ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭
নবম-দশম : পদার্থবিজ্ঞান

দ্বিতীয় অধ্যায় : স্থিতি এবং গতি

  • সময়ের সঙ্গে কোনো কিছুর অবস্থানের যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে সেটি স্থির, আর অবস্থানের পরিবর্তন হলে তা গতিশীল। আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় আমরা নানাভাবে ‘অবস্থান’ শব্দটি ব্যবহার করলেও পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় অবস্থান শব্দটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
দ্বিতীয় অধ্যায় : স্থিতি এবং গতি
মডেল : ছোঁয়া ছবি : মোহাম্মদ আসাদ

মো. মিকাইল ইসলাম নিয়ন

সহকারী শিক্ষক (ভৌত বিজ্ঞান), ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা

যেমন তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার স্কুলের অবস্থান কোথায় এবং তুমি যদি উত্তর দাও ‘খিলগাঁওয়ে’, তাহলে উত্তরটি সঠিক হলেও স্কুলের অবস্থানটি কিন্তু জানা গেল না। তুমি যদি উত্তর দাও, তোমার স্কুলটি তোমার বাসার গেট থেকে এক কিলোমিটার দূরে, তাহলেও কিন্তু স্কুলের অবস্থান জানা গেল না। তোমার বাসার গেটটি কোথায় সেটি আমাদের জানা থাকলেও আমরা বলতে পারব না স্কুলটি সেখান থেকে ঠিক কোনদিকে এক কিলোমিটার দূরে; কিন্তু তুমি যদি বলো স্কুলটি তোমার বাসার গেট থেকে পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার দূরে, তাহলেই শুধু আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তোমার স্কুলের অবস্থানটি জানতে পারব। অর্থাৎ স্কুলের অবস্থান জানার জন্য দূরত্ব ও দিক দুটিই সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হয়।

শুধু তাই নয়, সেই দূরত্ব ও দিকটি নির্দেশ করতে হয় একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা প্রসঙ্গ বিন্দুর অবস্থান থেকে। তোমার স্কুলের বেলায় প্রসঙ্গ বিন্দু (origin) ছিল তোমার বাসার গেট। সেটি তোমার বাসার গেট না হয়ে একটা বাসস্টপ কিংবা একটা শপিং মল হতে পারত। তাহলে অবশ্যই দূরত্ব ও দিকটির ভিন্ন মান হতো; কিন্তু অবস্থানটি অবশ্যই এই নতুন প্রসঙ্গ বিন্দুর সাপেক্ষে বলে দিতে পারতাম।
কোনো কিছুর অবস্থান বলতে হলে সেটি বলতে হয় কোনো একটি প্রসঙ্গ বিন্দু সাপেক্ষে। এই প্রসঙ্গ বিন্দুটি চূড়ান্ত কোনো বিষয় নয়, আমরা আমাদের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো বিন্দুকে প্রসঙ্গ বিন্দু বা মূল বিন্দু হিসেবে ধরতে পারি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অবস্থান নির্দিষ্ট করার জন্য আমাদের যে প্রসঙ্গ বিন্দু বা মূল বিন্দু ধরে নিতে হয়, সেই বিন্দুটি কি স্থির একটি বিন্দু হওয়া প্রয়োজন? ধরা যাক, তোমার সামনে আরেকজন চেয়ারে স্থির হয়ে বসে আছে। তোমার চেয়ারটাকে যদি প্রসঙ্গ বা মূল বিন্দু ধরে নিই, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে তোমার বন্ধুর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

কিন্তু যদি এমন হয় তোমরা আসলে চলন্ত একটি ট্রেনে বসে আছ, তাহলে কী হবে? ট্রেনের বাইরে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ বলবে, তুমি কিংবা তোমার বন্ধু দুজনেই গতিশীল, কেউ স্থির নয়! তাহলে কার কথা সত্যি? তোমার, নাকি স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির? আসলে তোমার কিংবা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির—দুজনের কথাই সত্যি! তার কারণ মূল বিন্দু বা প্রসঙ্গ বিন্দু যদি সমবেগে চলতে থাকে তাহলে আমরা কখনই জোর দিয়ে বলতে পারব না যে প্রসঙ্গ বিন্দুটি কি সমবেগে চলছে, নাকি এটা আসলে স্থির এবং অন্য সব কিছু উল্টো দিকে সমবেগে চলছে! কাজেই আমরা বলতে পারি, যদি কোনো একটি মূল বিন্দুর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হয়, তাহলে সেই বস্তুটি ওই বিন্দুর সাপেক্ষে গতিশীল। মূল বিন্দুটি কি আসলে স্থির, নাকি সমবেগে চলছে—সেটি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাব না। সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার কারণ সব গতিই আপেক্ষিক।

