তুরস্কে ১৯৩৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় মানবিক বিপর্যয় কি কোনোভাবে এড়ানো যেত? প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সরকার কি আরো জীবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারত?
আগামী জুনে তুরস্কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। দীর্ঘ ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী, এরপর ৯ বছর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা এরদোয়ান আবার ক্ষমতায় বসবেন কি না সে উত্তর মিলবে তখনই। তবে হাজারো মৃত্যু আর ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো এই ভূমিকম্প তুর্কি জনগণের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। উদ্ধারকাজ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সময় মতো শুরু হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
কাজের গতি নিয়েও আছে অভিযোগ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজেও অভিযোগ কিছুটা স্বীকার করেছেন।
উদ্ধার তৎপরতায় রাজনীতি : তুরস্কের অনেক অঞ্চলেই উদ্ধারকর্মীরা যেতে পেরেছেন কয়েক দিন পর। বেশির ভাগ দেশের তুলনায় তুরস্কের ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বেশি।
তবে উদ্ধারকারী দল আকুত ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাসুদ মাহরুকি মন্তব্য করেন, এবার উদ্ধার অভিযান নিয়ে রাজনীতি হয়েছে।
১৯৯৯ সালের আগস্টে শেষ বড় ভূমিকম্পের সময় সশস্ত্র বাহিনী উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু এরদোয়ান এবার তাদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বেসামরিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হাতেই নেতৃত্বের ভার দিয়েছেন।
মাহরুকি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর হাতে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে।
সুতরাং দুর্যোগে তাদেরই ব্যবহার করা উচিত।
সতর্ক করা হয় আগেই : আগেই বড় ভূমিকম্পের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানান ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশলী অধ্যাপক নাসি গোরুর। ২০২০ সালের ভূমিকম্পের পর তিনি নির্দিষ্ট করে আদিয়ামান ও কাহরামানমারাস শহরের উত্তরে পরবর্তী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি স্থানীয় সরকার, গভর্নর এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, অনুগ্রহ করে আপনারা শহরগুলোকে ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নিন।
’
তুরস্কের অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিকের বিশ্বাস, ভবন নির্মাণনীতি অনুসরণ না করাই এত ক্ষতির কারণ।
২০১৮ সালে ভবন নির্মাণে নতুন নিয়ম করে তুরস্ক। অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিক বলেন, সব নিয়ম মেনে চললে, কলামগুলো অক্ষত থাকত এবং ক্ষতি বিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু নিয়ম না মানায় মেঝেগুলো একে অপরের ওপর ধসে পড়ে। আর এতেই হতাহতের ঘটনা এত বেড়েছে।
করের অর্থ কোথায় গেল? : ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পর দুবার ‘ভূমিকম্প সংহতি কর’ হিসেবে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তহবিলের অর্থে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরির কথা ছিল। এবারের ভূমিকম্পের পর প্রশ্ন উঠেছে, এই অর্থ দিয়ে কী করা হয়েছে।
নগর প্রকৌশলবিদরা বলেন, ভূমিকম্পপ্রবণ শহরে ভবন নির্মাণের নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। অনেক মানুষকে নিয়ম অনুসরণ না করায় শুধু আর্থিক দণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৬০ লাখ ভবনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সাধারণ ক্ষমা করা হয় হাজার হাজার ভবন মালিককে।
২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলে একটি আবাসিক ভবন ধসে পড়ে ২১ জন নিহত হয়। তখন প্রকৌশলীরা সতর্ক করে বলেন, নিয়ম না মানায় সাধারণ ক্ষমা তুর্কি শহরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করবে।
জানা গেছে, বর্তমানে মূল ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি শহরে সাধারণ ক্ষমার জন্য এক লাখের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল।
আগামী নির্বাচনের প্রচারণা এখনো শুরু না হলেও ছয় বিরোধী দল ক্ষমতার পট পরিবর্তনে জোটবদ্ধ হয়ে প্রার্থী ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জার্মানিতে নির্বাসনে থাকা তুর্কি সাংবাদিক ডেনিজ ইউসেল বলেন, ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্প এরদোয়ানের ক্ষমতায় আসায় ভূমিকা রেখেছিল। সর্বশেষ বিপর্যয়ও পরবর্তী ভোটে প্রভাব ফেলবে। সূত্র : বিবিসি