সব চুলে রং না করে কিছু অংশ হাইলাইট এবং আগার চুল লোলাইট করার ফ্যাশন জনপ্রিয় এখন। চুল রাঙাতে বাজারে আছে নানা ধরনের হেয়ার কালার। তবে ঘরে বসে কম খরচে রাঙাতে চাইলে জানতে হবে সঠিক উপায়, মানতে হবে সতর্কতা। বিস্তারিত জানাচ্ছেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
রং করার আগে
পুরনো একঘেয়ে লুক বদলে ফেলতে চাইলে হেয়ার স্টাইল বদলে নেওয়া সবচেয়ে সহজ সমাধান। ঝটপট লুক বদলে হেয়ার কালার বেশ কার্যকর। তবে চুলের রং আগে মাথায় রাখতে হবে ত্বকের রং, চুলের ধরন, হেয়ার কাট ও ব্যক্তিত্বের বিষয়গুলো। বাজারে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের চুলের রং পাওয়া যায়।
চুলের রং নিয়ে দ্বিধায় থাকলে প্রথমে অস্থায়ী রং করে দেখে নিতে পারেন, সেটা আপনাকে কেমন মানাচ্ছে। অনেক দিন চুল না কাটলে রং করানোর আগে চুলে একটা নতুন কাট দিতে পারেন। বিশেষ করে লোলাইট—অর্থাৎ নিচের দিকে রং করতে চাইলে চুল ট্রিম করে নেওয়া ভালো। চুল রং করার আগের দিন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
ঘরে বসে চুলে রং দেওয়ার আগে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা ভালো করে পড়ে নিতে হবে।
রং করার সময়
চুলে রং করার সময় গাঢ় রঙের পুরনো বা বাতিল পোশাক পরে নিন। এ সময় অসাবধানতায় কপাল, কানের পাশে বা ঘাড়ে রঙের দাগ লাগতে পারে। এসব অংশে পেট্রলিয়াম জেলি মেখে নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
হাতের কাছে ওয়েট টিস্যু রাখুন। ত্বকের কোনো অংশে ডাই লেগে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। আর মেঝেতে পুরনো খবরের কাগজ বা প্লাস্টিক বিছিয়ে নিলে মেঝেতে দাগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। চুলে রং লাগানো হয়ে গেলে একটা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল আটকে ফেলুন। চুলে কতক্ষণ ডাই লাগিয়ে রাখতে হবে, সেটা প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনায় স্পষ্ট করে লেখা থাকে।
সেই নিয়ম মেনে চলুন। কেননা ব্র্যান্ডভেদে চুলে রং বসার সময়ের পার্থক্য হতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পার হলে শাওয়ার ক্যাপ খুলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
পরবর্তী যত্ন
চুলে রং করার পরদিন শ্যাম্পু করতে হবে। রং করা চুলের জন্য আলাদা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পাওয়া যায়। সেই শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন আফরোজা পারভীন। কারণ সাধারণ শ্যাম্পুর চেয়ে কালার চুলের শ্যাম্পুতে ডিটারজেন্টের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। তাই চুলের রঙের কোনো ক্ষতি হয় না। চুল রং করার পর প্রথম দুই দিন চুলে সরাসরি সূর্যের আলো লাগানো যাবে না। বাইরে যেতে হলে স্কার্ফ দিয়ে চুল ভালো করে ঢেকে নিন এবং ছাতা ব্যবহার করুন। হেয়ার ডাই চুল রুক্ষ করে ফেলে। তাই রং করা চুলে শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রাতে চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করলে চুলের রুক্ষতা কমে আসবে। রং করার পর চুলের ধকল সারাতে সপ্তাহে একদিন প্রোটিন প্যাক লাগান। ১ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া, ১টি ডিম, ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ২ টেবিল চামচ টক দই ও একটি পাকা কলা মিশিয়ে বানিয়ে নিন ঘরোয়া প্রোটিন মাস্ক। স্কাল্পসহ সব চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
