প্রায় ১১ মাস হয়ে গেছে ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু অনেক ব্রিটিশ এমপি এবং দাতব্য সংস্থার দাবি, আফগান সিটিজেনস রিসেটলমেন্ট স্কিম (এসিআরসি) নামের ওই কর্মসূচি খুবই ধীরগতিতে চলছে। সবচেয়ে বিপন্নদের অনেকেই এখনো আফগানিস্তানে আটকে আছে।
ঘাজাল (ছদ্মনাম) নামের এক আফগান বাসিন্দা জানিয়েছেন, তিনি সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
ঘাজাল বলেন, ‘প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি মুহূর্ত ভীতিকর। আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত।’
একসময় সাংবাদিক ও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঘাজাল। কথা বলেছেন নারী অধিকারের পক্ষেও।
এ কারণে তালেবানের বিরাগভাজন হন। যুক্তরাজ্যের এসিআরসির মাধ্যমে জুনে সে দেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ঘাজাল। তাঁকে একটি রেফারেন্স নম্বরও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আর কিছুই জানানো হয়নি।
তালেবান প্রশাসনের কাছে ধরা না পড়তে বোনকে নিয়ে বন্ধু ও আত্মীয়র বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
তালেবান বাহিনী আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে নারীদের অধিকার খর্ব হয়েছে দেশটিতে। বাড়ির বাইরে গিয়ে চাকরি করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দীর্ঘ দূরত্ব সফর করার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ মানতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি শিশু পার্কের মতো বিনোদনকেন্দ্রেও নারীদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঘাজাল এখনো অবিবাহিত।
নিজের পুরনো চাকরিতে ফেরত যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমানে তাঁকে আর্থিক টানাপড়েনে কষ্ট করতে হচ্ছে। যা সঞ্চয় ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি এবং আইনসভার সদস্য স্টিফেন কিনক বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এমন পক্ষগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এদের মধ্যে নারী অধিকার কর্মী এবং এলজিবিটি প্রচারকরাও রয়েছেন।’
কিনক বলেছেন, আফগানিস্তানে ঝুঁকিতে থাকা সব গোষ্ঠীরই প্রথম বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক যে আমরা নিজেদের দায়িত্ব পূরণে এবং এই মানুষগুলোকে সমর্থনে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যে মূল্যবোধে গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, আইনের শাসন লালন করি তারা এসবের সপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। পরিণতিতে তারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা তাদের পরিত্যাগ করেছি।’
যুক্তরাজ্যে যেতে পারা বেশির ভাগ আফগান ‘অপারেশন পিটিং’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেখানে গেছে। পশ্চিমা সেনা প্রত্যাহারের পরপর ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার সময় অভিযানটি পরিচালিত হয়। সূত্র : বিবিসি