

ছবি : জান্নাতুল ফেরদৌস শিপন

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