ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭
অন্য কোনোখানে

এখানে শুয়ে আছেন সিরাজ

আব্দুল খালেক ফারুক
আব্দুল খালেক ফারুক
শেয়ার
এখানে শুয়ে আছেন সিরাজ
এই ঘরের ভেতরেই আছে সিরাজের কবর

মুর্শিদাবাদ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহাসিক ভাগীরথী নদী। ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানেলের সাহায্যে গঙ্গার পানি ফেলা হচ্ছে সেই নদীতে। গীষ্মের তীব্র দহনেও জলসংকট নেই এই নদীতে। ভাগীরথীর পূর্ব পারের বড় নগরঘাট থেকে ট্রলারে চেপে আমাদের যাত্রা শুরু হলো খোশবাগের উদ্দেশে।

ভাগীরথীর বুক চিরে নৌকা চলছে ভাটির দিকে। ট্রলারে প্রায় ৩০ মিনিটের পথ। নদীর স্বচ্ছ জলে দুই তীরে স্নান করছে অনেক নর-নারী। ঘাটে নেমে একটি ভটভটিতে উঠে পড়লাম।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।

খোশবাগের প্রধান ফটকে একজন লোক শুয়ে আছেন মাদুর বিছিয়ে। পাশে দেখা মিলল একটি কুকুরের। ওটাও শুয়ে আছে।

বেঞ্চে বসে আছেন দুজন লোক। তাঁদের পাশের সাইনবোর্ডে লেখা ‘খোশবাগ’। নবাব আলীবর্দি খাঁর তৈরি করা এই ‘খোশবাগ’-এর অর্থ হচ্ছে ‘আনন্দের বাগান’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের সাইনবোর্ডেও মিললো সে কথারই সমর্থন। নবাব আলীবর্দি খাঁ দিল্লির জামা মসজিদের অনুকরণে ৭ দশমিক ৬৫ একর জমির ওপর খোশবাগ বা ‘গার্ডেন অব হ্যাপিনেস’ তৈরি করেন।
এটি মূলত ছিল গোলাপের বাগান। এখানে ১০৮ ধরনের গোলাপ পাওয়া যেত। বৈকালিক অবকাশ কাটানোর জন্য নবাব আলীবর্দি খাঁ এখানে আসতেন। কোনো শত্রু যেন আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য খোশবাগের শেষ প্রান্ত থেকে মূল ফটক পর্যন্ত দেখার ব্যবস্থা ছিল। চারপাশে রয়েছে উঁচু প্রাচীর। এই সমাধিক্ষেত্রের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে একটি কারুকার্যময় মসজিদ রয়েছে। এখানে নামাজ পড়তেন আলিবর্দি খাঁ। ১৬ বছর নবাবি করার পর অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী নাতি সিরাজ এখানে সমাহিত করেন আলীবর্দি খাঁকে। আর শেষ পর্যন্ত এটি তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে পরিণত হয়। তবে খোশবাগে সমাহিত ৩৪ জনের মধ্যে ৩২ জনকেই হত্যা করা হয়েছিল। ব্যতিক্রম আলিবর্দি খাঁ ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুত্ফুন্নেছা।

মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার পর নজরে আসে ছোট ছোট কুঠুরি। দরজা-জানালাবিহীন। ইট বাঁধানো পথ ধরে এগোতে থাকি। মূল ফটক থেকে একজন গাইড আমাদের সঙ্গী হয়েছেন। নাম তাঁর গোবর্ধন। সমাধিক্ষেত্রে ঢুকেই তাঁর বর্ণনা শুরু হয়েছে। তুমুল উত্তেজনা নিয়ে একের পর এক কবর পেরিয়ে যাচ্ছি। প্রথম কবরটি সিরাজের নানি, আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরিফুন্নেছা বেগমের। এর পরের কবরটি তাঁরই মেয়ে ঘসেটি বেগমের। পাশে সিরাজের মা আমিনা বেগমের কবর। পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁদের প্রথমে বন্দি করা হয়। পরে ঢাকার জিঞ্জিরার প্রাসাদে পাঠানো হয় নির্বাসনে। পরে খোশবাগে বাস করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুুই বোনকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসছিলেন মীর জাফরের বড় ছেলে মীরন। কিন্তু পথিমধ্যে তাঁদের হত্যা করে লাশ এনে দাফন করা হয় এই খোশবাগে। তার আগেই অবশ্য লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে সিরাজের স্ত্রী লুত্ফুন্নেছাকে মুর্শিদাবাদে এনে খোশবাগে রাখা হয়।

