ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭
চৌকস

ওয়াসিফের আলোছায়া

  • শখের বশে ছবি তুলতে তুলতে কিশোর বয়সেই ওয়াসিফ কবির বনে গেছে একজন ভালো আলোকচিত্রী। ছবি তুলে পেয়েছে অনেক পুরস্কারও। তার গল্প শোনাচ্ছেন জুবায়ের আহম্মেদ
notdefined
notdefined
শেয়ার
ওয়াসিফের আলোছায়া

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ওয়াসিফের ছবি তোলার হাতেখড়ি ২০১৪ সালে। মা-বাবা একটা ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলেন। সেটা হাতে পেতেই ফটোগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন ডালপালা মেলতে থাকে। শুরুতে তার তোলা ছবিগুলো মোটেই সে রকম কিছু হতো না।

তবু ছবি তুলে যেত। কিন্তু এক বছর পেরোতে না-পেরোতেই ২০১৫ সালে ক্যামেরাটা ছিনতাই হয়ে যায়। খুব কষ্ট পেয়েছিল তখন। ওয়াসিফের মা তার কষ্টটা বুঝতে পেরেছিলেন।
বললেন, সামনের পরীক্ষায় ভালো করলে আরেকটা ক্যামেরা কিনে দেবেন। মন দিয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফল করল ওয়াসিফ। নতুন ক্যামেরাও পেল। আবার ছবি তোলা শুরু।
ওয়াসিফ বলে, ‘প্রতিদিন ছবি তুলতে বের হতাম। যা দেখতাম তারই ছবি তুলেছি। রবিউস সানি ভাইয়া আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। ছবি তুলে তাঁকে দেখাতাম। তিনি খারাপ ছবিগুলোকেও ভালো বলে অনুপ্রেরণার জায়গাটা বাড়িয়ে দিতেন।
পরের দিন কিসের ছবি তুলব সে পরামর্শও দিতেন।’

তারপর থেকেই নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার কৌশলগুলো রপ্ত করতে থাকে সে। এখন নিয়মিত ছবি তুলছে নানা ইভেন্টে। পাশাপাশি বিভিন্ন ফেস্টে স্থান পাচ্ছে তার তোলা ছবি। অর্থপূর্ণ ছবি তুলতেই অভ্যস্ত সে। ‘ছবি তুলতে তুলতে একসময় সেই ছবির অর্থ খুঁজতে থাকি। আর এটা করতে গিয়েই মানুষের ছবি তোলা শুরু। মানুষের ছবির সঙ্গে তাদের গল্প তুলে ধরে আমি আমার কাজের আনন্দ খুঁজে পাই।’

দশম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে ওয়াসিফের। সে ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করে। মানুষের গল্পগুলোর পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্যও খুব টানে ওকে। ওয়াসিফ বলে, ‘মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রকৃতিও জড়িত। তাই প্রকৃতির নানা রং, রূপ ক্যামেরায় বন্দি করে আনন্দ পাই।’

ওয়াসিফের তোলা একটি ছবি
অবসরে বই পড়তে ভালোবাসে। সময় পেলে বসে যায় ছবি এডিট করতে। এমন সব মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগে, যাঁরা তাকে উত্সাহ দেন। মা-বাবা গোড়ার দিকে তেমন একটা উত্সাহ দিতেন না। তবে এখন ছেলের তোলা ছবিগুলো তাঁদের এতটাই মুগ্ধ করে রাখে, সব সময় প্রশংসা করেন, উত্সাহ দেন। স্কুলের বন্ধুদের কাছেও নিজের তোলা ছবির কারণে এখন হিরো ওয়াসিফ। মাঝেমধ্যে স্কুলের বিভিন্ন ইভেন্টেও ছবি তোলে। ‘আমার ইচ্ছা পৃথিবীর সব বড় ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড পেয়ে দেশকে আরো পরিচিত করা।’ এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা জানায় ওয়াসিফ। 

বড় হয়ে একজন ভালো নির্মাতা হতে চায় সে। তবে যে কাজই করুক তাতে মানুষের জীবনের গল্পগুলো ফুটিয়ে তুলবে।                                                    

ছবি তুলে যত পুরস্কার : ওয়াসিফ ছবি তুলে প্রথম পুরস্কার পায় এইচটিএফ ফটো কনটেস্ট-২০১৬তে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ বিজনেস ফেস্ট-২০১৭-এ আলোকচিত্রে প্রথম স্থান লাভ করে। হাজী আশরাফ আলী আলোকচিত্রী প্রতিযোগিতা-২০১৭তে প্রথম হয়। এইচজিসি ন্যাশনাল ফটোগ্রাফি কনটেস্ট-২০১৬ ও ২০১৭-এ আলোকচিত্রে প্রথম হয়। আউটওয়ার্ড বাউন্ড অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের অ্যাডভেঞ্চার ফেস্টিভ্যাল-২০১৭-এ অংশগ্রহণ করে। এতেও আলোকচিত্রে প্রথম হয়। জাতীয় বিজ্ঞানমেলা-২০১৭তে আলোকচিত্রে পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। একই বছর ডিআরএমসি জাতীয় বিজ্ঞানমেলায় আলোকচিত্রে হয় দ্বিতীয়। এ ছাড়াও ছোট-বড় আরো অনেক পুরস্কার জিতেছে।

ওয়াসিফের তোলা ছবি এবং এতে স্থান পাওয়া মানুষের জীবনের গল্পগুলো জানতে পার ওর ফেসবুক পেজ  www.facebook.com/ Frames of wasif-এ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