ই-গভর্নেন্স ও ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত জানতে চাওয়া হলে তার তথ্যবহুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে হবে। ‘ভিশন ২০২১’ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রবন্ধ লিখতে হতে পারে, এর বাস্তবায়নে সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে প্রশ্ন এলে অবশ্যই অনুচ্ছেদ উল্লেখপূর্বক আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা এলে অবশ্যই পরিসংখ্যানসহ লিখতে হবে, অন্যথায় ভালো নম্বর আশা করা যাবে না। পরিসংখ্যান, ডাটা, চিত্র, তথ্য-উপাত্ত, জরিপের ফলাফল দিতে পারলে যেকোনো প্রশ্নেই ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও ঊন-সত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনাগুলো, যা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিকামী মানুষের মনে সাহস সঞ্চার করেছে, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। সর্বোপরি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অর্থবহ ঘটনাগুলো জানতে হবে দিন-তারিখসহ।
বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য বোর্ড প্রকাশিত ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই বেশ সহায়ক। যেকোনো তথ্যের জন্য বাংলাপিডিয়া ও ইন্টারনেটের সহায়তা নিতে পারেন। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বিশেষ করে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় ভালোভাবে পড়তে হবে। রেডিও-টেলিভিশনের খবর শুনলেও কাজে দেবে। বাজারে প্রফেসরস, ওরাকল, বিসিএস, সাইফুরসসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর বিসিএস গাইড পাওয়া যায়। এসব বইও দেখতে পারেন। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ভালো করার জন্য খাতায় সুন্দর উপস্থাপন ও প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে তুলনামূলক বেশি লিখতে হয়। প্রতিটি উত্তরের মানবণ্টন অনুসারে সময় ভাগ করে নিলে কাজে আসবে।
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে ভালো করতে হলে
জেনারেল ও টেকনিক্যাল ক্যাডারে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে। এ অংশের সিলেবাস বেশ বড়। চলমান বিশ্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এর আওতাভুক্ত। তিনটি বিভাগে প্রশ্ন আসবে। ‘এ’ পার্টে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৪। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির পরিচিতি, তাৎপর্য, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে প্রশ্ন থাকবে। এ অংশে সংজ্ঞামূলক প্রশ্ন আসতে পারে, থাকতে পারে যেকোনো একটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নও। বিশ্ব নেতৃত্ব, সাবেক ও বর্তমান ক্ষমতাসীন বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, তাঁদের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা চাই। জানতে হবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের ধরন, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক। আন্তর্জাতিক ক্ষমতাধর বিভিন্ন রাষ্ট্রের অস্ত্র মজুদ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, জাতীয় শক্তি ও ক্ষমতা, দুটি দেশের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের ভূমিকা ও ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণগুলো নোট রাখতে হবে। জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। পররাষ্ট্রনীতি, কূটনীতি, বিশ্বায়ন, ভৌগোলিক ভারসাম্য, প্রাকৃতিক সম্পদ, বৈশ্বিক পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশগত নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এ অংশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক। মুক্তবাণিজ্যব্যবস্থা, বাণিজ্য ঘাটতি, বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আঞ্চলিকীকরণ, আঞ্চলিক বাণিজ্যে বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকা পড়তে হবে। জানতে হবে বৈশ্বিক দারিদ্র্য, বৈদেশিক সাহায্য, বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর প্রভাব। বৈদেশিক সাহায্য, ঋণের পরিমাণ, বিনিয়োগের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য দেওয়ার সময় তথ্য-উপাত্তে ভুল হলে পরীক্ষক বিরক্ত হবেন। প্রশ্নগুলো যেহেতু ৪ নম্বরের, তাই সংক্ষেপেই উত্তর করতে হবে। যতটুকু তথ্য প্রয়োজন এবং প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে তা-ই লিখতে হবে। বিষয়বস্তুর বাইরে অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখলে কেবল সময়ই নষ্ট হবে, বেশি নম্বর পাওয়া যাবে না।
‘বি’ পার্টে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১৫। সব প্রশ্নের উত্তর হবে বিশ্লেষণমূলক। একটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর বিশদ আলোচনা করতে হবে। সিলেবাসের আওতাভুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের কর্মপদ্ধতি, প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের প্রধান সমস্যা ও দ্বন্দ্ব, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ইত্যাদি। ‘সি’ পার্টে ১৫ নম্বরের একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অস্ত্র ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক সাহায্য, বৈশ্বিক পরিবর্তন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। প্রশ্নের ধরন হবে সমস্যা সমাধানমূলক। এ বিভাগের প্রশ্নের উত্তরে উল্লিখিত সমস্যার সমাধান কী হতে পারে, তা তুলে ধরতে হবে। পয়েন্ট আকারে যুক্তিযুক্ত সমাধান তুলে ধরতে পারলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে।
পরীক্ষার শুরুতেই যেসব প্রশ্নের উত্তর করবেন, তা বাছাই ও সময় নির্ধারণ করতে হবে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য ২ থেকে ৪ মিনিট এবং ১৫ নম্বরের প্রশ্নের জন্য ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় রাখা উচিত। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের আগে কী জানতে চাওয়া হয়েছে তা ভালোভাবে বুঝে নিন। উত্তর লেখার শুরুতেই কী কী তথ্য উপস্থাপন করবেন, তা ঠিক করে নিন। প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করুন। শুধু বর্ণনামূলক উত্তর পরীক্ষকের কাছে একঘেয়ে মনে হতে পারে। বর্ণনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সারণি, ছক, গ্রাফ চার্ট দেওয়ার চেষ্টা করুন। অবশ্যই তথ্যের সূত্র উল্লেখ করবেন। অনেকে বেমানান ও বানানো তথ্য দেন, এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।