এই কবরটির কিছু দূরে সিরাজের সমাধিস্থলে ঢোকার আগেই বাম দিকে চোখে পড়ল দানশা ফকিরের কবর। খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছেন এই কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতক। এই দানশা ফকিরই এক হাজার এক স্বর্ণমুদ্রার লোভে রাজমহলঘাটে সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কথিত আছে, সেই পুরস্কার আনতে গিয়ে তাঁর করুণ পরিণতি হয়। তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন ক্লাইভ। বলেন, ‘সামান্য কটা টাকার লোভে তোমার নবাবকে ধরিয়ে দিয়েছ। এর চেয়ে বেশি টাকা পেলে তো আমার সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করবে। অতএব, তোমাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না।’ তাঁকে হত্যার পর তাঁর স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যা করা হয়।

এরপর সেই কাঙ্ক্ষিত কবরটির সামনে এসে দাঁড়াই। গাইড গোবর্ধন যখন নবাব সিরাজউদ্দৌলার নাম উচ্চারণ করেন, সঙ্গে সঙ্গেই কবরটির দিকে সবার দৃষ্টি চলে যায়। শিয়রের দিকে মার্বেল পাথরে খোদাই করা সিরাজের পুরো নাম ‘মির্জা আলী মোহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা’। তাঁর কবরের পূর্ব পাশে ছোট ভাই মির্জা মেহেদির কবর। মীরনের দোসররা তাঁকে তক্তাচাপা দিয়ে হত্যা করেছিল। আর পশ্চিমে সিরাজের প্রিয় নানা আলীবর্দী খানের সমাধি। সিরাজের কবরের পাশে দাঁড়ালেই যেকোনো বাঙালি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের পর আরো সৈন্য সংগ্রহের জন্য পাটনার দিকে যাওয়ার সময় রাজমহলে নদীর ঘাটে ধরা পড়েন সিরাজ। এরপর তাঁকে বন্দি করে রাখা হয় জাফরগঞ্জ প্রাসাদে। বন্দি অবস্থায় মীরজাফরের পুত্র মীরনের হুকুমে মোহাম্মদি বেগ প্রথমে তাঁকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে সিরাজের মৃতদেহটি টুকরো টুকরো করে বস্তাবন্দি করে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে পুরো মুর্শিদাবাদ শহর প্রদক্ষিণ করান মীরন। 

সিরাজের পায়ের কাছে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী লুত্ফুন্নেছার কবর। নিজের শেষ দিন পর্যন্ত এই সমাধিক্ষেত্রের দেখাশোনা করেছেন তিনি। আর তাঁর পাশেই রয়েছে সিরাজের একমাত্র মেয়ে উম্মে জোহরা। এই সমাধি সারির সর্বশেষে রয়েছে পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জং ও তাঁর পরিবারের কবরগুলো। সিরাজের সমাধিটি একটি ঘরের ভেতর। চৌকাকৃতির একটি সমতল ছাদের ঘর। সেটির বাইরে বের হতেই চোখে পড়ল সারি সারি কয়েকটি কবর। এরা ইতিহাসের মহা ট্র্যাজেডির অংশ হয়েছিলেন। সিরাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা, মুঙ্গের ও পাটনা থেকে তাঁর ১৭ জন আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষী এসেছিলেন তাঁর কবর জিয়ারত করতে। কিন্তু কুচক্রী মীরন তাঁদের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেন। পরে এখানে সেই মৃতদেহগুলো সমাহিত করা হয়। এত অঘটন আর বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত মীরনের পরিণতিও কিন্তু শুভ হয়নি। বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় তার।

এত সব ট্র্যাজেডি ইতিহাসের খানিকটা চাক্ষুষ সাক্ষী হতে পেরে আবেগ সংবরণ করা কঠিন হয়ে গেল। সেই মানুষগুলোর আত্মার শান্তি কামনা করে খোশবাগ থেকে বিদায় নিলাম।  ছবি : লেখক