বিশেষ সতর্কতা
♦ ভালো মানের হেয়ার ডাইয়েও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই চুলে ব্যবহারের আগে ত্বকে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিন। এ জন্য সামান্য ডাই কানের পেছনে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলে বুঝবেন সেই ডাই আপনার জন্য নিরাপদ।
♦ টেস্ট করার পরও ডাই লাগানোর পর ত্বক বা স্কাল্পে কোনো ধরনের জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হলে সঙ্গে সঙ্গে বেশি করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
♦ হেয়ার ডাই এমনিতেই চুল শুষ্ক করে। তাই শুষ্ক চুলে রং করার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। পার্লারে গিয়ে হেয়ার স্পা করিয়ে নিতে পারলে আরো ভালো।
শিল্প খাতের অন্যতম সম্মাননা ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কসমেটিকস, স্কিনকেয়ার ও হোমকেয়ার পণ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক।
২৪ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রিমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া ও পরিচালক আলমগীর আলম সরকারের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। প্রথমবারের মতো কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার উত্পাদক কোনো প্রতিষ্ঠান এই অ্যাওয়ার্ড লাভ করল। রিমার্ক এর আগে বাংলাদেশের কারখানায় উত্পাদিত গ্লোবাল ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কিনকেয়ার প্রদর্শনী দুবাই ডার্মায় অংশ নেয়।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় স্পেশাল ফ্যামিলি ব্রাঞ্চ
ছুটির দিনে পরিবারের সব সদস্যের জন্য বিশেষ ফ্যামিলি ব্রাঞ্চ আয়োজন করেছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।
বিশেষ এই আয়োজনের সঙ্গে থাকছে ফ্রি সুইমিংপুল ও কিডস কর্নার ব্যবহারের সুযোগ। এই অফারের মূল্য জনপ্রতি ছয় হাজার ৫০০ টাকা। শুক্র ও শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপভোগ করা যাবে এই ব্রাঞ্চ অফার। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের কার্ডগ্রহীতারা পাবেন ‘একটি কিনলে দুটি ফ্রি’ অফার। রিওয়ার্ডস মেম্বারদের জন্য রয়েছে ২৫ শতাংশ মূল্যছাড়।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় বর্ষার এই মৌসুমে। মশার হাত থেকে বাঁচার অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ মশারি। বাজারে এখন নানা ধরনের মশারি পাওয়া যায়। এসব মশারির খোঁজ নিয়ে লিখেছেন সাদিয়া এশা
শেয়ার
সোনামণিদের জন্য পাওয়া যাবে নানা ধরনের ফোল্ডিং মশারি। এগুলোর ব্যবহারও বেশ সহজ। ছবি : সংগৃহীত
সকাল-সন্ধ্যা-রাত—মশার প্রকোপ যেন সর্বক্ষণের সঙ্গী। মশার গুনগুন আওয়াজে যেমন ঘুমের গভীরতা ভেঙে যায়, তেমনি মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেয় প্রাণঘাতী মশকের কামড়। মশা ক্ষুদ্র জীব হলেও রোগসংক্রমণকারী হিসেবে এর জুড়ি নেই। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, এনকেফালাইটিসের মতো মারণব্যাধি হতে পারে মশার কামড়ে।
