ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোর ট্র্যাজেডির এক বছর

৮ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
শেয়ার
৮ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি
বিস্ফোরণের পর বিএম ডিপো। ফাইল ছবি

চার জুন ২০২২ দিনটির কথা মনে পড়লেই সীতাকুণ্ডের সলিমপুরের গৃহবধূ রহিমা আক্তার এখনো ডুকরে কেঁদে উঠেন। তাঁর জীবনে এক অভিশপ্ত দিন ছিল এটি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বিএম ডিপোতে সেদিন ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিহত হন রহিমার স্বামী মনির হোসেন (৩০)। মনির যখন মারা যান তখন রহিমা ছিলেন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

সেই অবস্থাতেই বাবার বাড়িতে চলে যান তিনি। পরে সেখানেই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এখন পিতৃহীন সন্তানকে কি করে মানুষ করবেন সেই চিন্তায় দিশাহারা রহিমা পাননি কোনো ক্ষতিপূরণ! স্বামী ও সন্তানের কথা ভেবে এখন প্রতিদিন কেঁদে চলেছেন তিনি।

এদিকে শুধু রহিমা নন, বিএম ডিপোর সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর একটি বছর পার হলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বহু পরিবার।

বিস্ফোরণে আহত উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে এ ডিপোতে ডেস্ক সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। ডিপো কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেয়। সেই সময় যথাযথ চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। এ রকম ক্ষতিপূরণের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে ধর্না ও অভিযোগ দেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যেন উদাসীন। ফলে হতাহতদের পরিবারে এখনো ক্ষোভ, হতাশা বিরাজ করছে।

এদিকে বিএম ডিপোর এ দুর্ঘটনার এক বছর অতিক্রম করলেও এখনো আতঙ্কিত ওই এলাকার মানুষসহ সংশ্লিষ্টরা।

সোনাইছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুনীর হোসেন বলেন, সোনাইছড়ি কেন সীতাকুণ্ডে এর আগে একসঙ্গে এত প্রাণহানি ঘটেনি। এত ক্ষতিও আর হয়নি। মানুষ এখনো আতঙ্কিত। বহু বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ পায়নি। কানে কম শোনা থেকে শুরু করে নানামুখী মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকে।

অন্যদিকে সে ঘটনায় হতভাগ্য হয়ে সারাজীবনের জন্য হতাশায় ডুবেছে বহু পরিবার। বিশেষ করে দুর্ঘটনার এক বছর পরও পরিচয় না মেলায় অজ্ঞাত হিসেবে দাফন হওয়া হতভাগ্য ৮ ব্যক্তির কথা এখনো সবার মুখে মুখে।

নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমেদ জানান, তদন্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁরা মর্গে পড়ে থাকা আটটি মরদেহের পরিচয় শনাক্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান। শেষ পর্যন্ত কোনো স্বজন যোগাযোগ না করায় দাবিদারবিহীন মরদেহগুলো আদালতের অনুমতিক্রমে চলতি বছরে ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর বাইশ মহল্লা মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

অন্যদিকে স্বজনদের আহাজারি না থামলেও বছর ঘোরার আগেই স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে সেই বিএম ডিপো। ইতোমধ্যে তদন্তে বিএম ডিপোর কোনো গাফিলতি ছিল না বলেই জানিয়েছে পুলিশের একটি তদন্ত টিম। অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য দলগুলো বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতির কথা উল্লেখ করেছে। সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুর আলম দুলাল বলেন, সে ঘটনায় আমাদের ১৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাসহ ৫০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া নির্দেশনা বিএম কন্টেইনার ডিপো ৪০ শতাংশ সম্পন্ন করলেও এখনো তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