 

কিভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ২০০ কিলোমিটার পথ। বাস ছাড়াও বেশ কয়েকটি ট্রেন রয়েছে। ট্রেন ভাড়া নন-এসি ২০০ রুপি আর এসি ৫০০-৮০০ রুপি। বহরমপুর স্টেশন থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ভাগীরথী নদী পারাপারের জন্য আছে ফেরি, নৌকা ও ট্রলার।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কখন কোথায় কী

শেয়ার
কখন কোথায় কী

সাঁতার শেখার কোর্স

সাঁতার শেখার সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। সুসজ্জিত সুইমিংপুলে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আগ্রহী যে কেউ সাঁতার শিখতে পারবে। এই কোর্সের অধীনে ২১ হাজার টাকায় রয়েছে ১৪টি সেশন। আগ্রহীদের জন্য রয়েছে তিন দিনের ফ্রি ট্রায়াল।

এ ছাড়া হোটেলটির হেলথ ক্লাবে শুরু হয়েছে অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি সার্ভিস। ঢাকা রিজেন্সির অতিথি, প্রিমিয়ার ক্লাব সদস্য এবং আগ্রহী সবার জন্যই উন্মুক্ত এই সার্ভিস। রয়েছে ফ্লেক্সিবল টাইম টেবিল ও সার্ভিস কাস্টমাইজ করার সুযোগ।

বিস্তারিত জানতে ফোন করুন এই নম্বরে ০১৭১৩৩৩২৫৪০।

 

কখন কোথায় কী

মূল্যছাড়

কে ক্রাফটে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়

ঋতু উপযোগী বিভিন্ন পোশাকের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিচ্ছে কে ক্রাফট। মেয়েদের কামিজ, শাড়ি, টপস, টিউনিক, কটি, পোলো, টপস, স্কার্ট, টি-শার্ট এবং ছেলেদের শার্ট, ফতুয়া, পোলো, টি-শার্ট, ডেনিম জিন্স ও পাঞ্জাবিতে পাওয়া যাবে মূল্যছাড়। সোনামণিদের পোশাকেও মিলবে অফার। আউটলেট থেকে তো বটেই, অনলাইন কেনাকাটায়ও মিলবে এই মূল্যছাড়।

কখন কোথায় কী

লা রিভে মিড সিজন সেল

লা রিভে চলছে মিড সিজন সেল ফেস্টিভাল ২০২৫। নারী, পুরুষ ও শিশুদের পোশাক কেনাকাটায় ব্র্যান্ডটিতে পাওয়া যাবে ফ্ল্যাট ৫০ শতাংশ মূল্যছাড়। সামার ক্যাজুয়াল, সামার উপযোগী পার্টি, অফিস টু পার্টি এবং কমফোর্ট ওয়্যারকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বছরের মিড সিজন সেল। এই অফারে নারীদের জন্য টিউনিক, কামিজ, শাড়ি, আবায়া, টপ, কটি, শ্রাগ, টি-শার্ট, পালাজ্জো, স্কার্ট, হারেম লেগিংস, ফরমাল প্যান্ট এবং পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পাওয়া যাবে। শিশু ও নবজাতকদের জন্যও সুলভ মূল্যে মিলবে পোশাক।

হোম ডেকর ও ফ্যাশন অনুষঙ্গেও রয়েছে একই ছাড়। স্টক থাকা পর্যন্ত ক্রেতারা এই ছাড় পাবেন। তবে চলতি বছরের কালেকশন বা নিউ অ্যারাইভাল পোশাকে এই ছাড় প্রযোজ্য নয়।