প্রাণঘাতী মশা থেকে বাঁচার উত্কৃষ্ট উপায় মশারি ব্যবহার। এ ছাড়া ঘুমের সময় তেলাপোকা, ছারপোকা, উইপোকা, মাছিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
মশারির বিচিত্র রূপ
মশারির জালে, বুননে, রঙে, আকৃতি আর শৈলীতে দেখা যায় নজরকাড়া বৈচিত্র্য। সাধারণ মশারি, ফোল্ডিং মশারি, ম্যাজিক মশারি, প্রিন্সেস মশারি, মোটা ও চিকন সুতার মশারি মেলে বাজারে।
বুননেও দেখা যায় বিভিন্নতা। মশারির আকারেও রয়েছে নানা রূপ—ডবল, সিঙ্গল ও কিং সাইজ মশারি।
সাধারণত বড় খাটে কিং সাইজ মশারি মানানসই। গোলাপি, কমলা, হলুদ, সবুজ নানা রঙের মশারি পাবেন।
একরঙা মশারিতে রয়েছে কারুকাজ। ফুল, লতাপাতা প্রিন্ট করা মশারির অবশ্য কদর বেশি। সাধারণ এক পার্টের মশারি যেমন রয়েছে, তেমনি ভাঁজের কুঁচি, লেসিং করা মাইক্রোফাইবারের প্রিমিয়াম মশারিও আছে। এ ছাড়া বিশেষ জালে তৈরি করা মশারি পাবেন। এগুলো মশা প্রতিরোধে শক্তিশালী সৈনিকের মতোই কাজ করে।
মশারির ম্যাটেরিয়াল
সুতি, পলিয়েস্টার, নাইলন, সিনথেটিক বা মাইক্রোফাইবারের মতো বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালে তৈরি মশারি পাওয়া যায়। তবে সুতি সুতার মশারির প্রচলন বেশি। কারণ এগুলো গরমে আরামদায়ক। এ ছাড়া পলিথিন, পলিপ্রোপিলিন দিয়েও তৈরি হয় মশারি।
দুই দরজা বিশিষ্ট মশারিগুলোও এখন বেশ জনপ্রিয়
মশারিতে নতুনত্ব
দুই দরজা, তিন দরজা, ঝুল, লেইস যোগ করে নতুনত্ব আনা হয়েছে মশারিতে। বাজারে নানা রকম মশারি পাওয়া যায়—ফোল্ডিং মশারি, ম্যাজিক বা বোনাফাইড প্যারাগন মশারি, কীটনাশকযুক্ত মশারি, প্রবেশপথযুক্ত জিপার মশারি ও চেরিবি এয়ারফ্লো মশারি। একেক মশারির একেক সুবিধা। তবে কীটনাশকযুক্ত মশারি সাধারণত বনাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় বেশি ব্যবহূত হয়।
জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ম্যাজিক মশারি
কোন মশারি কখন
মশারি মশা নিবারক হিসেবে কাজ করে ঠিকই, তবে পলিয়েস্টার বা মোটা সুতার বুননে তৈরি মশারি বায়ুপ্রবাহে খানিকটা বাধা প্রদান করে। বায়ু নিরোধক মশারি শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া আটকে নিদ্রায় আরামদায়ক উষ্ণতা দেয়। নিউ মার্কেটের আলম বেডিং স্টোরের কর্মী লুত্ফর রহমান বলেন, ‘গরমকালের জন্য রয়েছে জাদুকরী ম্যাজিক মশারি। এটি এক ঢিলে দুই পাখি মারে। মশা প্রতিরোধ তো করেই, সেই সঙ্গে বায়ুপ্রবাহও রাখে স্বাভাবিক। হালকা রঙের এই মশারি গরমে বেশি উপযোগী।’
ছোট সোনামণির মশারি
ছোটদের মশারি বিশেষ শৈলীতে গড়া। কয়েক ধরনের ফোল্ডিং মশারি রয়েছে তাদের জন্য। শিশুর বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয় এগুলোর আকার। এ ছাড়া নবজাতক শিশুদের জন্য রয়েছে বিছানাসহ মশারি।
যেখানে পাবেন মশারি
সারা দেশেই বেডিং স্টোরগুলোতে মশারি পাওয়া যায়। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, রাজধানী সুপার মার্কেট, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেট, মালিবাগের আনারকলি মার্কেট, মহাখালী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীর মার্কেটগুলোতেও মশারি কিনতে পাবেন। পুরান ঢাকার চকবাজার, বংশাল ও ইসলামপুরে মশারির পাইকারি মার্কেট। এ ছাড়া দারাজ, ইভ্যালি, রকমারি অথবা আজকের ডিলসহ বিভিন্ন অনলাইন শপে মশারি পাবেন।
