রংপুর অঞ্চলে খাদ্য সংকটের শঙ্কায় দিন কাটছে শ্রমজীবী মানুষের। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হলেও তা প্রয়োজনমতো শ্রমজীবীদের হাতে পৌঁছায়নি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে এ অঞ্চলে ছুটে আসা দিনমজুরের কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা আরো বেড়েছে। এখন তাদের সামনে মানবেতর জীবনযাপনের হাতছানি।
রংপুর অঞ্চলে খাদ্য সংকটের শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ২৫ মার্চ থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ২৬ মার্চ থেকে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। সেই সঙ্গে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সে কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন।
রংপুর নগরীর বাহাদুর সিংহ এলাকার রিকশাচালক আজিজুল ইসলাম (৫৫) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে ঘর থেকে রিকশা বের করতে পারেননি। কর্মহীন দিনগুলোয় তাঁর পরিবারে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে রিকশা চালাতে পারিনি। পুলিশ, র্যাব রিকশা চালাতে দিচ্ছে না। এর মধ্যে এক দিন রাতে রিকশা বের করে বুড়িরহাট এলাকা থেকে কাচারি বাজারে যাই।
মানুষ কেনাবেচার হাট বলে পরিচিত রংপুর নগরীর শিমুলবাগ এলাকায় গত সোমবার সকালেও দেখা মেলে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হতে আসা কয়েকজনের। বাসাবাড়িতে মাটি কাটাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়ার আশায় এখানে আসেন তাঁরা। গঙ্গাচড়া উপজেলার ইছলী চর থেকে আসা নজম উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘লেবারি করি হামার সংসার চলে। এক দিন কাম না পাইলে বউ-ছাওয়া নিয়া উপাস থাকা নাগে। বাড়িভিটা, আবাদি জমি তিস্তা নদীত চলি গেইছে। করোনার জন্য সরকার কওছে ঘরোত থাইকপার। সব কামকাজ বন্ধ হয়া গেইছে। অ্যালা হামরা কী করি খামো। অ্যালাও কায়ওতো কিছু দেয় নাই। জানেন তো বাহে ওগের চ্যায়া প্যাটের ভোক বেশি কষ্ট দেয়।’
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় শ্রমজীবী, দিনমজুর পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘১০ লাখ মানুষের বসবাস রংপুর নগরীতে। যার কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে শ্রমজীবী। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যসংকট দূর করতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাল, আলু, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা সহায়তা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা করে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, শ্রমজীবী মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সরকারি সাহায্য যেন সেই শ্রমজীবীদের কাছে ঠিকঠাকমতো পৌঁছানো হয়, সেই লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার গঙ্গাচড়াবাসীর জন্য সরকারের কাছে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশেষ বরাদ্দ কামনা করেন তিনি।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব জেলার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিদের মাঝে সহায়তা বিতরণ করা হবে।
সম্পর্কিত খবর