ঢাকা, সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১১ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১১ মহররম ১৪৪৭
সহজিয়া। একাদশ-দ্বাদশ : পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র

মৌলিক বল

  • বিশ্বজিৎ দাস, সহকারী অধ্যাপক, দিনাজপুর সরকারি কলেজ
notdefined
notdefined
শেয়ার
মৌলিক বল

প্রকৃতিতে আমরা বিভিন্ন বলের পরিচয় পাই। এদের মধ্যে সব বলই কিন্তু মৌলিক বল নয়। যে সকল বল মূল বা স্বাধীন অর্থাৎ যে সকল বল অন্য কোনো বল থেকে উৎপন্ন হয় না; বরং অন্যান্য বল এ সকল বলের কোনো না কোনো রূপের প্রকাশ তাদের মৌলিক বল বলে। প্রকৃতিতে মৌলিক বল চার প্রকার।

যথা : (১) মহাকর্ষ বল (২) তড়িৎ চৌম্বক বল বা তড়িৎ চুম্বকীয় বল (৩) সবল নিউক্লিয় বল ও (৪) দুর্বল নিউক্লিয় বল।

 

মহাকর্ষ বল

মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। এ আকর্ষণ বলই হলো মহাকর্ষ বল। এর পাল্লা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।

আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতেও মহাকর্ষ বলের অস্তিত্ব আছে। মহাকর্ষ বল অত্যন্ত দুর্বল বল। গ্রাভিটন নামে কণার পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য দুই বস্তুর মধ্যে এই বল কার্যকর হয়। মহাকর্ষ বল মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না।
মহাকর্ষ বলের মান ক্রিয়াশীল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বলের দিক বস্তুদ্বয়ের সংযোজক সরলরেখা বরাবর। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুঞ্জ গঠনে মহাকর্ষ বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহাকর্ষ বল নক্ষত্রগুলোকে একত্র করে গ্যালাক্সি গঠন করে।

 

তড়িৎ চুম্বকীয় বল

দুটি চার্জিত কণিকার মধ্যে কার্যরত বলই তড়িৎ চুম্বকীয় বল। এ বল আকর্ষণী বা বিকর্ষণী প্রকৃতির হতে পারে।

এটাও দুর্বল বল এবং এর পাল্লা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। কার্যকারিতা পরিমাপে তাড়িতচৌম্বক বল দুর্বল হলেও, মহাকর্ষ বলের তুলনায় এটা অনেক সবল। প্রকৃতির অধিকাংশ বলই তাড়িতচৌম্বক বলের গোত্রভুক্ত। ঘর্ষণ বল, কুলম্বের তড়িৎ বল, কুলম্বের চৌম্বক বল, স্থিতিস্থাপক বল বা স্প্রিং বল, পরমাণুতে কার্যরত নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যকার পারমাণবিক বল ইত্যাদি তাড়িতচৌম্বক বল। ভরহীন ও চার্জহীন ফোটন নামে কণার পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য এই বল কার্যকর হয়। এই বল বস্তুর আণবিক গঠন ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য দায়ী থাকে। ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের সাথে আবদ্ধ করে পরমাণু গঠন করে তাড়িতচৌম্বক বল। তাই বলা যায়, অণু-পরমাণুর গঠন, রাসায়নিক বিক্রিয়া, পদার্থের তাপীয় ও অন্যান্য ধর্ম তড়িৎ চৌম্বক বলের ফল।

 

সবল নিউক্লিয় বল

যে বল নিউক্লিয়াসের সীমানার মধ্যে নিউক্লিয়নসমূহকে (যেমন—প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি) দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে স্থায়ী নিউক্লিয়াস গঠন করে, তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। এটি স্বল্প পাল্লার বল। নিউক্লিয়াসের সীমানার বাইরে এই বলের কোনো প্রভাব নেই। সবগুলো মৌলিক বলের মধ্যে এই বল অধিক সবল। মেসন বা গ্লুঅন নামে কণার পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য এই বল কার্যকর হয়। এর পাল্লা 10-15 m যা নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের সমান। দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বল দ্রুত হ্রাস পায়। এই বল চার্জ নিরপেক্ষ। সবল নিউক্লিয় বল প্রোটন ও নিউট্রনকে একত্রে আবদ্ধ করে নিউক্লিয়াস গঠন করে। এই বল সমভাবে প্রোটন-প্রোটন, নিউট্রন-নিউট্রন এবং প্রোটন-নিউট্রনের মধ্যে কার্যকর। উল্লেখ্য, ইলেকট্রনের মধ্যে কোনো সবল নিউক্লিয় বল নেই।