দরদাম
মশারির নকশা, ধরন, মান, ফ্যাব্রিক, আকার ও ব্র্যান্ড ভেদে দামে পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ মশারির দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু। উন্নতমানের মশারি এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। ম্যাজিক মশারির দাম ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার আকৃতিভেদেও দামে ভিন্নতা রয়েছে। সিঙ্গল বেডের মশারির দাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে ডবল বেডের মশারির দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু। এ ছাড়া শিশুদের জন্য ফোল্ডিংসহ বিভিন্ন সুবিধাযুক্ত মশারি কিনতে পাবেন ২৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। মশারিযুক্ত বিছানা কেনা যাবে এক হাজার টাকার মধ্যেই।
বাংলার সুলতানি আমলের অপূর্ব নিদর্শন কষ্টিপাথরে নির্মিত মসজিদ কুসুম্বা। ১৫৫৮ সালে গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহর শাসনামলে তৈরি এই মসজিদ। এর রাজসিক সৌন্দর্য আজও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। কুসুম্বা মসজিদ ঘুরে এসে লিখেছেন ফাতিমা জাহান
শেয়ার
সামনে লতাপাতা ঝুলে আছে। মনে হচ্ছে, হাত দিয়ে সরালেই সামনে বিশাল এক গুলবাগিচা খুঁজে পাব। কষ্টিপাথরে খোদাই করা সারি সারি এই কুঞ্জবনকে কিছুতেই মসজিদের মিহরাব বলে মনে হচ্ছে না। খানিকটা ভাবনার রং মেশালে এখানে বিশাল এক খোদাই করা বাগ ও বাহারের অংশ বলে মনে হয়।
এই গুলবাগিচা যে মসজিদের অংশ তার নাম কুসুম্বা মসজিদ। ১৫৫৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এটির অবস্থান নওগাঁ জেলার কুসুম্বা গ্রামে। গ্রামের নামানুসারেই মসজিদটি পরিচিতি পায়।
কুসুম্বা নামটি শুনলে মনে হয় কুসুমে কুসুমে আচ্ছাদিত। এখানে আসলেই কুসুম আছে মসজিদের বাইরে আর ভেতরের দেয়ালের কারুকাজে, সজ্জায়। দূর থেকে দেখলে একটি ছোট আকারের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ বলে মনে হবে। সুলতানি আমলে নির্মিত মসজিদটির তিনটি গম্বুজের পেছনের দিকে রয়েছে আরো তিনটি গম্বুজ, যা সামনে থেকে দেখা যাচ্ছে না।
তবে উঠান পেরিয়ে মসজিদের যত কাছে গিয়েছি, ততই বিস্ময় বেড়েছে আমার। অজপাড়াগাঁয়ে এমন আশ্চর্য মসজিদের দেখা পাব, আগে ঠিক এতটা ভাবতে পারিনি।
বাংলার প্রাচীন মসজিদের স্থাপত্যকলা আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে। প্রতিটি মসজিদ আকারে আয়তাকার কুঁড়েঘরের মতো আর তার মাথায় শোভা পায় গম্বুজ। বাংলার প্রাচীন মসজিদের পাশে সাধারণত কোনো মিনার দেখা যায় না।
কুসুম্বা মসজিদ পুরোটা পাথরে তৈরি। প্রবেশ করার জন্য সামনে তিনটি দরজা রয়েছে। দরজা বেশ উঁচু, মিহরাব আকারের। অবশ্য একে দরজা না বলে প্রবেশপথ বা খিলান বলা যায়। আক্ষরিক অর্থে দরজা বলতে যা বোঝায়, তা এখানে অনুপস্থিত। খোদার ঘর তো এমনই হওয়া উচিত, যা খোলা থাকবে সব সময়। আশ্রয়ের প্রথম ও শেষ স্থান হবে এই মিহরাবসম খোলা দরজা।