কখন কোথায় কী

সারায় মিলবে ৩০ শতাংশ ছাড়

প্রায় দুই লাখ পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে সারা। ১৫টি আউটলেট, ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ছাড়ে পণ্য কিনতে পারবেন ক্রেতারা। এই অফার চলাকালে অন্য সব অফার বন্ধ থাকবে। পুরুষদের শার্ট, পাঞ্জাবি, কটি, পোলো ও টি-শার্ট এবং মেয়েদের টু-পিস, থ্রি-পিস, শার্ট, ক্রপ টপ, মডেস্ট, নাইট ওয়্যার, শাড়ি, ওড়না, পার্টি ওয়্যার, সিঙ্গল পিস, টি-শার্ট এবং ছোটদের জন্য শার্ট, জাম্পসুট, টু-পিস, কাবলি, কাতুয়া, পাঞ্জাবি ও ফ্রক পাওয়া যাবে।

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জেলে নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে

    বর্ষা মৌসুমে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেখলে সমুদ্র বলে ভ্রম হয়। বিস্তীর্ণ জলরাশি, করচগাছ ও মেঘালয় পাহাড়বেষ্টিত হাওর মন কাড়বে যে কারো। জেলে নৌকায় বিশাল জলরাশির এই হাওর ঘুরে এসে লিখেছেন সোহেলী তাহমিনা
শেয়ার
জেলে নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে
বর্ষার পানিতে টইটম্বুর হাওর। ছবি : শেখ হাসান

সাঁতার জানি না বলে বেশ দোটানায় ভুগছিলাম। একজন ভ্রমণপ্রেমী বলেছিলেন, খুব সুন্দর জায়গা। শুধু বাথরুমের সমস্যা। কিন্তু ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, তখন বুঝতে পারিনি।

তার ওপর অফিস থেকে ছুটি পাচ্ছিলাম না। এই সবকিছু ছাপিয়ে ছিল অজানা জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার উপচে পড়া আনন্দ আর উত্তেজনা। আমাদের গন্তব্য সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত টাঙ্গুয়ার হাওর। তবে হাল আমলের হাউসবোটে নয়, আমরা যাব কয়েক বছর আগের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের একমাত্র বাহন জেলে নৌকায়।
শেষমেশ অফিস থেকে ছুটি মিলল। আমরাও বেরিয়ে পড়লাম হাওরের উদ্দেশে।

জেলে নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে
ছোট নৌকায় লেখক। ছবি : সংগৃহীত

দলের সদস্য ৭২ জন।

তাদের চারজনের সঙ্গে আগের এক ট্রিপে পরিচয় হয়েছিল আমার। পরিচিত সহযাত্রী পাওয়ায় বেশ সুবিধাই হলো। গল্প-আড্ডায় যাওয়া যাবে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় ফকিরাপুল থেকে বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়, কিন্তু বাস ছাড়ল রাত ১টার কিছু আগে। পরদিন সকাল ৮টায় সুনামগঞ্জ শহরের কাছে একটি সেতুর কাছে বাস থামল।
সেখান থেকে লেগুনায় তাহিরপুর যেতে হবে। রাস্তার অবস্থা যারপরনাই খারাপ। কিন্তু হাওরের অপরূপ দৃশ্য সেই কষ্ট লাঘব করে দিল। তাহিরপুর পৌঁছেই ৭২ জন পর্যটক একযোগে প্রাতঃক্রিয়া সারতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, তাতেই লেগে গেল অনেকটা সময়। কাঁচাবাজার ও হাওর থেকে সদ্য ধরে আনা তাজা মাছ জোগাড় করলেন আয়োজকরা। শরীর চাঙ্গা করতে এক পর্ব চা হয়ে গেল সবার। জোগাড়যন্ত্র সেরে তিনটি বজরার মতো বড় জেলে নৌকায় শুরু হলো হাওর যাত্রা। কিছুদূর গিয়ে একটি বাড়ির ধারে নৌকা ভিড়িয়ে সেরে নিলাম সকালের নাশতা—ডিম, খিচুড়ি আর আলু ভর্তা। পরের গন্তব্য টেকেরঘাট। সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত নৌকার ছোট্ট ওয়াশরুমটিই একমাত্র ভরসা। সে জন্য খাবারের ব্যাপারেও সবাই বেশ সাবধান ছিলাম। নৌকার ওয়াশরুম বেশ ছোট, আড়াই ফুট চওড়া। তিন কি চার ফুটের মতো পাঁচটি তক্তা দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট ঘর। নদী থেকে পানি তুলে ব্যবহার করতে হয়। নৌকার নিচতলায় নামলে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়। ওয়াশরুমের উচ্চতাও একই। এসব সীমাবদ্ধতা বাদ দিলে হাওরের সৌন্দর্য মন কেড়ে নেবে সবার। এখানে আকাশ ও পানির মিলনের মধ্যে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। মাঝে মাঝে পানি এত স্বচ্ছ যে ২০ ফুট গভীরের জলজ উদ্ভিদ পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে ছোট ছোট লাল শাপলা। এক জায়গায় যাত্রাবিরতি দিলেন মাঝি। দলের অনেকেই নেমে পড়ল স্বচ্ছ পানিতে। স্থানীয় ছোট ছেলেরা ঘণ্টা হিসাবে ডিঙি নৌকা ভাড়া দেয়। এর একটিতে উঠে পড়লাম। পরের গন্তব্য হাওরের সুপরিচিত স্পট ওয়াচ টাওয়ার। পাঁচতলা উচ্চতার এই টাওয়ার থেকে পুরো হাওর দেখা যায়। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রায় ৪৬টি গ্রামের ৪০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান এই হাওর থেকেই হয়ে থাকে। দেশের মত্স্যশিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই হাওর। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ফেরার পথে টাটকা মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। ঘণ্টাখানেক পর পৌঁছলাম টেকেরঘাট।

