<p>বিদায়ি ২০২৪ সালের শুরুতেই একতরফা জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও বছরের মাঝপথেই শুরু হয় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়। সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে প্রশাসনে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়। এতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় শত শত কর্মকর্তার স্বপ্ন। দুই দিন পরেই সচিব হবেন, পদোন্নতি পাবেন—এমন অনেকের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। বরং যিনি রাতে সচিব ছিলেন, পরদিন সকালেই ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা)।</p> <p>রাজনৈতিক ‘তকমা’ দিয়ে যাঁদের দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল, তাঁদের ভাগ্য খুলে যায় প্রশাসনের এই সুনামিতে। তাঁদের অনেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পান। কেউ কেউ অবসরের ঘুম থেকে হঠাৎ জেগেই বসে যান একেবারে প্রশাসনের শীর্ষ পদে। ফ্যাসিস্টদের নিয়োগ করা কয়েক শ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল করা হয়, সেখানে বঞ্চনা নিয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের একইভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও (ইউএনও) বদলি করা হয়। ডিসি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রশাসনের সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়।</p> <p>এসব ঘটনার মধ্যেই গঠন করা হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সেখানেও শুরু হয় প্রশাসনিক সুনামি। প্রধান করা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিশনের খসড়া প্রস্তাব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলে প্রচণ্ড ক্যাডার বিস্ফোরণ দেখা দেয়। প্রস্তাবে বলা হয়, উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্য ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার সুপারিশ করা হবে। এমন প্রস্তাবে তেতে ওঠে নিজ নিজ ক্যাডার সার্ভিসগুলোর সংগঠনগুলো। প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও কর্মরতরা মিলে প্রতিবাদসভা করে কমিশনপ্রধানকে পদত্যাগ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কলমবিরতি ও মানববন্ধন করেছে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। তারা সমাবেশ করারও হুমকি দিয়ে রেখেছে।</p> <p>এরই মধ্যে গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা রহস্যজনক। আগুনে পুড়ে ছাই হয় চার-পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ। তবে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বছরই। চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রদান প্রতিবছর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই আজ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল।</p> <p> </p> <p> </p>