প্রবেশপথের ওপরের দেয়ালে ফুল, লতাপাতা আঁকা। আর প্রতিটি প্রবেশপথের মাঝখানের দেয়ালের পাথরে জানালার নকশা খোদাই করা। সেই জানালায় শোভা পাচ্ছে গুলদস্তা। তার ওপর লতাপাতার নকশা। দোতলা সমান উঁচু মসজিদটি আসলে একতলা।
বাইরে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। দক্ষিণ দিকের দেয়ালে খোদাই করা কারুকাজ নজর কাড়ল। এদিকে আসরের আজানের পর রোদ হেলে পড়ল। তখন রোদের আঁচে দেয়ালকে মনে হলো সুরমার খনি, যেন ইচ্ছা করলে এই দেয়াল থেকে সুরমা নিয়ে চোখে মাখা যাবে। এ পাশের দেয়ালে কোনো প্রবেশপথ নেই। শুধু সামনের দিকেই আছে প্রবেশপথ। দক্ষিণের দেয়ালে রোদ পড়লে পাথরে খোদাই করা কারুকাজ আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেয়ালের মাঝখানে মিহরাব আকারের পাশাপাশি দুটি বন্ধ দরজা। আর এরই মাঝে পাথরে খোদাই করা হয়েছে ঝারোখা। মধ্যযুগে দেয়ালে ঝারোখা রাখা হতো আলো আর হাওয়া চলাচলের জন্য। আর এই দক্ষিণ দেয়ালের বাকি অংশের ওপর-নিচে খোদাই করা আছে ছয়টি গুলে গুলজার জানালা। আসলে এখানে কোনো জানালা নেই, দেয়ালকে রাজকীয় করে তুলতে শিল্পী জানালার অবয়ব খোদাই করেছেন।
বিভিন্ন দেশের মসজিদে গিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদের নকশা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশেও যে এমন অমূল্য রত্ন আছে জানতাম না। জানালায় খোদাই করা ফুলের গুচ্ছ যেন ওপর থেকে নিচে মালার মতো করে ঝুলে আছে। আর তার নিচে শোভা পাচ্ছে লতাপাতা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামে এমন রাজসিক মসজিদ, ভাবতেই অবাক হলাম।
কুসুম্বা মসজিদ পুরোটাই তৈরি কষ্টিপাথরে। ছবি : লেখক
মসজিদের ভেতরে আসরের নামাজ চলছিল বলে সামনের দিঘির পারে গিয়ে বসলাম। বিশাল এক দিঘি, পানি খুব স্বচ্ছ। পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে হংস মিথুন। মুসল্লিদের নামাজ শেষ হওয়ার পরও বাইরে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। হঠাত্ আমার গাড়ির চালক বললেন, ‘আপা, ভেতরে গিয়ে দেখে আসেন।’
দ্বিধায় ছিলাম। মসজিদে নারীদের প্রবেশের অনুমতি আছে কি নেই। চালক বলতেই আর সময় নষ্ট করিনি। সোজা ভেতরে চলে গেলাম। খুব বড় মসজিদ নয়। ভেতরের দিকে মুসলিম স্থাপত্যকলা অনুসরণ করে বেশ কয়েকটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। আর কিবলার দিকের পুরো অংশে কষ্টিপাথরে খোদাই করা অপরূপ লতাপাতা। দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। মসজিদের ভেতরের কারুকাজ এত সুন্দর হতে পারে! কষ্টিপাথর সাধারণত আমরা মন্দিরে শোভা পেতে দেখি। কিন্তু মসজিদে কষ্টিপাথরের কারুকাজ দেখে আমার বিস্ময় আর কাটছিল না। আর এ কোনো সাধারণ কারুকাজ নয়, অতি সূক্ষ্ম কাজ। ইমাম সাহেবের জন্য মিহরাব আর এর দুই পাশের দুটি মিহরাব সজ্জিত করা হয়েছে। মসজিদের বাকি দেয়ালে সাধারণ পাথরের ওপর খোদাই করা। ভেতরের মেঝে লাল কার্পেটে আচ্ছাদিত, যেন লাল জমিনে সুদৃশ্য দুষ্প্রাপ্য কালো গোলাপ ফুটেছে বাগিচায়। কষ্টিপাথরে খোদাই ভালোমতো দেখতে হলে দিন পার হয়ে যাবে। কোথাও গুলদস্তা, কোথাও ঝুলে থাকা ফুলের গুচ্ছ, কোথাও পেঁচিয়ে ওঠা গভীর কালো রঙের ফুলের হার। বাধা দেওয়ার কেউ নেই, তবু দ্বিধা নিয়ে ইমাম সাহেবের জায়নামাজের এক কোনায় গিয়ে এই রূপ দেখে বিমোহিত হই।
