চট্টগ্রামে বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জেলা কমান্ডার এরশাদ হোসাইনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা এই রায় ঘোষণা করেন। আট বছর আগে বিস্ফোরক আইনে এই মামলা হয়েছিল।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন-গাইবান্ধা জেলার তুলশীপাড়ার আক্তার হোসেন সরকারের ছেলে বুলবুল আহমেদ সরকার ওরফে ফুয়াদ; ঝিনাইদহ জেলার কোট চাঁদপুরের মমিনুল ইসলামের ছেলে মো. সুজন এবং চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকার আব্দুল গণির ছেলে মাহাবুবুর রহমান ওরফে খোকন।
আর ২০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি কমান্ডার এরশাদ হোসাইন ওরফে মামুন দিনাজপুর জেলার সরকারপাড়া গ্রামের মো. রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। পুলিশ জানান, এরশাদ জেএমবি চট্টগ্রাম জেলার কমান্ডার ছিলেন।
গতকাল রায় ঘোষণার সময় সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণে বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা বলেন, অভিযোগ ছিল একজনের বিরুদ্ধে যে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হয়।
জেএমবি সদস্যদের অবস্থানের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। বোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। আসামি এরশাদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ধৃত আসামির জবানবন্দি সত্য ও স্বেচ্ছায় বলে প্রমাণিত। জবানবন্দি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিস্ফোরক আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং যেহেতু জেএমবি নিষিদ্ধ ও জনজীবনের জন্য হুমকি, তাই তাকে ২০ বছর সশ্রম এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১ বছরের সাজা দেওয়া হল।
অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাদের কাছ থেকে কোনো বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি এবং ঘটনাস্থলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাই বুলবুল, মাহবু্ব ও সুজনকে বেকসুর খালাস দেওয়ার কথা জানান আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. নোমান চৌধুরী জানান, ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার মীর আউলিয়ার মাজার সড়কের এনআর স্টিল মিলসংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ।
ওই বাসা থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বইসহ এরশাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় অন্য আসামিরা পালিয়ে যান। এই ঘটনায় আকবরশাহ থানায় এসআই শহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০১৫ সালের শেষের দিকে নগরের কর্ণফুলী থানায় এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বুলবুলসহ অন্য তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আকবরশাহ থানার এই বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আকবরশাহ থানার এসআই মোহাম্মদ সোলায়মান ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল চারজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে আদালত তাদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।
তিন আসামি খালাস পেলেও আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি নোমান চৌধুরী। রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যাঁর কাছ থেকে বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। খালাস পাওয়া তিন আসামির বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা আছে। সেই মামলাগুলোতে তাদের সাজা হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।