 

দুর্বল নিউক্লিয় বল

নিউক্লিয়াসের সীমানার মধ্যে স্বল্প পাল্লার যে বল মৌলিক কণাসমূহের মধ্যে কাজ করে তাকে দুর্বল নিউক্লিয় বল বলে। দুর্বল নিউক্লিয় বলই অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াসের কারণ। এই বলের জন্যই নিউক্লিয়াস তেজস্ক্রিয় হয় এবং নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটে। অধিকাংশ তেজস্ক্রিয় ভাঙন বিক্রিয়া এই বলের কারণে ঘটে। যেমন— b ক্ষয়। এর পাল্লা 10-16 m। বোসন নামে কণার পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য এই বল কার্যকর হয়। এ বলের ক্ষেত্রে বাহক কণাগুলো হচ্ছে W ও Z বোসন [W+, W-, Z0 বোসন] যা গেজ বোসন নামেও পরিচিত। b কণা এবং নিউট্রিনো কণার নির্গমন দুর্বল নিউক্লিয় বলের কারণে ঘটে। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত শক্তি ‘b’ কণার গতিশক্তির চেয়ে বেশি। কাজেই অবশিষ্ট শক্তি নিয়ে b কণার সঙ্গে নিউক্লিয়াস থেকে যে অচার্জিত কণা নির্গত হয় তাকে বলা হয় নিউট্রিনো।

 

বলের একীভূতকরণ বা একীভবন ক্ষেত্র তত্ত্ব

ওপরের চারটি মৌলিক বলের একক সত্তার জন্য বিজ্ঞানীরা যে তত্ত্বের কথা বলেছেন, তা একীভবন ক্ষেত্র তত্ত্ব নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ চারটি মৌলিক বলের একক সত্তা আছে। তবে এমন তত্ত্ব এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।  তিন বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম, ওয়াইনবার্গ ও গ্লাসো দীর্ঘদিন গবেষণা করে দুর্বল নিউক্লিয় বল এবং তড়িৎ চৌম্বক বলদ্বয়কে একই বলের দুটি ভিন্নরূপ বলে প্রমাণ করেছেন। গবেষণার ফল একীভবন ক্ষেত্র তত্ত্বকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা মনে করতে পারি। গ্লাসো-সালাম-ওয়াইনবার্গের তত্ত্বের অনুরূপ কোনো তত্ত্ব হয়তো আবিষ্কৃত হবে, যা সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বলের সাথে তড়িৎ চুম্বকীয় বল ও মহাকর্ষ বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করবে।

চারটি মৌলিক বলকে একই তত্ত্বের মাধ্যমে প্রকাশ করাকে বলা হয় বলের একীভবন ক্ষেত্র তত্ত্ব। দুর্বল নিউক্লিয় বল এবং তাড়িতচৌম্বক বলের একীভবন থেকে উদ্ভূত বলকে বলা হয় তাড়িত দুর্বল বল বা গ্লাসো-সালাম-ওয়াইনবার্গ বল।

 

মৌলিক বলসমূহের আপেক্ষিক সবলতা বা তীব্রতা

(ক) সবল নিউক্লিয় বলের সাপেক্ষে : সবল নিউক্লিয় বলের তীব্রতা এক (1) ধরলে অন্যান্য বলের আপেক্ষিক তীব্রতা (সবলতা)নিম্নরূপ—

সবল নিউক্লিয় বল : 1, দুর্বল নিউক্লিয় বল: 10-11 তাড়িতচৌম্বক বল : 10-2, মহাকর্ষ বল : 10-41

(খ) মহাকর্ষ বলের সাপেক্ষে : মহাকর্ষ বলের তীব্রতা এক (1) ধরলে অন্যান্য বলের আপেক্ষিক তীব্রতা (সবলতা) নিম্নরূপ—

মহাকর্ষ বল : 1, দুর্বল নিউক্লিয় বল : 1030, তাড়িতচৌম্বক বল : 1039, সবল নিউক্লিয় বল : 1041

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