মসজিদের বাইরে একটি বোর্ডে লেখা, ‘মিহরাব আচ্ছাদিত আছে কালো পাথরে।’ আমার ধারণা, যাঁরা এটি লিখেছেন, তাঁরা জানেন না, কষ্টিপাথর ছাড়া অন্য পাথরের ওপর এত সূক্ষ্ম খোদাই করা যায় না।
মিহরাবের পাশে ছোট নিচু ঘর আর আছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। আমি তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলাম। এই জায়গাটাকে বলা হয় বাদশাহ কি তখত বা বাদশাহর আসন। উঁচুতে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার স্থান বলে ধারণা করা হয়। অনেকে বলে থাকেন, এখানে কাজী বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। শুধু বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হলে এই জায়গায় মিহরাব থাকার কথা নয়। এখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া হতো বলে আমার ধারণা। কারণ অকারণে মিহরাব নির্মাণের প্রচলন কোথাও নেই। একে আবার অনেকে জেনানাদের [নারীদের] নামাজের জায়গাও বলে থাকেন। আগেকার দিনে জেনানাদের ঘর থেকে বের হওয়ার নিয়ম ছিল না। বাইরে গিয়ে নামাজ পড়ার প্রশ্নই আসে না। হালে অল্প কিছু আধুনিক মসজিদে গিয়ে নারীরা নামাজ পড়তে পারছেন। তাই ধরে নিচ্ছি, এটি নামাজ পড়া ও খুতবা দেওয়ার স্থান।
আমার মন পড়ে আছে মিহরাবের কারুকাজে। আবার নিচে এসে দেখতে থাকলাম এই অসামান্য সৃষ্টি। একটি মিহরাবের সঙ্গে আরেকটি মিহরাবের কারুকাজের মিল নেই। এমনকি একই মিহরাবে এক ফুট দূরের নকশার সঙ্গেও মিল নেই। আজকাল এ ধরনের নকশা করা বন্ধ হয়েছে কেন কে জানে! কেন যে এ ধরনের কারুশিল্প কেউ নিজের করে নিচ্ছে না। এখনো কিছু মন্দিরের জন্য কষ্টিপাথরের ওপর খোদাই করা মূর্তি তৈরি করা হয়। তবে কষ্টিপাথরের ব্যবহার অন্য কোনো শিল্পকলায় সেভাবে দেখা যায় না। আমি তবু মুগ্ধ নয়নে দেখি, দেয়ালে লতাপাতা ছেয়ে আছে, কোথাও ফুলদানিতে ফুল হয়ে, কোথাও ঘণ্টার মতো ঝুলে থেকে, কোথাও বা পাশাপাশি ফুলবাগিচা হয়ে সূক্ষ্ম কারুকাজে সাজিয়ে রেখেছে মসজিদটিকে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যেকোনো বাসে চড়ে রাজশাহী-নওগাঁ হাইওয়ের কাছে কুসুম্বা মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৭০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। চাইলে নওগাঁ জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া বেশ কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। নওগাঁর দেলুয়াবাড়ী বাজারে বেশ কিছু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও রেস্তোরাঁয় সুলভ মূল্যে খাবার খেতে পারবেন।
বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নয়া ট্রেন্ড—গ্লোয়িং ওয়াটার। এক চিমটি হলুদ, পানি আর ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটে তৈরি হচ্ছে আলোর ম্যাজিক। তা দেখে অবাক অনেকেই। তবে শুধু আলো তৈরিতে নয়, আপনার ত্বকেও জাদুর মতো কাজ করতে পারে হলুদ। কিভাবে? জানিয়েছেন শোভন মেকওভারের রূপ বিশেষজ্ঞ শোভন সাহা। লিখেছেন আয়েশা সিদ্দিকা স্বর্ণা
শেয়ার
জয়া আহসানের মতো বাগানে হলুদ চাষ করতে পারেন আপনিও। রান্নার কাজে তো লাগবেই, রূপচর্চায়ও কাজে দেবে। ছবি : ইনস্টাগ্রাম
রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। বিয়ের আগে বর-কনের গায়ে হলুদ মাখার রেওয়াজ বহুদিনের। ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে হলুদ।
তবে ব্যবহারের আগে নিয়ম জানা জরুরি। কাঁচা হলুদ ত্বকে সরাসরি না লাগানোই ভালো।
হলুদে থাকে বিভিন্ন উপাদান, যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। লাবণ্য ফিরে পেতে এবং ব্রণ, র্যাশ, অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন ক্ষত ও পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে হলুদ।
এতে আছে অ্যান্টি-এজিং উপাদান, ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে পারে এটি।
গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেকেই কাঁচা হলুদ বেটে গায়ে মাখেন। তবে হলুদের সঙ্গে অন্য কিছু উপকরণ মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। দুধ, বেসন, মধু অথবা লেবু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক শুষ্ক হলে মধুর পরিবর্তে টক দই ব্যবহার করুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন গাজরের রস ও অলিভ অয়েল। কাঁচা হলুদের সঙ্গে চন্দন গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে নিলে ব্রণের সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।
হলুদের এত এত গুণ জেনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন, এখন থেকে রোজ ত্বকের যত্নে হলুদ ব্যবহার করবেন।
তবে প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে না, সপ্তাহে এক বা দুই দিন হলুদ ব্যবহার করা ভালো। রোজ হলুদের প্যাক দিয়ে ত্বকে স্ক্রাব করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ত্বকে তাড়াতাড়ি বলিরেখা সৃষ্টি হতে পারে। হলুদের প্যাক ব্যবহার করে তত্ক্ষণাত্ বাইরে বেরোবেন না। ত্বক জ্বলে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় রাতে হলুদের প্যাক ব্যবহার করা।
ত্বকে যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তবে হলুদ ব্যবহার করা যাবে না। অ্যালার্জি আরো বাড়তে পারে। শুরুতেই ত্বকে হলুদের প্যাক পুরোপুরি ব্যবহার করা উচিত নয়। সামান্য পরিমাণ হাতের ত্বকে লাগিয়ে দেখুন। কোনো সমস্যা হয় কি না পরখ করুন। পরে ধীরে ধীরে হলুদ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
হলুদের প্যাক বেশিক্ষণ ত্বকে লাগিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে ত্বকে গাঢ় হলুদ দাগ ফুটে উঠতে পারে। আবার র্যাশও দেখা দিতে পারে। ত্বকে সমানভাবে হলুদ ব্যবহার করুন। একই জায়গায় বেশি, অন্য জায়গায় কম, এটি যেন না হয়।
হলুদ লাগানোর পর অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা হলুদ বাটা, বেসন, চালের গুঁড়া ও টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখে ও গলায় লাগান এই প্যাক। শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে ঘষে তুলে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন এই প্যাক লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। কাঁচা হলুদ ও মসুর ডাল একত্রে বেটে নিয়ে সঙ্গে মুলতানি মাটি ও গোলাপজল সহযোগে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।