ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১০ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত কুমিরা খাল

  • সীতাকুণ্ড
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
শেয়ার
কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত কুমিরা খাল
সীতাকুণ্ডের কুমিরা খালে কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল পড়ে পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিল্প কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে কুমিরা খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এতে একদিকে ওই খালের ওপর নির্ভর কৃষির চরম সর্বনাশ হচ্ছে আর অন্যদিকে পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গ্রামবাসী।

গত বৃহস্পতিবার কুমিরা বাজারে অবস্থিত কর্ণফুলী স্টিল মিলস নামক একটি কারখানার লাইন লিক হয়ে মাত্রাতিরিক্ত কার্বলিক এসিড ও রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে খালের পানির রঙ পুরোপুরি বদলে যায়। শুধু তাই নয়, এসব কেমিক্যালের বিষাক্ত ঝাঁজালো দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এলাকার বহু মানুষ।

যা আতংকিত করে তুলেছে স্থানীয়দের। এ বিষয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের বড় কুমিরায় পাহাড় থেকে সৃষ্ট প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই খালের দুই পাশে রয়েছে কয়েকটি গ্রাম এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি।

দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কৃষকরা এই খালের পানি ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছেন। অন্যদিকে খালের উভয় পাশের বাসিন্দারাও খালের পানি ব্যবহার করছেন গৃহস্থালির নানান কাজে। কিন্তু খালের পাশে বিগত তিন দশকে একাধিক শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ায় খালটিতে কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে প্রায়ই। ফলে এর পানি ক্রমশ ভয়াবহ দূষিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে বড় কুমিরা এলাকায় মহাসড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায়, খালটির পুরো পানি এখন গাঢ় হলদে-লাল বর্ণ ধারণ করেছে। খালের পাড়ে দাঁড়ালেই ঝাঁজালো দুর্গন্ধ নাকে আসায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম, আবুল খায়ের, নাজিম উদ্দিন জানান, কর্ণফুলী স্টিল মিলস নামক একটি কারখানার লাইন লিক হয়ে বেশ কিছু কার্বলিক এসিড ও রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে খালে। এতে খালটির পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। আমরা নিঃশ্বাস নিতেও পারছিলাম না।

মনে হচ্ছিল শ্বাস নিলেই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাবে। এলাকার বহু মানুষ চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেন।

স্থানীয় কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কুমিরা খালের অবস্থা খুবই করুণ। স্থানীয় কর্ণফুলী স্টিল মিলসের এসিড ফেলা হচ্ছে খালে। আরো কয়েকটি কারখানার বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না পানি। নষ্ট হচ্ছে সমুদ্রের মাছ, মানুষ ব্যবহারের পানি পাচ্ছে না। অথচ তাদের একমাত্র ভরসা খালের এই পানি মিলের কেমিক্যাল ছেড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা কেউ এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে কর্ণফুলী স্টিল মিলে লাইন লিক হওয়ার তদন্তে গিয়েছিলেন কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ফিরোজ ভূঁইয়াসহ অন্যান্যরা। ফিরোজ ভূঁইয়া বলেন, কর্ণফুলী স্টিল মিলের একটি পাইপ ফেটে যায়। এতে কেমিক্যালগুলো প্রতিষ্ঠানটিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা পুরাতন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও খালে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কেমিক্যালের ঝাঁজালো গন্ধে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেমিক্যালে পর্যাপ্ত পানি ঢালার পর গন্ধ কমে যায়।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপক গৌতম নাথ গতকাল রাতে কালের কণ্ঠের কাছে দূষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘খালের পাশে অনেক কারখানা আছে। কিন্তু আমাদেরটার কারণেই খালে দূষণ হয়েছে এটা ঠিক না।’ তবে লিকেজের ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কারখানায় একটি লাইনে সামান্য লিকেজ হয়ে কিছু এসিড নির্গত হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এসে তা পরিষ্কার করেছে। এই এসিড খালে যায়নি।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখব এই খালে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিষাক্ত কেমিক্যাল ফেলছে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