জেলে নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে

পাহাড়ের কোলে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ছোট্ট গ্রামটি প্রথমে ভালোভাবে দেখতে পারিনি। পৌঁছতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। রাতে টেকেরঘাট বাজারে চা, ঝালমুড়ি খেয়ে নৌকায় ফিরে এলাম। একটু পর বসল গানের আসর। আসর শেষে মুরগির ঝোল ও সবজি দিয়ে রাতের খাবার শেষে আকাশে ফানুস ওড়ালাম। রাতে নৌকার ওপর চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল অনেকেই। কেউ কেউ চলে গেল ছইয়ের নিচে ঘুমাতে। সদস্য অনেক, তাই থাকার জন্য কটেজ এবং স্থানীয় লোকজনের বসতবাড়িতে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেও চলে গেল অনেকে। আমি শুয়ে পড়লাম নৌকার পাটাতনে। সকালে টেকেরঘাট দেখে প্রেমে পড়ে গেলাম, যেন ছোটবেলায় পড়া কোনো গল্পের বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে তুলে আনা গ্রাম। এত সুন্দর! একটু দূরে নীলাদ্রি লেক। বাংলার কাশ্মীর নামে পরিচিত স্থানটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে অল্প সময়ের জন্য ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করলাম। নৌকায় ফিরে বৃষ্টিতে ছাতার নিচে বসে খিচুড়ি-ডিম দিয়ে সকালের নাশতা সারলাম। সকাল ১১টায় নৌকা বয়ে চলতে থাকল জাদুকাটা নদীর ওপর দিয়ে। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে সৃষ্ট নদীটির কাচবালি দেশের খনিজ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই নদীর পারেই প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু বারিক্কা টিলা। এখান থেকে নদীর অপরূপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। দুপুরে জাদুকাটা নদীর পানিতে দাপাদাপি করে হাঁসের মাংস দিয়ে খাবার সেরে ফিরতি যাত্রা শুরু। পথেই রাত নেমে এলো। পূর্ণিমা রাত। পূর্ণ চাঁদের আলোর নিচে মনোমুগ্ধকর এক হাওর দেখার সৌভাগ্য হলো।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে সুনামগঞ্জ। এরপর লেগুনায় যেতে হবে তাহিরপুর বাজার। বাজারের কাছেই ঘাটে বেড়ানো নৌকা পাবেন। দরদাম করে উঠে পড়বেন। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়া, হাওরে থাকা, খাওয়া এবং ফিরে আসতে প্যাকেজে জনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ পড়বে।

 

 

 

 

 