 

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

চলন্ত ট্রেনের কামরায় দুই বন্ধু রিপন ও আয়ান মুখোমুখি বসে আছে। মিনা কোথাও যাওয়ার জন্য স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে।

সে দেখল, তার বন্ধু জনি রিকশায় তাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। জনির রিকশাটি স্থির অবস্থান থেকে 2ms-2 সুষম ত্বরণে চলে ঃ সময় পর ং দূরত্ব অতিক্রম করে।

 

ক) স্থিতি কাকে বলে?

খ) পরম স্থিতি ও পরম গতি পাওয়া সম্ভব নয় কেন?

গ) যাত্রা শুরুর ২৫ সেকেন্ড পর রিকশাটি কত দূরত্ব অতিক্রম করবে?

ঘ) আয়ান ও মিনার সাপেক্ষে রিপনের অবস্থা যুক্তি সহকারে বিশ্লেষণ করো।

 

উত্তর : ক) সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে, তখন তাকে স্থিতি বলে।

 

উত্তর : খ) আমরা সাধারণত কোনো প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে অন্য বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলে থাকি। কিন্তু এ মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রসঙ্গ বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। কারণ, পৃথিবী প্রতিনিয়ত সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সূর্যও তার গ্রহ, উপগ্রহ নিয়ে ছায়াপথের চারদিকে ঘুরছে। কাজেই আমরা যখন কোনো বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি, তা কোনো আপাত বস্তুর সাপেক্ষে বলে থাকি। এ জন্যই পরম স্থিতি ও পরম গতি পাওয়া সম্ভব নয়।

উত্তর : গ) উদ্দীপক থেকে, ত্বরণ, a = 2ms-2

আদিবেগ, u = 0

সময়, t = 25s

অতিক্রান্ত দূরত্ব, s = ?

আমরা জানি,

S = ut + 1/2 at2

= 0x25 + 1/2x2x(25)2

= 625m

সুতরাং, যাত্রা শুরুর 25s পর রিকশাটি 625m দূরত্ব অতিক্রম করবে।

 

উত্তর : ঘ) রিপন আপেক্ষিকভাবে আয়ানের সাপেক্ষে স্থির এবং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মিনার সাপেক্ষে গতিশীল। উদ্দীপক থেকে আমরা পাই, আয়ান ও রিপন ট্রেনের কামরায় মুখোমুখি বসেছিলেন। তাই ট্রেনটি স্থির অবস্থায় থাকুক বা গতিশীল অবস্থায় থাকুক না কেন, তাঁদের দুজনের মধ্যবর্তী দূরত্বের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। অর্থাৎ রিপনের সাপেক্ষে আয়ানের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না; কিন্তু রিপনের সাপেক্ষে মিনার মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিবর্তন হয়। তাই মিনার সাপেক্ষে রিপন গতিশীল। আমরা জানি যে কোনো বস্তু প্রকৃতপক্ষে স্থির বা গতিশীল কি না তা নির্ভর করে প্রসঙ্গ বস্তুর ওপর। প্রসঙ্গ বস্তু যদি প্রকৃতপক্ষে স্থির হয় তাহলে তার সাপেক্ষে যে বস্তু স্থিতিশীল রয়েছে সেটিও প্রকৃতপক্ষে স্থির। এ ধরনের স্থিতিকে আমরা পরম স্থিতি বলি অর্থাৎ প্রসঙ্গ বস্তুটি যদি পরম স্থিতিতে থাকে তাহলে কোনো বস্তু তার সাপেক্ষে স্থির থাকলে সে বস্তুকে পরম স্থিতিশীল বলা হয়। সে রূপ পরম স্থিতিশীল প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতিকে আমরা পরম গতি বলি। কিন্তু এ মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রসঙ্গ বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। কাজেই আমরা যখন কোনো বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি তা আমরা কোনো আপাত স্থিতিশীল বস্তু যেমন—রিপন ও মিনার সাপেক্ষে বলে থাকি। আসলে এ মহাবিশ্বের সব স্থিতিই আপেক্ষিক, সব গতিই আপেক্ষিক। কোনো স্থিতি বা গতিই পরম নয়। তাই রিপনও আপেক্ষিকভাবে স্থির এবং পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বলে তিনিও প্রকৃতপক্ষে গতিশীল।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