অং সান সু চির বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছে, তা অস্বীকার করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁরা এই অভিযোগকে ‘সবচেয়ে হাস্যকর কৌতুক’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে খবর প্রচার করায় পাঁচ সাংবাদিককে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করেছেন আদালত। অন্যদিকে নিজ দেশের নাগরিকদের মিয়ানমার ছাড়তে বলেছে ব্রিটিশ সরকার।
জান্তা সরকারের পতন ঘটাতে এবং সু চিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চলছে মিয়ানমারের রাজপথে। আন্দোলন দমাতে গুলি ছুড়তেও পিছপা হচ্ছেন না নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জাতিসংঘের হিসাবে, গত এক মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৭০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে।
একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে সু চির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে ১১ কিলোগ্রাম সোনা ও ছয় লাখ ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলে জান্তা সরকার।
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সু চির আইনজীবী কিন মাউং জো বলেন, ‘যেসব অভিযোগ উঠছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। বিশেষ করে সোনা ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ একেবারেই হাস্যকর।
আমি এ ধরনের মিথ্যাচার কখনো শুনিনি।’ অবৈধ ওয়াকিটকি কেনার মামলায় আগামী সোমবার আদালতে তোলা হতে পারে সু চিকে। কিন মাউং বলেন, ‘শুনানি থাকার পরও আমাকে সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’
এদিকে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গতকাল আদালতে অভিযোগ গঠন হয়েছে। তাঁদের একজন বার্তা সংস্থা এপির আলোকচিত্রী থেইন জো।
তাঁর ভাই বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) থেইনের শুনানি ছিল। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি হয়েছে। আমরা মাত্র দুই মিনিটের জন্য তাকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।’
অভ্যুত্থানের পর থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়তই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাঁদের। সর্বশেষ আটক করা হয় পোল্যান্ডের এক সাংবাদিককে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ওই সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
নিজ দেশের নাগরিকদের মিয়ানমার ছাড়তে বলেছে ব্রিটিশ সরকার। গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্রিটিশদের মিয়ানমার ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হলো।’
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়বারের মতো নিন্দা জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তাদের মধ্যে চীন ও রাশিয়াও আছে, যাদের মিয়ানমারের মিত্র বিবেচনা করা হয়। গতকাল ক্রেমলিন বলেছে, মিয়ানমারে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এর আগের দিন চীন জানায়, তারা মিয়ানমারের সংকট সমাধানে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
গত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপড়েন চলছিল। এর মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। জারি করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এক বছর পর নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। তবে সাধারণ মানুষ এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করছে না। তারা অবিলম্বে গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : এএফপি।