মন্তব্য

আচার ভালো রাখার উপায়

    আচার মূলত মসলা আর লবণের কারসাজি। আম, জলপাই, তেঁতুল, বরই বা চালতা—যে ফলই হোক, মসলায় মিশে তা হয়ে ওঠে টক-ঝাল-মিষ্টি আচার, বাঙালির পাতে যার কদর বেশ। সংরক্ষণ করে সারা বছর এটি খাওয়া যায়। তবে কায়দা-কানুন না জানলে নষ্ট হয়ে যায় স্বাদের সেই আচার। আচার সংরক্ষণের পদ্ধতি জানাচ্ছেন তুলি রহমান
শেয়ার
আচার ভালো রাখার উপায়

আচার খেতে ভালোবাসেন না এমন বাঙালি খুব কমই পাওয়া যাবে। একবার আচার তৈরি করে রাখলে দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া যায়। তবে তৈরি করতে হবে ঠিকঠাক পদ্ধতিতে। তৈরি করেই নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই।

একটু অসাবধানতায় তার স্বাদ, গন্ধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে দুর্গন্ধ ও ছত্রাক।

রোদে আচার তাজা

আচার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদ অত্যন্ত জরুরি। তৈরির পর প্রথম এক সপ্তাহ প্রতিদিন আচারের বয়াম কিছুক্ষণ রোদে রাখতে হবে। এমনকি সারা বছর ধরেই মাঝেমধ্যে আচারের পাত্রটিকে কিছু সময় রোদে দিতে হবে—গ্রামের বাড়িতে উঠানে, শহরে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায়।

এতে আচার ভালো থাকে। রোদে রাখার জায়গাটি যেন ধুলাবালিমুক্ত ও নিরাপদ হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

তেল-মসলার সঠিক ব্যবহার

আচার তৈরির সময় ব্যবহূত মসলাগুলোও সংরক্ষণের উপযোগী হতে হবে। শুকনা খোলায় মসলা হালকা ভেজে নিলে সেগুলো বেশিদিন ভালো থাকে।

কাঁচা মসলা দ্রুত পচে যায়। তাই সেই ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। আচারে ব্যবহূত তেল (বিশেষ করে সরিষার তেল) আগে থেকে গরম করে ঠাণ্ডা করে নেওয়া উচিত। আচার ভালো রাখতে বেশি করে তেল ব্যবহার করুন। ওপরের তেলের আস্তরণ আচারে বাতাস ঢুকতে বাধা দেয়।
ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারে না। আচার বয়ামে রাখার পর তেল কমে গেলে ফের তেল গরম করে আচারে মিশিয়ে দিতে পারেন।

সঠিক পাত্র নির্বাচন

আচার সংরক্ষণের জন্য সঠিক পাত্র নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত কাচের পাত্র বা সিরামিকের পাত্রে আচার সংরক্ষণ করা হয়। কারণ এগুলোতে আচার দীর্ঘ সময় ভালো থাকে এবং এর স্বাদ থাকে অক্ষুণ্ন। তবে ব্যবহার করার আগে তা ভালোভাবে ধুয়ে, কড়া রোদে শুকিয়ে নেওয়া দরকার, যেন এক ফোঁটাও পানি না থাকে। জলীয় অংশ আচারের শত্রু। একবার পানির স্পর্শ লাগলে দ্রুতই সাধের আচার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাচের পাত্রে আচার সংরক্ষণ করলে এর ভেতরের অংশ দেখা যায়। ফলে আচার নষ্ট হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলে তা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। প্লাস্টিকের পাত্র বা ধাতব পাত্র এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ প্লাস্টিকের পাত্রে কেমিক্যাল লিক হতে পারে এবং ধাতব পাত্র আচারকে অক্সিডাইজ করে দিতে পারে। এতে আচার নষ্ট হয়ে যাবে এবং স্বাদও বদলে যাবে।

সংরক্ষণের স্থান

আচার সংরক্ষণের স্থান নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। ঠাণ্ডা, শুষ্ক এবং আলো-বাতাস চলাচল করে না এমন জায়গা আচারের জন্য সবচেয়ে ভালো। যেমন—রান্নাঘরের কেবিনেট বা আলমারির ওপরে। সরাসরি সূর্যের আলো আচারকে নষ্ট করতে পারে এবং এর প্রিজারভেটিভ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। স্বল্প সময়ের জন্য বানানো আচার ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ফ্রিজের তাপমাত্রা আচারকে ঠাণ্ডা রাখে এবং এটি ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। আচার খারাপ হতে শুরু করলে সাধারণত ওপরের দিকে ছত্রাক দেখা যায়। যদি সেটি কেবল ওপরের অংশে থাকে এবং আচারের গভীরে না যায়, তবে ওই অংশটুকু সরিয়ে ফেলা যায়। তবে গন্ধে তীব্র পরিবর্তন এলে কিংবা আচারের ভেতরের অংশেও ছত্রাক ছড়িয়ে পড়লে পুরোটা ফেলে দিতে হবে।

