ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
চট্টগ্রাম

বাজারে চাহিদা মেটাচ্ছে অসময়ের আম

আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম
আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম
শেয়ার
বাজারে চাহিদা মেটাচ্ছে অসময়ের আম

এবার বাজিমাত করছে অসময়ের আম ‘কাটিমন’। গত তিনবছর আগেও এই সময়ে দেশিয় আম পাওয়া যেত না। আমের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সময়ে থাইল্যান্ড, মিশর, ভারতসহ বেশ কিছু দেশের আম আমদানি হত। কিন্তু অসম্ভব চড়া দাম কেজি ৭০০-৯০০ টাকা বলে খুব বেশি বিক্রি হত না।

চাহিদা মিটতো কেবল উচ্চবিত্ত গ্রাহকদের।

কিন্তু এই বছর থেকেই ব্যাপক আকারে উৎপাদিত হয়েছে অসময়ের আম। এরমধ্যে কাটিমন, গৌড়মতি (বারি ১২), বারি-১১, আশ্বিনীসহ বেশ কিছু আম অন্যতম। এখন সেগুলোই বাজারে ভালোই চাহিদা মেটাচ্ছে।

আড়তের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে এই সব আম।

চট্টগ্রামের ফলমন্ডি আড়তে কাটিমন আম গতকাল সোমবার বিক্রি হয়েছে কেজি ১৯০ থেকে ২২০ টাকায়। তবে আকার যদি বড় হয় তাহলে দাম আরো বেশি কেজি ২৫০ টাকায়। আর আড়তে গৌড়মতি বিক্রি হয়েছে ২শ টাকায়।

খুচরা বাজারে অবশ্য গতকাল কাটিমন আম বিক্রি হয়েছে কেজি ৩৫০ টাকা। অনলাইনে বিভিন্ন সাইটেও বিক্রি হচ্ছে কাটিমন প্রিমিয়ার জাতের আম কেজি ৩০০ টাকায়। 

দুই কারণে এই আম বিক্রি বেড়েছে। একটি হচ্ছে, অসময়ে একেবারে তরতাজা আম পাওয়া। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এখন বিদেশি ফল চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে।

এরচেয়ে আমের দাম কম। ফলে সবাই বেশি দাম হলেও আম কেনায় ঝুঁকছে।

চট্টগ্রামের ফলমন্ডি আড়তদার নাসির উদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশির ভাগ আম আসছে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কানসাট থেকে। আমাদের আমের মৌসুমের সর্বশেষ আম ছিল আশ্বিণী। এরপর আগস্ট থেকে আসা শুরু হয়েছে কাটিমন, গৌড়মতি ও বারমাসি আশ্বিনী আম। কৃষকরা বলছেন, পরিমাণে কমলেও আগামী নভেম্বর পর্যন্ত এবার এই আম বাজারে থাকবে। তবে এখন কাটিমনই বাজার দখল করেছে।’

তিনি বলেন, আমার আড়তে কাটিমন আম বিক্রি হচ্ছে পাইকারি কেজি ১৯০ থেকে ২২০ টাকায়। ফলমন্ডি আড়তে প্রতিদিন দেড় হাজার কেজি কাটিমন আম আসছে, যা রেকর্ড। এবার আমের আবাদ ও উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারেও বেশি পরিমাণ আম আসছে। গতবছরও এর অর্ধেক আম মেলেনি।

প্রতিবছর এই মৌসুমে দেশি আম না থাকায় বিদেশি থাইল্যান্ড, মিশর ও ভারত থেকে আম আমদানি হত। কিন্তু ঋণপত্র সংকট, ডলার সংকট, ডলারের বিনিময় মূল্য বেশি থাকায় এবার সেই আম আমদানি করতে দ্বিগুণ খরচ পড়বে। অর্থাৎ আমের কেজি ১ হাজার টাকার বেশি হবে। সে হিসাবে দেশি আম অনেক কম দামে মিলছে।

চট্টগ্রাম ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মৌসুমে এই আম ৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়নি। কিন্তু অফসিজন বলে বিক্রিতে ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা। দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকরাও উৎসাহিত হবে। আমরাও চাই ধারাবাহিকভাবে আমরা ফল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই, দেশের টাকা দেশেই থাকুক।’

অসময়ের দেশি আম বিক্রির আরেকটি কারণ হচ্ছে, এবার বিদেশি মাল্টা ও কমলা কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত চড়া দামে মাল্টা, কমলার চেয়ে দেশি আম ৩৫০ টাকায় কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন ক্রেতারা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন বাড়াতে সরকার বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে বারমাসি জাতের আম অন্যতম।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম হারুনুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগের সুফল বিচক্ষণ কৃষকরা লুফে নিয়েছেন। বিপুল আবাদ করেছেন। এখন সুফল আমরা পাচ্ছি। আগামী বছর ফলন আরো বেশি পাবেন। অর্থাৎ বছরজুড়েই আমরা আম পাব।’ তিনি বলেন, বারি ১১ জাতের আম বছরে তিন বার ফলন দিচ্ছে। এর ফলন আগস্টে একবার শেষ, সেপ্টেম্বরে ফুল আসার পর আবার ফলন দেবে ফেব্রুয়ারিতে। সেই সময়ে কিন্তু দেশে কোনো আম থাকবে না। আর কাটিমন আম একটি বাণিজ্যিক জাত; যার ফলন এখন বাজারে আসছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