 

 

 

মন্তব্য

ভেজা জুতার যত্ন

    বৃষ্টিতে বাইরে গেলে জুতা ভিজবেই। ভেজা জুতা বেশিক্ষণ পরে থাকা উচিত নয়। যত্ন না নিলে সহজেই জুতা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। বর্ষায় জুতার যত্ন নিয়ে লিখেছেন আহমেদ ইমরান
শেয়ার
ভেজা জুতার যত্ন

বৃষ্টির দিনেও বাইরে যেতে হয় অনেকের। এ সময় পা ঢাকা জুতা বেছে নিতে পারেন। চেষ্টা করুন ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত জুতা পরার। এতে পা ভিজলেও দ্রুত শুকিয়ে যায়।

প্লাস্টিক বা রাবারের জুতা পরুন। এগুলো ভিজে গেলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। বাজারে দুই ফিতা, সামনে ঢাকা এ রকম নানা নকশা ও ম্যাটেরিয়ালে তৈরি বর্ষা উপযোগী জুতা পাবেন। যেমন জুতাই পরুন না কেন, ভিজে গেলে সেটির যত্ন নেওয়া আবশ্যক।

ভেজা জুতার যত্ন

ভেজা জুতা রোদে শুকাতে দেবেন না। এতে চামড়া শক্ত হয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে।

   চামড়ার জুতায় কাদা লাগলে প্রথমে ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে পরে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

  শুকিয়ে গেলে ভেজা টিস্যু দিয়ে কাদা মুছে নিন।

  চামড়ার জুতা ভিজে গেলে সরাসরি রোদে না শুকিয়ে বাতাস অথবা জুতার ভেতর পুরনো পত্রিকা ভরে রেখে ধীরে ধীরে শুকাতে দিন।

  ভেজা জুতা নরম কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে তারপর শুকিয়ে পলিশ করুন।

  লেদার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চামড়া থাকবে নরম, জুতা থাকবে দীর্ঘস্থায়ী।

   অফিসে যাওয়ার পথে জুতায় কাদা লাগলে অফিসে পৌঁছে ভেজা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে এরপর শুকনা টিস্যু দিয়ে মুছে নিন।

যা করবেন না

  চামড়ার জুতা পরে বৃষ্টিতে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।

  ভেজা জুতা তুলে রাখবেন না।

১০  জুতায় কাদা লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘষবেন না। এতে জুতায় দাগ বসে যাবে।

১১   বৃষ্টির সময় পেনসিল বা বড় হিলের জুতা ব্যবহার না করাই ভালো। এতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।

১২  জুতা পরিষ্কারের জন্য সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়।

টিপস

  বৃষ্টির দিনে জুতায় ওয়াটারপ্রুফ স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এতে জুতায় পানি লাগলেও সহজে ভিজবে না।

    গাড়িতে অতিরিক্ত এক জোড়া জুতা সঙ্গে রাখতে পারেন। অফিস বা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে ভেজা জুতা জোড়া খুলে অতিরিক্ত স্যান্ডেল বা স্লিপার পরে নিন।

  বৃষ্টির সময় বাইরে বের হলে জুতার ওপর রেইন শু কাভার পরে নিন। জুতায় পানি ও কাদা লাগবে না।

  রাস্তায় জমে থাকা ময়লা, পানি ও কাদা থেকে বাঁচতে উঁচু সোলের জুতা বা স্যান্ডেল পরুন।

  যাঁদের বৃষ্টির দিনে বেশি সময় বাইরে থাকতে হয়, তাঁদের পায়ের চারপাশ ঢেকে রাখে এমন জুতা ব্যবহার করা ভালো।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